এম এ রাজা
‘যেখানে প্রকাশক নেই। নতুন কোনো বই নেই মঞ্চে, সাহিত্য বিষয়ক আলোচনা নেই। সেটা বই মেলা হতেই পারে না।’ শহরের টাউন হল মাঠে বিসিক উদ্যোক্তা মেলার সাথে চলমান একুশে গ্রন্থমেলা নিয়ে ক্ষোভের সাথে এমন মন্তব্য করেছেন যশোরের তরুণ কবি আরশি গাইন।
শুধু আরশি গাইনই নয়, যশোরের অধিকাংশ কবি ও সাহিত্যকরা চলমান একুশে গ্রন্থমেলাকে তাদের জন্য ‘সম্মানজক’ বলে মনে করছেন না। সেই সাথে টাউন হল মাঠের পুরোটা জুড়ে পৃথকভাবে দেশের স্বনামধন্য প্রকাশকদের নিয়ে বই মেলার দাবি জানান তারা।
চলমান এ মেলায় ১০টির অধিক বইয়ের দোকান থাকলেও সন্ধ্যার পর ছাড়া তা খোলা পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকে মেলায় এসে পছন্দের মতো বই নিতে পারছে না।
মঙ্গলবার দুপুরে যশোর শহরের সখিনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসেছিলেন মেলায়। এসময় মাত্র দুইটা বইয়ের দোকান খোলা ছিল।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জাকিয়া সুলতানা বলেন, পত্রিকায় সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে বলে দেখেছিলাম। কিন্তু এখন এসে দেখি অধিকাংশ বইয়ের দোকান বন্ধ। তারপরও শিক্ষার্থীরা কিছু বই কিনছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্য একটি স্কুলের শিক্ষক বলেন, বইমেলায় ৮-১০টি স্টল আছে। তাতে নতুন কোন বই নেই। অধিকাংশ দোকানে বরীন্দ্রনাথ, হুমায়ন আহমেদ, জাফর ইকবালের প্রচলিত বইয়ের সাথে শিশু-কিশোরদের কিছু বই পাওয়া যাচ্ছে।
কবি আরশি গাইন বলেন, আমাদের যশোর অনেক কিছুতেই প্রথম। আমরা গর্ব করে বলতে পারি এই জেলা থেকেই শুরু হয়েছে বাঙলি ঐতিহ্যের অনেক কিছু। মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু যেমন এই জেলায় তেমনি বইমেলার সূতিকাগারও এই যশোর। প্রথম বইমেলা ১৯৬৪ সালে টাউন হল ময়দানে হয়েছিল। যার উদ্যোক্তা ছিলেন অধ্যাপক শরীফ হোসেন। তখন আজকের ঢাকায় একুশে বইমেলার স্বপ্ন বোনাও হয়নি। আর আজ সেই মাঠে যদি বইমেলা এভাবে হয় তাহলে তা মেনে নেয়া যায় না।
প্রাচ্য সাহিত্য সংঘের পরিচালক ও কবি সেলিম রেজা সেলিম বলেন, যশোরের একুশের যে গ্রন্থমেলা হচ্ছে তা কবি ও সাহিত্যকদের জন্য মোটেও আরামদায়ক নয়। বরং তা অপমানজনক। কেননা এটা হচ্ছে উদ্যোক্তা মেলা বা বাণিজ্য মেলার আড়ালে। বইমেলা না করলেই নয় এজন্য করা। এমনকি এখানে যে ব্যানারটা করা হয়েছে সেখানেও উদ্যোক্তা মেলাকে হাইলাইট করা হয়েছে। আর গ্রন্থমেলা লেখা হয়েছে ছোট করে। যেটা চোখেই পড়ে না। তাছাড়া এখানে প্রকাশকরা অংশ নেয়নি। কিছু লোক ব্যক্তিগত ভাবে বই সংগ্রহ করে বইমেলা নাম দিয়েছে। একটা পূর্ণাঙ্গ বইমেলা করতে না পারা যশোরবাসীর জন্য ব্যর্থতা।
যশোর বিদ্রোহি সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মুন্না বলেন, বইমেলা উপলক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন সাহিত্য সংগঠনকে জানানো হয়নি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এসএম শাহীন বলেন, বইমেলার জন্য প্রস্তুতিমূলক সভা হয়েছে। কমিটির গঠন করা হয়েছিল। কমিটি যে মোতাবেক বলেছে আমরা সেই ভাবে কাজ করেছি। এছাড়া মেলার জন্য সরকারি কোন বরাদ্দ নেই।