নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের পাঁচ উপজেলা ও পৌর শাখা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে দীর্ঘদিন পর সিদ্ধান্তে পৌছেছেন জেলা নেতৃবৃন্দ। মঙ্গলবার রাতে যশোর সার্কিট হাউজে বেঠক থেকে অভয়নগর, মণিরামপুর ও যশোর পৌর শাখার কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন। যদিও এসব ইউনিটের মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। সংশ্লিষ্ট শাখার সভাপতি-সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক শেষে এই কমিটিগুলো অনুমোদন দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপি। অন্য তিন উপজেলা যশোর সদর, বাঘারপাড়া ও ঝিকরগাছার শাখার কমিটি জমা দিতে ১৫ দিনের সময় বেধে দেওয়া হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ অনুমোদন পাওয়া কমিটিগুলোতে বিগত ৫ মাস আগে বাতিল হওয়া দুটি পক্ষের পকেট কমিটির অধিকাংশই নেতাই বহাল রয়েছেন। কমিটির তালিকাগুলো রাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে একদিকে যেমন কমিটিতে স্থান না পাওয়াদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে; অন্যদিকে উচ্ছ্বাসিত হয়েছেন দলে পদ পাওয়া নেতারা। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা সমালোচনা করতেও দেখা গেছে।
২০১৮ সালের ১০ মার্চ কাজী মাহমুদুল হাসানকে সভাপতি ও প্রভাষক ফারুক হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে চার সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘদিন কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ার গত ৩১ জুলাই যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের একক স্বাক্ষরে উপজেলা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে জেলা সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের স্বাক্ষর ছিল না। এ নিয়ে তখন ব্যাপক বিতর্ক হয়েছিল। বিতর্ক থামাতে দুইদিন পর (গত বছরের ২ আগস্ট) কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) বিএম মোজাম্মেল হক যশোর জেলা নেতৃবৃন্দকে ঢাকায় ডেকে বৈঠকে বসেন। সেখানে পূর্ণাঙ্গের নামে যে তালিকা প্রকাশ করা হয় তা বাতিল করা হয়। একই সাথে শোকের মাস আগস্ট শেষে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন বিএম মোজাম্মেল। এরই অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয় জেলা আওয়ামী লীগ। বুধবার রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহমুদুল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় যশোর পৌর ও অভয়নগর উপজেলা শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিগুলো বিগত ৫ মাস আগে সভাপতি-সম্পাদকের একক স্বাক্ষরে বাতিল হওয়া পকেট কমিটির বাতিল হওয়া অধিকাংশই নেতাই বহাল রয়েছেন। আর আগামী ১৫ দিনের মধ্যে যশোর সদর, বাঘারপাড়া ও ঝিকরগাছা উপজেলার সংশ্লিষ্ট শাখার সভাপতি-সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক শেষে অনুমোদন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন।
মণিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ৮০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে মাহমুদুল হাসানকে সভাপতি ও প্রভাষক ফারুক হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। আর মশিয়ার রহমান, আবুল কালাম আজাদ, আতিয়ার রহমান, হাসেম আলী, উত্তম মিত্র, মিকাইল হোসেন, গৌর কুমার ঘোষসহ ৯জনকে সহ সভাপতি করা হয়েছে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন শামছুর হক মন্টু, অ্যাডভোকেট বশির আহমেদ খান, বাবুল আক্তার বাবলু, আইন বিষয়ক সম্পাদক সুব্রত ব্যানার্জী। ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর যশোর সদর উপজেলা ও পৌর শাখার সম্মেলন হয়। পৌর শাখায় অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান সভাপতি ও মাহমুদ হাসান বিপু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে আসাদ-বিপু পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিনা স্বাক্ষরেই পত্রিকা দপ্তরে প্রেরণ করলে সমালোচনার ঝড় উঠে। পরে সেই কমিটি বাতিল করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) বিএম মোজাম্মেল হক। গতকাল রাতে সভাপতি-সম্পাদকের স্বাক্ষরিত ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু আগের বাতিল হওয়া পৌর কমিটিতে ৫৬ জন বহাল রয়েছে। সূত্রে বলছে, আওয়ামী লীগের বিদ্যমান দুটি গ্রুপের সমঝোতা করেই এই কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে এনামুল হক বাবুল সভাপতি ও সরদার অলিয়ার রহমান সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। গতকাল অনুমোদন দেওয়া কমিটিতে সভাপতি-সম্পাদককে বহাল রাখা হলেও এর আগে একক স্বাক্ষরিত বাতিল হওয়া কমিটি থেকে ৭ নেতাকে সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে।
নাম না প্রকাশে বৈঠকে উপস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল ৫ থেকে শুরু হওয়া জেলা আওয়ামী লীগের বৈঠক শুরু হয়। প্রথমে অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। এরপর পর্যায়ক্রমে মণিরামপুর, ঝিকরগাছা ও যশোর পৌর কমিটির নেতৃবৃন্দ’র সঙ্গে কথা বলেন। এর মধ্যে সমঝোতা করেই যশোর পৌর, অভয়নগর ও মণিরামপুর উপজেলা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে ঝিকরগাছা, বাঘারপাড়া ও যশোর সদর কমিটি নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় ১৫দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।