এমআর মাসুদ, ঝিকরগাছা
সবুজ রঙের চাকচিক্য বাড়িটির নাম রাখা হয়েছে মা বাবার দোয়া। অথচ ওই বাড়িতেই স্থান হয়নি সেই মা-বাবার। প্রায় তিন বছর তারা মেয়ে-জামাতার বাড়িতে থেকে শেষমেষ গ্রামের মসজিদে ঠাঁই নিয়েছিলেন। একপর্যায়ে রোববার সন্ধ্যায় উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ওই বাবা-মাকে বাড়িতে তুলে দেন। ঘটনাটি ঘটেছে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামে।
সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, নিশ্চিন্তপুর গ্রামের জামে মসজিদের ভেতর অচল শরীর নিয়ে শুয়ে আছেন আব্দুল জলিল (৭০)। পাশে বসে থাকা স্ত্রী রোজিনা বেগমও (৬০) চলাচলে অক্ষম। আব্দুল জলিল অনুযোগ করে বলেন, সাংসারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কারণে-অকারণে ছেলে নাসির উদ্দীন তাকে ও তার স্ত্রীকে মারপিট করে তিন বছর আগে তাড়িয়ে দেয়। এতদিন মেয়ে-জামাতার বাড়িতে ছিলাম। মেয়ে-জামাতা বেকার হওয়ায় আমরা ফিরে এসে বাড়িতে উঠতে চেয়েছিলাম কিন্তু ছেলে ও পুত্রবধূ বাড়িতে উঠতে দেয়নি তাই মসজিদে উঠেছি।
নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আলমগীর হোসেন বলেন, তিন-চার বছর ধরে নাসির উদ্দিন তার বাবা-মা ও বোনদের সাথে পারিবারিক ঝামেলা ঝঞ্ঝাট করে আসছিল। যা নিষ্পত্তি করতে আমরা গ্রামবাসী ব্যর্থ হয়েছি। আব্দুল জলিলের মেয়ে পারভীন আক্তার বলেন, ভাই নাসির উদ্দীন মা-বাবাসহ আমাদেরকে অনেকবার মারধর করেছেন। এবং জালিয়াতি করে বাবার কাছ থেকে বসতবাড়ি জমি লিখে নিয়ে বাড়ি থেকে মা-বাবাকে বের করে দিয়েছেন।
অভিযুক্ত নাসির উদ্দীন (৪৪) বলেন, আমি মা-বাবাকে বাড়িতে থাকতে দিবো কিন্তু বোনদেরকে বাড়িতে জায়গা দেবোনা। বাবা ও বোনেরা আমার নামে ১৮ টি মামলা করেছে, আমিও তাদের পাঁচটি মামলা করেছি।
বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল হক জানতে পেরে রোববার বিকেলে ওই মা-বাবাকে মসজিদ থেকে ছেলের বাড়িতে উঠিয়ে দেন এবং ছেলে নাসির উদ্দিনকে আগামী সোমবারের মধ্যে নেমে যেতে বলেন। বসতবাড়ির জমিটি যতদিন ছেলে নাসির উদ্দিনের নামে রেকর্ড না হবে ততদিন তিনি এই বাড়িতে থাকতে পারবেন না বলেও জানান।
এ সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কেএম মামুনুর রশিদ, নির্বাসখোলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান খাইরুজ্জামানসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।