নিজস্ব প্রতিবেদক
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক আলোচিত সমালোচিত আনোয়ারুল কবীরকে অবশেষে যশোর কোতোয়ালি পুলিশ আটক করেছে। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মানহানিসহ হুমকি প্রদানের অপরাধে বৃহস্পতিবার (২৫ মে) পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। একটি মামলা করেছেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন ও অপরটি করেন নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাজু আহম্মেদ। দুটি মামলায় আনোয়ারুল কবীরকে আসামি করা হয়। এর আগে ২০২২ সালে ২৫ মে আনোয়ারুল কবীরের নামে কোতোয়ালি থানায় ডিজিটাল আইনে আরো একটি মামলা হয়। ওই মামলাটি করেছিলেন শহরতলীর চাঁচড়ার আব্দুর রাজ্জাক ফুলের মেয়ে সাদিয়া আফরিন মৌরিন। মামলা নং ৭৮। আনোয়ারুল কবীর ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার নাটিমা গ্রামের মৃত এরশাদ আলী মন্ডলের ছেলে। বর্তমানে তিনি ঢাকা মিরপুর শেওড়াপাড়া মধ্য পীরেরবাগ ৯৪/৩ বসবাস করেন।
শহীদুল ইসলাম মিলন তার মামলায় বলেন, আমি যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। প্রতিপক্ষরা আরোয়ারুল কবীরকে প্রভাবিত করে তার ফেসবুক আইডি লিংক থেকে আমার নামে গত ১০ মার্চ ভিত্তিহীন ও মানহানিকর তথ্য সংবলিত পোস্ট আপলোড করে। তার লেখায় ৮১ জনব্যক্তি লাইক দেয়। বাঘারপাড়া থেকে মানহানিকর কমেন্টস লিখেছে। এছাড়া খুরশিদ আনোয়ার বাবলু নামীয় ফেসবুক আইডি থেকে লিখেছেন বাংলাদেশের রাজনীতিকরা অতীত ইতিহাস ভুলে যায়। তারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। যশোরের তথাকথিত দুর্নীতিবাজ নীতিহীন, আদর্শহীন, রাজনীতিকরা যতবড় ক্ষমতাধর হোক না কেন হিসাব নিকাশ একদিন দুনিয়ায় দিয়ে যেতেই হবে। সেদিন বেশি দূরে নয় এরাসহ আরো তিনজন মানহানিকর কমেন্টস করে। গত ২০ মার্চ ভিত্তিহীন ও মানহানিকর তথ্য সংবলিত পোস্ট আপলোড করে। তার লেখায় ৫৯ জন ব্যক্তি লঅইক দেয়। রিফাত আরেফিন কমেন্টে লিখেছে, উড়হঃ ষরশব ঃড় পড়সসবহঃ ৎবমধৎফরহম ভযরং ঢ়বৎংড়হ, বাবুল মিয়া লিখেছেন যশোর আওয়ামী লীগ বলে আর কিছু নেই মনে হয়, সব আত্মীয় লীগ। বাবুলসহ আরো তিনজন মানহানিকর কমেন্টস করে। আনোয়ারুল কবীর এ ধরনের পোস্ট দেয়ায় আমি তাকে মোবাইল ফোনে একাধিক ফোন দিই। তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেনি। ২১ মার্চ ১১ টার সময় আমি যশোর জেলা আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ের ভিতরে অবস্থানকালে আনোয়ারুল কবীর তার ব্যবহৃত হটসঅ্যাপ নাম্বার থেকে আমার ব্যবহৃত হটসঅ্যাপ নাম্বারে কল দেয়। তখন আমার কাছে দলীয় অনেক লোকজন ছিলো। ফোন পেয়ে আমি লাউড স্পিকারে দেই। আমাকে বলে আপনি একজন অকৃতজ্ঞ বেইমান লোক। আমি আপনাকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে সাহায্য করেছিলাম। বিভিন্ন জায়গায় তদবির করে আমি আপনাকে সভাপতি বানিয়েছি। কিন্তু আপনি সভাপতি হয়ে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শুরু করেছিলেন। ইতিমধ্যে দেখেছেন আমি আপনার সম্পর্কে বিভিন্ন মানহানিকর তথ্য দিয়ে জনসাধারণের মনে আপনার সম্পর্কে একটি বিরুপ ধারণা পোষণ করাতে সক্ষম। আমার লেখা পড়ে না এমন কোন লোক নেই। সামনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনি এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। আপনি আমার ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত আছেন। কিছু করলে তো কিছু করতে হয়। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার আগ পর্যন্ত আপনি আমাকে প্রতি মাসে বাজার খরচ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দিবেন। আমি আপনার সম্পর্কে ফেসবুকে ভালো ভালো কথা লিখে জনসাধারণের কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। আপনি আমার প্রস্তাবে রাজি থাকলে আমাকে দ্রুত জানাবেন। না হলে আপনার বিরুদ্ধে লিখতেই থাকবো। আমার সামনে উপস্থিত দলীয় লোকজন আনোয়ারুল কবীরের চাঁদা চাওয়ার বক্তব্য শুনেছে।
অপর মামলায় যুবলীগ নেতা নরেন্দ্রপুর ইউপি চেয়ারম্যান অনুরুপ অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, আনোয়ারুল কবীর ফেসবুক থেকে মানহানিকর তথ্য ডিলিট করার জন্য রাজুর কাছে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। গত ১৩ মে আনোয়ারুল কবীর রাজুকে হটসঅ্যাপ নাম্বারে ফোন করে এ চাঁদা দাবি করে। এ সময় রাজু নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের অফিস কক্ষে অবস্থান করছিলেন। আনোয়ারুল যখন ফোন দেয় তখন রাজু মোবাইলের লাউড স্পিকার অন করে দেয়। চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি উপস্থিত অনেক লোকজন শোনে। এরআগে ২২ সালের ২৫ মে আনোয়ারুল কবীরের বিরুদ্ধে যমেশারের সাদিয়া আফরিন মৌরিন আরো একটি মামলা করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এস আই অনুপম রায় বলেন, বুধবার বিকেলে আনোয়ারুল কবীরকে ঢাকা মীরপুর ১৩ নম্বর থেকে মৌরিনের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।