নিজস্ব প্রতিবেদক
মা ও ভাইকে বাড়ি থেকে বের করে বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে জমি লিখে নেয়ার চেষ্টায় করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল যশোরের চৌগাছার লন্ডন ফেরত ব্যারিস্টার একে এম মুর্তজা রাসেলের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে গত ১২ মার্চ মুর্তজার বিরুদ্ধে যশোর আদালতে মামলা করেন তারই ছোট ভাই আল ইমরান। সেই মামলা প্রত্যাহারে আইনজীবীকে চাপ দেন। বাদীর অনুপস্থিতিতে আইনজীবীকে আপোষনামায় স্বাক্ষর করতে বলেন। কিন্তু আইনজীবী কাজী ফরিদুল ইসলাম আপোষনামাতে সাক্ষর করতে রাজি হননি। একপর্যায়ে আইনজীবী কাজী ফরিদুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার রাসেলের সমর্থকদের মধ্যে মারামারি, ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন। সোমবার দুপুরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত যশোর চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যারিস্টার একে এম মুর্তজা রাসেল চৌগাছা উপজেলার মাকাপুর গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে।
সূত্র মতে, রাসেলের বিরুদ্ধে তার আপন ভাই ও মা পৃথক দুটি মামলা করেন। যার আইনজীবী কাজী ফরিদুল ইসলাম। সোমবার দুপুরে হঠাৎ রাসেল নিজে ও তার সঙ্গে ১০/১২ জনকে নিয়ে আইনজীবী ফরিদুলের কাছে যান। এ সময় রাসেল মামলা তুলে নিতে নির্দেশ দেন। এমনকি রাসেল ইচ্ছে মত ওকালতনামা লিখে এনে সেখানে সই করাতে ভয়ভীতি দেখান। সই না করায় ফরিদুলকে চাপ দেন রাসেল। বিষয়টি আদালতে থাকা আইনজীবী ও সংশ্লিষ্টদের নজরে আসলে তারা প্রতিবাদ করে। এতে করে রাসেলও তার সাথে সঙ্গে থাকা লোকজন রুখে উঠে। এসময় দু’পক্ষের ধাওয়াতে একটি গাড়িও ভাংচুর করা হয়। উভয় পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় আদালত চত্বরে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন। একই সঙ্গে ব্যারিস্টার একেএম গোলাম মোর্ত্তজা ও তার সহযোগীদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান দুই পক্ষের অভিযোগ শোনেন। পরে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু মোর্ত্তজা ছোট ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহানুর আলম শাহীন থানায় যেয়ে ঘটনা শুনে মীমাংসার আশ্বাস দিয়ে আসেন থানা কর্তৃপক্ষেকে।
আদালত চত্বরে অ্যাডভোকেট কাজী ফরিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বাদীর অনুপস্থিতিতে মামলার প্রত্যাহারপত্রে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। এতে তিনি রাজি হননি। তখন আমাকে হুমকি দেয়। আমি ইংল্যান্ডের ব্যারিস্টার, আপনাকে দেখে নিবো। তখন আমি বলি আপনার কথায় স্বাক্ষর করবো না। তখন বলে আমার মা আপনাকে বলেছে, আপনি এখানে স্বাক্ষর করেন। আমি বলি না ওখানে স্বাক্ষর করবো না। কারণ ওই ড্রাফটা আমার না। আমি না পড়ে স্বাক্ষর করবো না। এরপর সে ১০ থেকে ১২ জন লোক নিয়ে এসে ঘিরে ধরে ভিডিও শুরু করে। তখন আমি বলি সরো আমি যাবো। তখন জুনিয়ররা (আইনজীবী) এসে ওদের বলে সিনিয়রের সঙ্গে বেয়াদবি করছো কেন। তখন ওরা বলে কিসের সিনিয়র, এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি। এরপর পুলিশ চলে আসে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ব্যারিস্টার একেএম মোর্ত্তজা বলেন, আমার মায়ের একটি মামলার আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম। মাকে নিয়ে তার কাছে গিয়েছিলাম। মামলা প্রত্যাহারের কাগজে বাদী ও আইনজীবীর স্বাক্ষর দরকার হয়। তাকে স্বাক্ষর করতে বলা হলে তিনি করেননি। উল্টো হুমকি ধামকি দেন। এক পর্যায়ে ফোন করে লোকজন ডেকে এনে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। আমার গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। এ বিষয়ে কোন পক্ষই অভিযোগ দেয়নি। জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু মোর্তজা বলেন, বিষয়টি দুঃজনক ও অনাকাঙ্খিত। গতকাল বিকেলে সমিতির কার্যালয়ে উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। এ সময় কাজী ফরিদুল ইসলাম ও ব্যরিস্টার মর্তুজার বক্তব্য শুনে তিনি উভয়ের ভুলবুঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে সমঝোতা করে দেন। এতে উভয় পক্ষ সন্তষ্ট হয়েছে তিনি জানান।