নিজস্ব প্রতিবেদক
আষাঢ়ের শেষেও যশোরের বাজারে ইলিশের আকাল চলছে। ইলিশের জোগান না থাকায় শহরের বড় বাজারের মাছ ব্যবসায়ীরা হাত গুটিয়ে বসে থাকছেন। যে অল্প কিছু ইলিশ আসছে, তার দামও আকাশছোঁয়া। শুধু ইলিশ নয়, বাজারে খাল-বিলের দেশি মাছের সরবরাহও কম। মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘গত দুই বছর বৃষ্টি কম। এ কারণে ইলিশ সাগর থেকে নদীতে আসছে না। সাগরেও জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে কম। এর প্রভাব পড়েছে গোটা মাছবাজারে। অন্যান্য মাছের দামও তুলনামূলক বেড়ে গেছে। খাল-বিলে থই থই পানি না থাকায় দেশি ছোট মাছও ধরা পড়ছে না। মৎস্য খামারের মাছ দিয়েই কোনো রকমে আমিষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে।
মঙ্গলবার ছিলো আষাঢ়ের ২৭ তারিখ। বর্ষার মাস আষাঢ় শেষ হতে চললো। কিন্তু নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুরে থই থই পানি নেই। গত বছরও একই রকম চিত্র ছিল। তবে এর আগের দুই বছরে ভালো বৃষ্টি হয়। যশোর বিমানবন্দরের আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলায় গত দুই বছর বৃষ্টি তুলনামূলক কম হচ্ছে। চলতি বছরের ১ জুন থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত ৩৯ দিনে ২৫২ মিলিমিটার ও গত বছর এ সময়ে ১০৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগের দুই বছরে এ সময়ে প্রায় দ্বিগুণ বৃষ্টি হয়। এর মধ্যে ২০২১ সালে ৪২৩ ও ২০২০ সালে ৪২৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করে আবহাওয়া কার্যালয়।
বড়বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাছবাজারের ইলিশ বিক্রেতাদের চৌকি খালি পড়ে রয়েছে। ব্যবসায়ী মাছ বিক্রি করছেন না। দু-একজন ব্যবসায়ীকে বসে খুচরাভাবে ইলিশ বিক্রি করতে দেখা গেল। তাও এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। দুই বছর আগে একই ওজনের ইলিশের দাম ছিল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। ইলিশের খুচরা বিক্রেতা ইসহাক আলী বলেন, ‘৯ জুলাই ৬০ কেজি ইলিশ আড়ত থেকে নিয়ে এসেছি। ২৫০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের মাছ রয়েছে। এক কেজির ইলিশের দাম খুব চড়া। বাজারে কোনো ইলিশই তো নেই। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ইলিশের বাজারে আসছে না। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১০ কেজির মতো ইলিশ বিক্রি করেছি। অথচ ২০২০ ও ২০২১ সালে এ সময়ে ১৫০ কেজির বেশি ইলিশ বিক্রি করেছি প্রতিদিন। দামও ছিল কম।’ ইলিশ মাছের ব্যবসায়ী কানু বিশ্বাস বলেন, বৃষ্টি বেশি না হওয়ায় ইলিশ নদীতে আসছে না। যা ইলিশ আসছে, সবই সাগরের। এই ইলিশের স্বাদ কম। আবার দাম চড়া। ব্যবসায়ীরা জানান, এ বাজারে অন্তত ১৪০ ব্যবসায়ী খুচরা মাছ বিক্রি করেন। তাদের মধ্যে ভরা মৌসুমে ইলিশ বিক্রি করেন প্রায় ১০০ জন। এখন সেখানে মাত্র ৫ ব্যবসায়ীর কাছে ইলিশ রয়েছে। বাজারে ইলিশের দাম বেশি হওয়ার প্রভাব পড়েছে অন্যান্য মাছের ক্ষেত্রেও। দুই থেকে তিন কেজি ওজনের চাষের রুই, কাতলা ও মৃগেল মাছ প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে কেজি বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া বাজারে দেশি বাইন, শিং, টাকি, কাকিলা, শোল, গজার, পুঁটি এসব মাছবাজারে নেই বললেই চলে। এ দেশের আষাঢ় মাসের চিরাচরিত রূপ হচ্ছে, মুষলধারে দিনব্যাপী টানা বৃষ্টি হওয়া। কিন্তু এবার এক দিনের জন্যও সেই মুষলধারে টানা বৃষ্টি দেখেনি যশোরের মানুষ। বৃষ্টি কম হওয়ায় নদী-নালা পানিতে টইটুম্বুর হতে পারছে না। ফলে মাছের প্রজননও ঠিকমতো ঘটছে না। এতে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এ কারণে ইলিশের পাশাপাশি দেশি মাছেরও আকাল দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আল মামুন ফরিদ বলেন, ‘পুকুর-খাল-বিল বৃষ্টির পানিতে টইটুম্বুর হলে পাড়ের ঘাসের সাথে গা ঘেসে টেংরা, টাকি, শোল, কইসহ প্রভৃতি দেশি মাছ ডিম ছাড়ে। উন্মুক্ত জায়গা পেলে দ্রুত মাছ বাড়ে। এবার বৃষ্টির পানি কম হওয়ায় দেশি প্রজাতির মাছের প্রজনন কম হচ্ছে। একইভাবে নদীতে স্রোত কম থাকায় ইলিশ সাগর থেকে নদীতে আসতে পারছে না। জেলের জালে ধরাও পড়ছে কম।’