এম আর মাসুদ, ঝিকরগাছা
আদালতের রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে অবাধে তিন চাকার অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে। এতে বেনাপোল বন্দর ছেড়ে আসা প্রায় ৫০০ ট্রাক প্রতিদিনি এ সড়কে যাতায়াত করে। এর বাইরে ভারত ও ঢাকার অর্ধশতাধিক পরিবহন প্রতিদিন যাতায়াত করে। তিন চাকার গাড়ি চলাচলে এসব ট্রাক ও পরিবহন চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, হাইওয়ে পুলিশকে মাসিক মাসোয়ারা দিয়ে চলছে এসব ইঞ্জিনচালিত থ্রি-হুইলার ও ব্যাটারিচালিত ভ্যান-ইজিবাইক।
রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ঝিকরগাছা-লাউজানী, নাভারণ সাতক্ষীরা মোড়-ঝিকরগাছা, নাভারণ (কাঁচাবাজার)-গদখালী, গদখালী-ঝিকরগাছা ও বেনেয়ালী-ঝিকরগাছা স্ট্যান্ড থেকে প্রায় ৫০০টির মতো অবৈধ তিন চাকার যান চলাচল করছে।
তিন চাকার অবৈধ যানবাহনের কয়েকজন চালক জানান, অবৈধ এসব যান চলাচলে নাভারণ হাইওয়ে পুলিশ থ্রি-হুইলার প্রতি মাসে ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করছে। আলমসাধু, নসিমন, করিমন ও ভটভটি চালককেও এককালীন দুই হাজারের উপরে টাকা দিতে হচ্ছে।
দিন পরিবর্তনের সাথে সাথে পাল্টেছে চাঁদাবাজির ধরণ। এক সময় যানবাহনের সামনের গ্লাসে স্টিকার মেরে চলতো চাঁদাবাজি। বর্তমানে বিভিন্ন ছদ্মনাম (মামা-ভাগ্নে জুয়েলার্স) ব্যবহৃত টোকেনের উল্টোপাশে একমাসের দিন-তারিখ ও স্বাক্ষর দিয়ে এসব চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। মাস পরিবর্তের সাথে সাথে পরিবর্তন হয় এসব ছদ্মনামও। আবার এককালীন টাকা দেওয়া ব্যক্তির ফোন কল নিশ্চিত করলেই তার আন্ডারে থাকা যান ছেড়ে দিচ্ছে পুলিশ। সাংবাদিক পরিচয়ধারী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের সমন্বয়ে চাঁদাবাজি রমরমায় রূপ নিয়েছে।
ইজিবাইক চালক অলোক কুমার (ছদ্মনাম) বলেন, পুলিশকে টোকেনের জন্য প্রতি মাসে ১২শ টাকা করে দিতে হয়। তবে টোকেন না দিলেও পুলিশের খাতায় আমাদের নাম আছে বিধায় ইজিবাইক আটক করে না।
আবুল খায়ের নামে অপর এক ইজিবাইক চালক বলেন, যশোর চাঁচড়া থেকে বেনাপোল পর্যন্ত মহাসড়ক থেকে ইজিবাইক আটক করবে না শর্তে জলিল, মানিক ও মহাসিনের মাধ্যমে আমরা পুলিশকে প্রতি মাসে ১ হাজার করে টাকা দিচ্ছি। প্রতিমাসের ১-৫ তারিখের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ইজিবাইক চালক জানান, আমরা ৯০০ করে টাকা দিচ্ছি টোকেন নিচ্ছি। টোকেনে ৩০ দিন মেয়াদ থাকে। বিদ্যুৎ বিল ও বিভিন্ন চাঁদার পাশাপাশি পুলিশকে এত বেশি টাকা দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।
নাভারণ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ-আল মামুন বলেন, নাভারণ হাইওয়ে পুলিশ টোকেন দিচ্ছে এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন। স্থানীয়দের সুপারিশে হয়তো কিছু থ্রি-হুইলারকে ছাড় দেওয়া হয়, তবে মামলা চলমান আছে।
যশোর হাইওয়ে সার্কেলের (মাদারীপুর রিজিউন) সহকারী পুলিশ সুপার আলী আহমেদ হাশমী বলেন, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। চাঁদাবাজির বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।