নিজস্ব প্রতিবেদক: মাদকাসক্ত ও একাধিক পুরুষের সাথে সম্পর্ক করার কারণে সুমাইয়া আক্তারকে খুন করার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে তার প্রেমিক আলামিন বাপ্পি। সোমবার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার দালাল জবানবন্দি শেষে তাকে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন। এই হত্যাকাণ্ডে নিহতের প্রেমিক বাপ্পিসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
ঝিকরগাছার সুমাইয়া আক্তার হত্যাকা-ে তার প্রেমিক আলামিন বাপ্পিসহ তিনজনকে আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এসময় হত্যাকা-ে ব্যবহৃত চাকু ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। সোমবার ভোরে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে তাদের আটকের পর যশোর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
আটক আলামিন বাপ্পি ঝিকরগাছা উপজেলার কাউরিয়া গ্রামের চৌধুরীপাড়ার আলাউদ্দিনের ছেলে। এছাড়া অপর আটক জুয়েল মণিরামপুর উপজেলার মুক্তারপুর গ্রামের মৃত আবু বক্কারের ছেলে।
বাপ্পি পুলিশকে জানিয়েছে, সুমাইয়া আক্তার শার্শা উপজেলার বুরুজবাগান গ্রামের রেজাউল ইসলামের মেয়ে এবং লক্ষণপুর গ্রামের আইয়ুব হোসেনের স্ত্রী। ২০১২ সাল থেকে সুমাইয়ার সাথে বাপ্পির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ২০১৫ সালে সুমাইয়া আক্তারের লক্ষণপুর গ্রামের আইয়ুব হোসেনের সাথে বিয়ে হয়। সংসার করাকালে একটি ছেলের জন্ম হয়। ২০১৮ সালে বাপ্পি দেশে ফিরে আসে। যে কোন কায়দায় সুমাইয়ার মোবাইল ফোন নম্বর যোগাড় করে বাপ্পি। আবার তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক বছর আগে সুমাইয়াকে বের করে নিয়ে যায় বাপ্পি। স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করে সুমাইয়া আবারো স্বামী আইয়ুব হোসেনের কাছে ফেরে যায়। কিছুদিন পর আবারো স্বামীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে আসে সুমাইয়া। তারা দুইজনে যশোর শহরের বাসা ভাড়া করে বসবাস শুরু করে। সুমাইয়া এবং বাপ্পি একই সাথে মাদক সেবন করে। সূত্র মতে, সুমাইয়া অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্ক করে। একাধিকবার নিষেধ করেও সুমাইয়াকে ফেরাতে পারেনি বাপ্পি। ফলে তাকে খুন করার জন্য পরিকল্পনা করে বাপ্পি। গত ২৪ মার্চ সুমাইয়াকে নিয়ে বেনাপোলের পুটখালি থেকে ফেনসিডিল সেবন করে রাত ১০টার দিকে ফিরে আসে। ওই রাতে ঝিকরগাছার চাপাতলঅ ঝিনুকদাহ মাঠের মধ্যে নিয়ে হাত-পায়ের রগ কেটে এবং গলা কেটে সুমাইয়াকে হত্যা করে বাপ্পি। এরপরে বাড়িতে গিয়ে গায়ে রক্তমাখা কাপড় বাপ্পির মা আঞ্জুয়ারা পুড়িয়ে ফেলে। পাশাপাশি বাপ্পির ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি তার চাচা জুয়েল লুকিয়ে রাখে। এই ঘটনায় সুমাইয়ার বাবা রেজাইউল ইসলাম ঝিকরগাছা থানায় হত্যা মামলা করেন। পুলিশ প্রথমে বাপ্পির মা আঞ্জুয়ারা বেগমকে গত ১ এপ্রিল আটক করে। আঞ্জুয়ারা এই ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আটক জুয়েলের বাড়ি থেকে বাপ্পির মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে। কিন্তু এরই মধ্যে বাপ্পি পালিয়ে ভারতে চলে যায়। এর মধ্যে ভারত থেকে দেশে ফিরে আসলে গতকাল সোমবার ভোরে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে বাপ্পিকে আটক করে। বাপ্পির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত চাকুটি উদ্ধার করে পুলিশ।