নিজস্ব প্রতিবেদক
স্বাধীনতার ৫০ বছর পর মুক্তিযুদ্ধে যশোরের প্রথম নারী শহিদ চারুবালা করের স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সংস্থার কাছে স্মৃতি সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসলেও সেটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় নীলগঞ্জ মহাশ্মশান কমিটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী বছর থেকে ওই স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হবে বলে জানানো হয়েছে। এর আগে চারুবালার ৫২তম শহিদ দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সকালে শহরের নীলগঞ্জ মহাশ্মশানে বটবৃক্ষের নিচে প্রতীকী শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে তার সমাধিস্থলের অস্তিত্ব না পাওয়ায় ক্ষোভ জানান তারা। এ সময় নীলগঞ্জ মহাশ্মশান কমিটি এ স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের ঘোষণা দেন।
পাকিস্তানের দুঃশাসন থেকে মুক্তির দাবিতে একাত্তরের ৩ মার্চ সকালে যশোর শহরের ঈদগাহ ময়দান থেকে মিছিল বের করেছিলেন জনতা। মিছিলটি শহরের দড়াটানা, কাপুড়িয়াপট্টি, চৌরাস্তা হয়ে ঢোকে রেল রোডে। মিছিলটি শহরের ভোলাট্যাংক রোড, সার্কিট হাউজ হয়ে আবারও ঈদগাহে আসে। এ সময় শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে অসংখ্য মানুষ ঈদগাহে জড়ো হন। পাকবাহিনীর টেলিফোন ভবন দখলের খবরে জনগণ একত্রিত হয়ে সেখানে এসে বিক্ষোভ করতে থাকেন। টেলিফোন ভবনের ছাদে অবস্থানরত পাকসেনারা গুলি শুরু করে। ওই ভবনের পশ্চিম পাশের একটি বাড়িতে বসবাস করতেন নিঃসন্তান পূর্ণচন্দ্র কর ও তার স্ত্রী চারুবালা কর। গুলি চলাকালে বাড়ির ভেতরে ছিলেন চারুবালা। এ সময় পাক সেনাদের একটি গুলি ঘরের চাল ভেদ করে চারুবালার দেহে বিদ্ধ হয়। তিনি শহীদ হন। যশোর সদর হাসপাতালের মর্গে চারুবালার লাশ রেখে তালা মেরে দেয় পাক সেনারা।
এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা সন্ধ্যার দিকে মর্গের তালা ভেঙে চারুবালার লাশ বের করে আনেন। মিছিল সহকারে চারুবালার লাশ নীলগঞ্জ মহাশ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। সৎকার শেষে সেখানে সমাধিস্থ করা হয়। কিন্তু সেই সমাধিস্থল বেদখল হয়ে গেছে। খুঁজে পাওয়া যায়নি সমাধিস্থলে স্থাপিত শহিদ চারুবালা করের স্মৃতিফলক। নীলগঞ্জ মহাশ্মসানের পাশে নদীর ধারে প্রগতী বালিকা বিদ্যালয়ের পেছনে মাটির সাথে মিশে আছে চারুবালা করের সমাধি; যার উপর দিয়ে বাড়ি তুলেছেন নীলগঞ্জ এলাকার এক বাসিন্দা। এক পাশে শুধু এক লাইন ইটের সারি ছাড়া আর কিছুই নাই সেখানে। শেষ চিহ্নটুকুও আর নেই সেখানে। তাই বরাবরের মত এবছরও ৩ মার্চ সকালে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সাংস্কৃতিক জোট ও নীলগঞ্জ মহাশ্মশান কমিটির উদ্যোগে নীলগঞ্জ মহাশ্মশান প্রাঙ্গণের এক বটগাছের বেদিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে তার প্রতি প্রতীকী শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া শহিদ চারুবালা করের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা ও শ্রদ্ধা জানিয়ে একমিনিট নিরবতা পালন করা হয়। একই সাথে চারুবালা করের নিহতস্থল এলাকার শহিদ সড়কটি ‘চারুবালা কর শহিদ সড়ক’ নামকরণ ও নীলগঞ্জ শ্মশানে চারুবালা করের দখলকৃত সমাধিস্থল উদ্ধারের দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।
এ উপলক্ষে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নীলগঞ্জ মহাশ্মশান কমিটির সভাপতি সুখেন মজুমদার। একাত্তরের ৩ মার্চের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযোদ্ধা ভীমসেন দাস স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা করেন। বক্তব্য রাখেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যশোরের সভাপতি হারুন অর রশীদ, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সুকুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সৈয়দ আবুল কালাম শামছুদ্দীন জ্যোতি, দপ্তর সম্পাদক প্রণব দাস। উপস্থিত ছিলেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বুলু, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন, আইডিইবি যশোরের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম, নীলগঞ্জ মহাশ্মশান কমিটির সাধারণ সম্পাদক রথি দেবনাথ প্রমুখ।
আরও পড়ুন:সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৭ মার্চ উদযাপনের নির্দেশ
১ Comment
Pingback: আজ বেনাপোল স্থলবন্দরে দেশের প্রথম ই গেইট উদ্বোধন করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী