নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের ঐতিহ্যবাহী পাঁচটি স্থাপনা রক্ষার দাবিতে ব্যতিক্রমী সংবাদ সম্মেলন করেছে জনউদ্যোগ যশোর। এই অঞ্চলের প্রথম ২২২ বছর আগে নির্মিত প্রশাসনিক ভবনের (জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের পরিত্যক্ত ভবন) সামনে মঙ্গলবার দুপুরে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জনউদ্যোগ যশোরের আহ্বায়ক প্রকৌশলী নাজির আহমেদ বলেন, আগামী প্রজন্মকে যশোরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানাতে হলে ঐতিহাসিক সকল ভবন সংরক্ষণ করা জরুরি। না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে কিছুই জানতে পারবে না। একই সাথে ঐতিহ্যবাহী সকল ভবনের কাঠামো ঠিক রেখে নবরূপে সাজিয়ে প্রদর্শনের দাবি জানান তিনি। এরমধ্যে অন্যতম পরিত্যক্ত ২২২ বছরের পুরানো রেজিস্ট্রি অফিস, জজকোর্ট ভবন, জেলা পরিষদ, পৌরসভার জলকল ও পুলিশ সুপারের পুরাতন ভবন।
যশোরের ঐতিহ্য রক্ষার দাবিতে সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন জনউদ্যোগ সদস্য বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র যশোর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক নেতা মাহবুবুর রহমান মজনু। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রবীন সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ, জনউদ্যোগের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক সুরাইয়া শরীফ, জনউদ্যোগ সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দা মাসুমা বেগম, প্রেসক্লাব যশোরের যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিলন, জনউদ্যোগ সদস্য রুবাইদুল হক জোয়ার্দ্দার সুমন, আইইডি যশোর কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক বীথিকা সরকার, সদস্য সচিব কিশোর কুমার কাজল প্রমুখ।
জনউদোগের সদস্য ও যশোর ঐতিহ্য রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ্ বলেন, যশোর এক সময় রাজ্য ছিল। এই উপমহাদেশে যশোরকে সর্বপ্রথম জেলায় উন্নীত করা হয়। বাংলাদেশে সর্ব প্রথম আধুনিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু হয় যশোরে। আর এই ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য যশোরেই স্থাপিত হয় সর্বপ্রথম দফতরটিও। ২২২ বছরের এই ঐতিহাসিক ভবনটি যশোরের প্রশাসনিক ব্যবস্থা পরিচালনার প্রথম ভবন। এটি ক্ষয়িষ্ণু স্মৃতি হিসেবে আজো দাঁড়িয়ে আছে। সেই ভবনটির এখন পরিচিতি যশোর জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের পরিত্যক্ত ভবন।
তিনি উল্লেখ করেন, ১৭৮১ সালে জেলায় উন্নীত করার মাধ্যমে অবিভক্ত বাংলায় যশোরে সর্বপ্রথম আধুনিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু হয়। এ ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে বলা যায় অবিভক্ত বাংলায় আধুনিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার পাদপীঠ হলো যশোর। এ জেলার সূচনালগ্নে মির্জাপুরে থানা ছিল এবং চাঁদখালীতে কোর্ট ছিল। ১৭৮২ সালে যশোরের মুড়লীতে থানা স্থাপিত হয় এবং চাঁদখালীর কোর্ট ১৭৮৮ সালের ৫ আগস্ট স্থানান্তর করা হয় মুড়লীতে।
১৭৭২ সালে রাজস্ব আদায়ের জন্য বিভিন্ন স্থানে কালেক্টর বসানো হয়। ওই সময় যশোর, খুলনা ও ফরিদপুর নিয়ে একটি তহশীল বিভাগ গঠিত হয়। তখন যশোর জেলার সদর দফতর ছিল মুড়লীতে। ১৭৮৯ সালে রিচার্ড রোক মুড়লী থেকে জেলার অফিসাদি কসবায় স্থানান্তর করেন। এর আর এক নাম ছিল সাহেবগঞ্জ। সেখান যশোর কালেক্টরের নিজস্ব ভবন তৈরি হয় ১৮০১ সালে। আর এই নতুন দফতর নির্মাণের জন্য চাঁচড়ার রাজা তৎকালীন সরকারকে ৫০০ বিঘা জমি দান করেছিলেন। কসবায় প্রথম যে প্রশাসনিক ভবনটি নির্মিত হয়েছিল সেটি এখন যশোর জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের পরিত্যক্ত ভবন। ৮৫ বছর ধরে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সব কাজ ওই ভবন থেকে পরিচালিত হতো। কাজের পরিধি বাড়ায় ১৮৮৫ সালে যশোর কালেক্টরেট নতুন ভবনে (বর্তমান ভবন) স্থানান্তরিত হয়। এর কিছু দিন পর থেকে প্রায় ১০০ বছর ভবনটি জেলা রেজিস্ট্রি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
২০০০ সালের ৩ অক্টোবর জেলা রেজিস্ট্রি অফিস যায় নতুন ভবনে। সেই থেকে এই ঐতিহাসিক ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। প্রবীণদের হৃদয়পট থেকে আস্তে আস্তে ইতিহাসের শেষ চিহ্নটুকু মুছে যাবে। আর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে থেকে যাবে অলিক গল্প হিসেবে। আমাদের বিশ্বাস জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিলে এই ঐতিহাসিক প্রশাসনিক ভবনটি গর্বিত স্মৃতির স্মারক হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।
এর পাশাপাশি যশোরের ঐতিহ্য রক্ষায় জজকোর্ট ভবন, জেলা পরিষদ ভবন, পৌরসভার জলকল ভবন, পুলিশ সুপারের ভবন রক্ষার দাবিও জানান তিনি।