শাহারুল ইসলাম ফারদিন
মোটরসাইকেল বেপোরোয়া গতিতে চালানো বন্ধ হয়নি। ঈদ উৎসব ঘিরে প্রশাসনের কোন নির্দেশ যেন অনেকে আমলেই নেয়নি। রাস্তাঘাটে নিয়ন্ত্রণহীন চালাচলে যশোরে এবার ঈদের ছুটিতে ঘটে গেছে প্রায় অর্ধশত দুর্ঘটনা। এরমধ্যে ৮টি দুর্ঘটনায় প্রাণ নিভে গেছে ৮ জনের। অন্যান্য দুর্ঘটনায় আহত হয়ে শুধু যশোর জেনারেল হাসপাতালেই ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭৮ জন। ফলে অনেক পরিবারের ঈদ আনন্দ মাটি হয়ে গেছে।
এদিকে অবৈধ মোটরসাইকেল আটকে সচেষ্ট ছিল পুলিশ। ট্রাফিক পুলিশ গত ৪ দিনে প্রায় দেড়শটি মোটরসাইকেল আটক করে ৯০টি মামলা করে। যা থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টাকা।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র মতে, ঈদের দিন শনিবার যশোর-নড়াইল মহাসড়কের চাড়াভিটা এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা ইজিবাইকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে আল-আমিন হোসেন বাবু (২০) নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। তিনি বাঘারপাড়া উপজেলার সদরের দোহাকুলা বীরডাঙ্গাপাড়ার ফরিদুল কবিরের ছেলে। ঈদের নামাজ শেষে বড়ভাই ইমন হোসেনকে মোটরসাইকেলযোগে ছাতিয়ানতলা বাজারে রেখে বাড়ি ফেরার পথে চাড়াভিটার ইটভাটার সামনে বিপরীত দিক থেকে আসা ইজিবাইকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারায় এ তরুণ।
একইদিন দুপুরে যশোর শহরের বকচর র্যাব অফিসের সামনে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে আরএনরোড এলাকার ঐশি আক্তার (১৯) নামে এক গৃহবধূ নিহত এবং তার স্বামী চালক ইসমাইল হোসেন (২২) ও শিশু দেবর তানজিম হোসেন (৫) আহত হয়। সদরের মুড়লির মোড় থেকে দ্রুতগতিতে আসা মোটরসাইকেলটি ইউটার্ন নেওয়ার জন্য অপেক্ষারত প্রাইভেটকারের সামনে সজোড়ে ধাক্কা লাগলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন স্বামী মোটরসাইকেলের থাকা ঐশি।
এছাড়াও ওইদিন বিকেলে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ঝিকরগাছার বেনেয়ালী নামক স্থানে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ইমরান হোসেন (১৬) নামে এক কলেজছাত্র রাস্তার ওপর পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। সে সদরের ফতেপুর গ্রামের ইসরাফিল হোসেনের ছেলে।
এদিকে ঈদের পরদিন রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে যশোরের শার্শার গোড়পাড়ায় মোটরসাইকেল-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে ইকবাল হোসেন (৪২) নামে ঢাকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক চাকরিজীবী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন নিহতের বড় ভাই মনিরুজ্জামান (৪৫)। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসে ইকবাল। ছুটি সীমিত হওয়ায় কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বড় ভাইয়ের সাথে মোটরসাইকেল যোগে কাউন্টারে যাচ্ছিলেন। পতিমধ্যে গোড়পাড়া বিশ্বাস বাড়ির সামনে পৌছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী সিএনজির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে দুই ভাই গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইকবালকে মৃত ঘোষণা করেন।
একইদিন রাত ৮টার দিকে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের নাভারন ফরেস্ট অফিসের সামনে সড়ক পার হওয়ার সময় দ্রুতগামী একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে হাইকোর্টের আইনজীবী মাহবুব হাসান (৫০) নিহত হন। ঈদের ছুটিতে তিনিও বাড়ি এসেছিলেন।
এছাড়াও ওইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে যশোর-বেনাপোল রোডের ত্রিমোহনী পারহাউজ সংলগ্ন গাজী এন্টারপ্রাইজের সামনে রাস্তা পারাপারের সময় পথচারী এ্যাডঃ মাহবুব হাসান (৫৪) নামে একজনকে বেপরোয়া গতিতে আসা মোটরসাইকেল ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থালেই নিহত হন। এ ঘটনায় শার্শার কাজীরবেড় গ্রামের মোটরসাইকেল চালক বাদশা ফয়সাল (৩২) ও সাতক্ষীরা কলারোয়ার কাজীরহাট গ্রামের আরোহী সুমন হোসেন আহত হয়েছেন।
ঈদের একদিন আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে মণিরামপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ঝিকরগাছা থেকে প্যাসেঞ্জারসহ মোটরসাইকেলে রোহিতা গ্রামে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খেজুর গাছের সাথে ধাক্কা লাগলে চালক মাসুম বিল্লাহ (৬০) মারাত্মকভাবে আহত হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
একইদিন সন্ধ্যায় চৌগাছার যাহাতাব মুন্সির মোড়ে বাইসাইকেল এবং মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে বাইসাইকেল চালক নুরুল আমিন (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
যশোরের ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান জানান, গত ৪ দিনে আমরা মোটরসাইকেলের কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকার অভিযোগে প্রায় দেড়শটি আটক করেছি। ৯০টি মামলা করে জরিমানা আদায় করা হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টাকা। আমরা অবৈধ মোটরসাইকেল চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করেছি। বিভিন্ন মোড়ে ছিল পুলিশ। কিন্তু এরপরও অনেক স্থানে অপ্রত্যাশিত সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।