বিশ্বের সবচেয়ে বায়ুদূষিত দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। সম্প্রতি প্রকাশিত বায়ুদূষণ ও বায়ু পরিশোধন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা সুইস সংস্থা আইকিউ এয়ারের রিপোর্টে দূষিতের তালিকায় প্রথমেই নাম এসেছে বাংলাদেশের।২৩ মার্চ গণমাধ্যমে এ রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছে ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইটভাটা, শিল্প কারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির কালো ধোঁয়া, বস্তির কয়েক লাখ চুলার আবর্জনা, কাঠ-কয়লা ও কেরোসিন দিয়ে রান্নার ধোঁয়া, ঢাকার বাইরে থেকে আসা হাজার হাজার ট্রাক ও দূরপাল্লার যানবাহনের ধুলা ও ধোঁয়া এবং রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণকাজের ধুলার পাশাপাশি আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণের জন্য এখানকার বায়ু দূষিত হয়ে থাকে। আইকিউএয়ারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে বিশ্বের ১১৭টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে দূষিত বায়ু ছিল বাংলাদেশের। বিশ্বের ৬ হাজার ৪৭৫টি শহরের বায়ুমানের তথ্য বিশ্লেষণ করে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০২১ সালে একটি দেশও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রত্যাশিত বায়ুমান বজায় রাখতে পারেনি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আর প্রায় ১০০টি শহরে পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ২ দশমিক ৫-এর মাত্রা ছিল ওই গ্রহণযোগ্য মাত্রার ১০ গুণ বেশি। বাংলাদেশের বাতাসে পিএম ২ দশমিক ৫-এর গড় পরিমাণ ছিল ৭৬ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম, সমীক্ষার আওতাধীন ১১৭টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। এই হিসাব অনুযায়ী, গত বছর বিশ্বে বাংলাদেশের বাতাস ছিল সবচেয়ে দূষিত।
পরিবেশ অধিদফতরের নির্মল বায়ু ও টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পের বাতাসের মান পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রাজধানীর বায়ু ২০১৪ সালে ১৬৫ দিন বিপজ্জনক ছিল। ২০১৫ সালে দূষণের মাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭৮ দিনে। পর্যায়ক্রমে ২০১৬ সালে ১৯২ দিন, ২০১৭ সালে ২১২ দিন, ২০১৮ সালে ২৩৬ দিন, ২০১৯ সালে ২৮৩ দিন ঢাকার বায়ু দূষিত ছিল, যার ধারাবাহিকতায় ২০২০ ও ২০২১ সালে বায়ুদূষণের তালিকায় প্রথম বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা।
দেশে বায়ু দূষণের কারণে বছরে ২ লাখ মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শব্দ দূষণের প্রভাবে বিষন্নতায় আক্রান্ত হচ্ছে ৭০ ভাগ মানুষ। দেশে দূষণ দু-একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ নেই। বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, পানি দূষণ প্রভৃতি দূষণে পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। মানুষের জীবনের জন্য হুমকি সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর বায়ু দূষণের মাত্রা গত ১০ বছরে বেড়েছে ৮৬ শতাংশ। জনঘনত্বের হিসাবে পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত বায়ুর দেশ বাংলাদেশ।
দূষণ সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়তো সম্ভব হবে না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উন্নত অনেক দেশেও দূষণ হয়। তবে সেসব দেশ দূষণকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে কেন সেটা একটা প্রশ্ন। কর্তৃপক্ষের গাফিলতি, আইন না মানা, অসচেতনতা প্রভৃতি কারণে দূষণ মাত্রা ছাড়িয়েছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে। দূষণ বিরোধী অভিযানে সব শ্রেণির মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। তা না হলে টেকসইভাবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বায়ু, পানি, মাটি, শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বর্তমান প্রজন্মের পাশাপাশি আগামী প্রজন্মকেও চরম মূল্য দিতে হবে।