শাহারুল ইসলাম ফারদিন
দুপুর ১২ টা। যশোর শহরের বড়বাজার ডরেমনি ফ্যাশনে ক্রেতাদের ভিড়। দোকানের ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখা গেল এক মা শিশুর মত-মিলের বাগবিতণ্ডা। পাঁচ বছর বয়সী মেয়ের গায়ে মা পোশাক জড়িয়ে দেখছেন কেমন দেখায়। তবে মায়ের পছন্দের জামা মেয়ের পছন্দ হচ্ছে না। এ নিয়ে মেয়ের মন ভার। পাশেই এক বিক্রেতা লাল রঙের ‘বারবি গাউন’ দেখাতেই মেয়ের মুখে হাসি আর ধরে না। তবে ওই জামাতে বাঁধ সাদলেন মা। বললেন এই জামাতে গরম লাগবে। অনেক বুঝিয়ে মেয়েকে থামাতে না পেরে ওই জামাই কিনে দিতে হলো মাকে। এর পর হাসি ধরে না সুমাইয়া সিমরান নামে ওই শিশুর। বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানদের পছন্দ-অপছন্দের এই মিল-অমিল, হাসি-কান্নার দৃশ্য এখন যশোরের ছোট-বড় শপিংমলের প্রতিদিনের ঈদবাজারে। আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে যশোর শহরের ফুটপাত থেকে শপিংমলগুলোতে শুরু হয়েছে ঈদের বেচা-বিক্রি। কিন্তু প্রতিবারই ছোটদের পোশাকের জন্য কেনাকাটা করতে এসে অতিরিক্ত দাম গুণতে হয় অভিভাকদের। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটছে না। প্রায় প্রতিটি রঙবে রঙের পোশাকের দাম অন্য সব সময়ের চেয়ে চড়া। তবে ব্যবসায়ীরা বলছে, পাইকারি পোশাকের দাম বৃদ্ধি হওয়াতে এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও।
এবার ঈদে শহরের মুজিব সড়কের অভিজাত ফ্যাশন হাউসগুলোর প্রতিটি দোকানে হাতের কাজ করা ছোটদের বাহারি রং ও ডিজাইনের পোশাক সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও এইচএমএম রোড, কালেক্টরেট মার্কেট ও রাস্তায়ও ব্যবসায়ীরা সাজিয়ে রেখেছেন বাচ্চাদের পোশাক। এবার ঈদ আয়োজনে মেয়েদের জন্য রয়েছে ফ্রক, বেবি টপস স্কার্ট, ডিভাইডার, জিনস প্যান্ট, ফতুয়া, পাঞ্জাবি ও গেঞ্জি সেট। আর ছেলেদের জন্য রয়েছে বাচ্চাদের পার্টি ড্রেস, জিনস প্যান্ট, নরমাল প্যান্ট, থ্রি কোয়ার্টার সেট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, বাবা সেট, গেঞ্জি, শার্ট ও গেঞ্জি সেট। এবার ঈদে ছোটদের জন্যও এসেছে আকর্ষণীয় পোষাক নাইড়া, গাড়াড়া, সাড়াড়া, বারবি গাউন, লেহেঙ্গা, পুনচু, মাসাক্কালি, দিল্লি-সিক্স, ঝিলিক, হাসি, খুসি পুতুল, পাড়ি, চাক্কি, পার্টিফ্রক, টাইস ও টপস, দুইপার্টের আনারকলি চাকলী চামেলীনামের গর্জিয়াস পোশাক। এ সব বাহারি নাম তাদের বেশ আকৃষ্ট করছে। অন্যদিক চড়া দামের কারণে পছন্দের পোশাকটি শিশুদের কিনে দিতে কোনো কোনো অভিভাবককে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সুমাইয়া সিমরানের মা লাকী আক্তার বলেন, ঈদ বেশ কিছুটা দেরি এখনো। আমাদের কোন কেনাকাটা করেনি। মেয়ের স্কুল বন্ধ, তাই তাকে নিয়ে এসেছি ঈদের পোশাক কিনতে। এসে কয়েকটি পোশাক দেখে আমার পছন্দ হলেও মেয়ের হয়নি। মেয়ের বায়না রেখেই তার পছন্দ মতো পোশাক কিনে দিতে হলো। বাজারে শিশুদের সুন্দর সুন্দর পোশাক এলেও দামটা একটু বেশি। পাপিয়া সুলতানা রুমি ও আব্দুর রহিম দম্পত্তি তাদের সন্তানদের নিয়ে এসেছেন ঈদ কেনাকাটা। তারা জানান, মেয়ে রোজাকে নিয়ে পোশাক কিনতে এসেছি। দোকানগুলোতে নানান ডিজাইনের পোশাকও দেখা হয়ে গেছে। তবে মেয়ের পছন্দের জামা ‘নাইড়া’ কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। বড়দের পোশাকের চেয়ে, ছোটদের পোশাকের দাম বেশি। তারমধ্যে আগের বছরের তুলনায় এবার পোশাকের দাম অনেক বেশি। একজনের কিনলে তো আরেকজনের জন্য সম্ভব নয়। আর এক ক্রেতা সিফাত হেসেন বলেন, বাবা হিসেবে বাচ্চাদের আবদার না মেটাতে পারলে আসলে ঈদের খুশি থাকে না। বেশ কিছু ব্যস্ততার জন্য এর আগে তাদের সময় দিতে পারিনি। এখন বেরিয়েছি পরিবারসহ বাচ্চাদের জন্য তাদের শখের কেনাকাটা করতে। বাচ্চাদের পোষাকের্য দাম শুনে পড়ে যাই বিপাকে। বাচ্চারা যেটা পছন্দ করে এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আবার দোকানিরা যে দাম বলেন এর বাইরেও কথা বলার সুযোগ নেই। সব মিলে নিরুপায় আর অস্বস্তি নিয়েই সারতে হচ্ছে কেনাকাটা।
শহরের এইচএমএম রোডের টম এন্ড জেরীর মালিক মো. আলীজা জানান, আমরা যেখান থেকে পাণ্য পাইকারি ক্রয় করি, সেখানেই প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে ২০-৩০ শতাংশ। এ কারণেই অন্যান্য বছরের তুলনায় প্রতিটি পণ্য কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। মোকামে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদেরকে পণ্যের ক্রয়মূল্য অনুপাতে বিক্রি করতে হবে। বেবী ফ্যাশানের স্বত্বাধিকারী তরিকুজ্জামান বলেন, কোনো পোশাক আমরা ১০ টাকা কমে কিনতে পারলে ১০ টাকা কমে বিক্রি করতে পারবো। কিন্তু মূল জায়গাতেই তো দাম বেড়েছে। আমরা বেশি টাকায় পণ্য কিনে কম দামে বিক্রি করা তো সম্ভব নয়। পাইকারি মার্কেটগুলো থেকে পণ্য পাইকারি ক্রয় করতে গেলে সেখানে তাদের প্রতিটি পণ্য অন্যান্য বছরের তুলনায় এক থেকে দেড়শ টাকা বেশি দামে ক্রয় করতে হচ্ছে। বিভিন্ন ব্যান্ড ও পোশাকের মান বিবেচনায় কোনো কোনো পোশাকের পাইকারি মূল্যই বেড়ে হয়েছে হাজার-বারোশ টাকা। বাচ্চাদের পোশাকে দুইশ পঞ্চাশ টাকার পোশাক বিক্রি হচ্ছে তিনশ পঞ্চাশ টাকারও বেশি। বয়স ও মানভেদে ছয়শ টাকার পোশাক সাতশো পঞ্চাশ এবং বারোশ টাকার পোশাক বিক্রি হচ্ছে পনেরশ’ টাকায়।