শাহারুল ইসলাম ফারদিন
যশোরে মানুষের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানবাহন। প্রতিদিনই বাড়ছে গাড়ি। অথচ শহরের মার্কেটগুলোতে নেই পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। তাই কাজে আসা লোকজন মার্কেটের সামনে রাস্তার ওপর মোটরসাইকেল, ইজিবাইক কিংবা প্রাইভেটকার রেখে কাজ সেরে নিচ্ছেন। এতে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের এমকে রোড, মুজিব সড়ক, জেল রোড, ঘোপ সেন্ট্রাল রোড, ঘোপ নওয়াপাড়া রোড, হাসপাতাল মোড়সহ বিভিন্ন মার্কেটের সামনে রাস্তার ওপর প্রাইভেটকার, ইজিবাইক, অটোরিকশা অ্যাম্বুলেন্স ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন কোম্পানির গাড়ি যত্রতত্র পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। বিশেষ করে হাসপাতালের সামনে প্রায় ২৫-৩০টি বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক রয়েছে। যার একটিরও নেই পার্কিং ব্যবস্থা। প্রতিদিন শতশত রোগী ও স্বজনরা দূর-দূরান্ত থেকে রিকশা, ইজিবাইক, প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্সসহ নানান যানবাহনে আসা যাওয়া করেন। এছাড়াও হাসপাতালের চিকিৎসকরা চলাচল করেন নিজস্ব গাড়িতে। সেগুলোও রাস্তা ঘেঁষে পার্কিং করা হয়। শুধু রাস্তা নয়, ফুটপাতজুড়েও পার্কিং করে রাখা হচ্ছে শতশত মোটরসাইকেল। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো, সড়কটির যেসব স্থানে নো পার্কিং কিংবা পার্কিং নিষেধ সাইনবোর্ড লেখা রয়েছে সেসব স্থানেই আরও বেশি করে যানবাহন রাখা হচ্ছে। এতে করে পথচারী ও যানবাহন চলাচল বাধার মুখে পড়ছে। অনেক সময় ঘটছে দুর্ঘটনা।
শহরের দড়াটানায় কথা হয় বাবলতলার বাসিন্দা পথচারী বয়বৃদ্ধ মোহাম্মদ আলীর সাথে। তিনি বলেন, হাসপাতাল চত্বর থেকে ঘোপ নওয়াপাড়া রোড এলাকায় যতগুলো হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠান আছে এদের একটির নেই পার্কিং ব্যবস্থা। রাস্তার উপর বেশির ভাগ সময় অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন যানবাহন রাখা হয়। এতে যানজট সৃষ্টি হয়। অনেকদিন এই রোড দিয়ে যেতে যানজটে আটকা পড়ে থাকতে হয়। এমন অভিযোগ শুধু মোহাম্মদ আলীর না; শহরের কাজী পাড়ার ব্যবসায়ী তোফাজ্জেল হোসেন, মিশন পাড়ার সমাজসেবক ইনামুল হক, পোস্ট অফিস পাড়ার স্কুল শিক্ষক ফারহানা মিতু জামানসহ শহরবাসীর। তারা বলেন, শহরের দড়াটানা থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত যশোরের প্রাণকেন্দ্র বলা হয়। দুঃখের বিষয় এ প্রাণ কেন্দ্রে যতগুলো মার্কেট, শপিং কমপ্লেক্স ও বড়বড় ভবনসহ অফিস রয়েছে তাদের বেশিরভাগেরই নিজস্ব পার্কিং নেই। যে কারণে রাস্তার ওপরেই গাড়ি পার্ক করে রাখতে বাধ্য হয় অনেকে। এতে যানজট লেগেই থাকে। প্রশাসন মাঝে মধ্যে রাস্তায় অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য জরিমানা করেন। কিন্তু এটা স্থায়ী কোন সমাধান না।
শহরের আরএস টাওয়ার, কুইন্স হাসপাতাল, সিটিপ্লাজা শপিং কমপ্লেক্সে, জেস টাওয়ার, হোটেল হাসান, ইবনে সিনাসহ কিছু প্রতিষ্ঠানে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে। এর মধ্যে কিছুকিছু পার্কিংয়ে গাড়ি রাখতে গুণতে হয় টাকা। বাকিগুলিতে শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মরতদের গাড়ি রাখা যায়। যে কারণে ভবনের সামনের রাস্তায় গাড়ি রেখে কাজ সারতে হয় অন্যদের।
জানতে চাইলে আর এস টাওয়ারের সত্ত্বাধিকারী আব্দুস সামাদ বলেন, শহরের এমকে রোডে একমাত্র আমাদের পার্কিং ব্যবস্থা আছে। তবে সামনে ও আশেপাশের কোন ভবনে পার্কিং ব্যবস্থা নেই। তাই রাস্তার উপর গাড়ি পার্কিং করে রাখতে দেখা যায়। এতে করে এ রোডে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। অনেক সময় আমাদের নিরাপত্তা প্রহরী গাড়ি সরিয়ে নিতে বললে বাকবিতণ্ডা হয়।
কুইন্স হাসপাতালের পরিচালক হুমায়ন কবির কবু বলেন, আমাদের পার্কিং ব্যবস্থা আছে। হাসপাতালের সামনে নো পার্কিং লেখা আছে তারপরেও রাস্তার ওপরে গাড়ি রেখে চলে যান অনেকেই। তিনি আরোও বলেন, হাসপাতালের পশ্চিম অংশে বড় পরিসরে কুইন্স পার্কিং জোন করা হয়েছে। সামান্য অর্থের বিনিময়ে যে কেউ এখানে নিশ্চিন্তে গাড়ি রাখতে পারছে। তবে সচেতনতার অভাবে গাড়ির চালকরা এখনো রাস্তার ওপর গাড়ি রাখছেন। এতে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
যশোর ট্রাফিক পরিদর্শক শুভেন্দু কুমার মুন্সি বলেন, ফুটপাত হকারমুক্ত রাখতে পৌরসভা ও ট্রফিক বিভাগ যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ট্রাফিক বিভাগ নিয়মিত অভিযান চালায়। অবৈধ পার্কিংকারীদের বিরুদ্ধেও আমরা অভিযান পরিচালনা করি। তিনি আরও বলেন, শুধু গাড়িচালকদের দোষ নয়, এখানে বহুতল ভবন মালিক ও মার্কেটগুলোরও দোষ রয়েছে। তারা গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখেনি। এ জন্য অনেকে গাড়ি রাস্তায় পার্কিং করতে বাধ্য হয়।
যশোর পৌরসভার মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার গনি খান পলাশ বলেন, যশোর পৌরসভা ও প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে মাঝে মধ্যেই অভিযান পরিচালনা করা হয়। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করায় জরিমানাসহ রেকার দিয়ে গাড়ি ডাম্পিং করা হয়। আবার বড়বড় ভবনের মালিকদের বারবার সতর্ক করা হলেও তারা তা মানছে না। এবিষয়ে প্রশাসনের আরো কঠোর অবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তিনি।