সুনীল ঘোষ: তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না যশোর জেলা পরিষদ মিলনায়তন। মুক্তিযোদ্ধাদের মিলন মেলা বেলা বাড়তেই রূপ নেয় মহামিলনে। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় তৃণমূলের মুক্তিযোদ্ধারাও যোগ দেন অনুষ্ঠানে। সবার চোখে-মুখে ছিল আনন্দ-উচ্ছ্বাসের ছাপ। মঞ্চের আলোচনার বাইরে সামনের কাতারে বসা বীরদের মুখে চলছিল রোমান্থন। এ যেন স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে চলছিল আরেকটি যুদ্ধের প্রস্তুতি। মিলন মেলার বক্তারা বললেন, বিভাজন ভুলে এখনি নিতে হবে আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি।
রোববার মুক্তিযোদ্ধাদের মিলন মেলার আয়োজন করেন যশোর-৩ (সদর) আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদ। বেলা সাড়ে ১০টায় মিলন মেলা শুরুর আগেই জেলা পরিষদ মিলনায়তন (বিডি হল) ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। বীরদের মেলায় অংশ নেন স্বাধীনতা স্বপক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও গণমাধ্যমের কর্মীরা।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন মিলন মেলার আয়োজক এমপি কাজী নাবিল আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ ও আগামীর বাংলাদেশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধকালীন যশোরাঞ্চলের মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) প্রধান আলী হোসেন মনি, উপ-প্রধান অ্যাডভোকেট রবিউল আলম, যশোর পৌর মেয়র হায়দার গনী খান পলাশ, যশোর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা এএইচএম খয়রাত হোসেন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মাজহারুল ইসলাম মন্টু, সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের আয়োজক ও প্রধান বক্তা এমপি কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের মিলন মেলা করতে পেরে আমি গর্ববোধ করছি। মুক্তিযোদ্ধারা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভাজন ভুলে আপনারা স্বতঃস্ফুর্তভাবে মিলন মেলায় এসে আমাকে কৃতার্থ করেছেন। আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, দেশে অনেকেই মন্ত্রী-এমপি, সেনা ও প্রধানসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন। কিন্তু কেউ আর মুক্তিযোদ্ধা হতে পারবেন না।
অতীতে ছিলাম, আগামীতেও যশোরের মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে এমপি নাবিল আহমেদ আরো বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে দেশ স্বাধীন হতো না। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে আপনারা যুদ্ধ করে লাল-সবুজের পতাকা ছিনিয়ে এনেছেন। জাতিকে দিয়েছেন স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র দিয়েছেন।
এই রক্ত ঋণ কোনোভাবেই শোধ করার নয় মন্তব্য করে এমপি নাবিল আহমেদ বলেন, আগামী সংসদ অধিবেশনে আপনাদের দাবি-দাবার বিষয়গুলো উপস্থাপন করবো, চেষ্টা করবো পূরণের। আমি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহিদ চাচাসহ ৩০ লাখ শহীদের আত্মার মাগফেরাত ও বীরমুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যশোরে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে আগামী নির্বাচনে নৌকার সাথে থাকার অনুরোধ জানান।
মুক্তিযুদ্ধকালীন যশোরাঞ্চলে মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) প্রধান আলী হোসেন মনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। যুদ্ধ বিধবস্ত দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু যখন আন্তর্জাতিক ফোরামে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক তখন পাকিস্তানি প্রেতাতœারা জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভুলুন্ঠিত করেছিল । তাদের সেই অপচেষ্ঠা রুখে দিয়ে জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রক্ষমতায় এনেছে জনগণ। আগামীতেও তাঁকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বহাল রাখতে বিভাজন ভুলে সকল মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারকে এখনি প্রস্তুতি নিতে হবে। বিএলএফ’র উপ-প্রধান ও জাসদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অ্যাডভোকেট রবিউল আলম বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীরা নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। ষড়যন্ত্র রুখতে স্বাধীনতা স্বপক্ষের সকল শক্তিকে সজাগ ও সচেতন হতে হবে। আগামীর নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতেও তিনি আহবান জানান।
যশোর পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গনী খান পলাশ বলেন, ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম এবং আগামীতেও সোচ্চার থেকে নৌকার জয় সুনিশ্চিত করতে হবে। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীদের অপপ্রচারে মানুষ যাতে বিভ্রান্ত না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, দেশ স্বাধীনের ৫০ বছরেও আমরা স্বাধীনতা বিরোধীদের সঠিকভাবে চিহিৃত করতে পারিনি। যারা বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ও স্বাধীনতা এখনো স্বীকার করে না তারা পাকিস্তানের প্রেতাত্না। তাদের চিহিৃত করে আইনের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহবান জানান সরকার দলীয় এই জনপ্রতিনিধি।
বিএনপি’র অতীত ও বর্তমান কর্মকান্ডের তীব্র সমালোচনা করে জ¦ালাময়ী বক্তব্য দেন সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, টানা ২৯ বছর বঙ্গবন্ধুর নাম নেয়া নিষিদ্ধ ছিল। এরকম পরিস্থিতিতে যশোর সদর আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদের পিতা আবহানী ক্লাবের মাধ্যমে সারাদেশে খেলা-ধূলা ও সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত হতে সাহায্য করেছিলেন। আগামী নির্বাচনে যশোর-৩ আসনে কাজী নাবিল আহমেদ নৌকা প্রতীক পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন-মেহেদী হাসান মিন্টু, যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আফজাল হোসেন দোদুল ।
অনুষ্ঠান শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে উপহার সামগ্রী তুলে দেন এমপি কাজী নাবিল আহমেদ।