আগের চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন
বোতলজাত তেল বাজার থেকে প্রায় উধাও
নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরের বাজারে সয়াবিন তেল আছে, সয়াবিন তেল নেই (!) পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দর-দামেও দেখা গেছে বিস্তর ফারাক। তবে বেশির ভাগ দোকানে তেল নেই। উধাও হয়ে গেছে বোতলজাত তেল। কিছু দোকানে সামান্য কিছু তেল দেখা গেছে। কিন্তু দাম নিয়ে তেলেসমাতি চলছেই। একেক দোকানে একেক দাম। এজন্য অস্থিতিশীল বাজার ব্যবস্থাকে দুষছেন অধিকাংশ দোকানী। অন্যদিকে শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার দোকানে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বেশি দামের তেল খুচরা বেচাবিক্রি করে যেমন আসল উঠছে না, মন ভরছে ক্রেতার-এমন দাবি দোকানীদের। রবি ও সোম দু’ুদিন বাজার ও পাড়া-মহল্লা ঘুরে উঠে এসেছে এই বেহালদশার চিত্র।
সোমবার হাটখোলা রোডে এক দোকানীর কাছে জানতে চাওয়া হয় খোলা সয়াবিন কত দরে বিক্রি করছেন ? জবাবে তিনি বলেন কয় কেজি ? ৫ কেজি বলতেই তিনি জানান, ১৬৬ টাকা দরে রাখা যাবে। তবে বোতলজাত তেল নেই।
একটু এগিয়ে শ্যামা স্টোরে বোতলজাত তেলের দাম জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ৫ লিটারের ফ্রেশ কোম্পানির তেল আছে। দাম ৭৮০ টাকা। হাটচান্নি রোডে প্রথম দোকানে কোনো তেল নেই। দ্বিতীয় দোকানে খোলা সয়াবিন প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬৬ টাকা। পরের বেশ কয়েকটি মুদি দোকানী জানান, খোলা ও বোতলজাত কিছুই নেই। মা কালি ভান্ডারের মালিক মধুসূদন জানান, তেলের বাজারে অস্থিরতা চলছে। সেকারণে তেল বিক্রি করছেন না।
নিউ গোবিন্দ স্টোরে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠান মালিক জানান, রুপচাঁদার লিটার ১৬৮ টাকা আর দুই লিটারের বোতল ৩৩৫ টাকা বিক্রি করছেন।
লোহাপট্টির দীলিপ স্টোরের মালিক জানান, রুপচাঁদার লিটার ১৬৮ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেলের কেজি বিক্রি করছেন ১৭০ টাকা।
এরআগে রোববার শহরের চোরমারা দিঘিরপাড়ে সুমন স্টোরে গিয়ে দেখা যায় ভোজ্য তেল নেই। দোকানটির মালিক আব্দুর রউফ জানান, বেশি দামে তেল কিনে ক্রেতার মন রক্ষা করা যাচ্ছে না। অধিকাংশ খরিদ্দার আসেন ৫-১০ টাকার কিনতে।
এভাবে তেল বিক্রি করে আসল উঠছে না এবং ক্রেতার মনও ভরছে না দাবি করে তিনি বলেন আমি নিজেও লজ্জা পাচ্ছি। সেকারণে আপাতত তেল বিক্রি বন্ধ করেছি।
বেজপাড়ার দোকানী কালু জানান, মাসখানেক তেল বিক্রি করছেন না। বেজপাড়া প্রধান সড়কের আরও কিছু দোকানে গিয়ে দেখা যায় একই চিত্র। তাদের অভিযোগ তেল সি-িকেট বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছে। যেকারণে তেল আছে, তেল নেই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় খুচরা তেল বিক্রি করে লোকসান গুণতে হচ্ছে।
বেজপাড়ার রানু ও সোবহান নামে দ্ইু ক্রেতা জানান, স্থানীয় দোকানে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে ৫-১০ টাকার তেল কেনার সুযোগ নেই।
যশোর শহরের পাইকারীর পাশাপাশি খুচরা তেল বিক্রেতারা পাকা রসিদ ব্যবহার করছেন না। কার কাছে তেল বিক্রি করছে, তার কোনো নাম-ঠিকানাও থাকছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বড়বাজারের এক পাইকারী দোকানী বলেন, পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো পাইকারি ক্রেতাদের যে সরবরাহ আদেশ দিচ্ছে, সেখানে কোনো ইউনিট মূল্য অর্থাৎ লিটার বা মণপ্রতি দাম উল্লেখ করছে না। এটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ-২০১১-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, কারখানা বা গুদাম থেকে তেল বের করতে নাম ঠিকানা ও ইউনিট মূল্যবিহীন রসিদে নিজস্ব লোকের কাছে তেল পাঠানো হচ্ছে। এতে তেল এক জায়গায় মজুদ না হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মজুদ করা হচ্ছে।
সর্বশেষ ২০ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বৈঠক করে প্রতি লিটার তেলে ৮ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করেছে। বোতলজাত ৫ লিটার তেলে ৩৫ টাকা কমিয়ে দাম ঘোষণা করা হয়েছে ৭৬০ টাকা। অন্যদিকে খোলা সয়াবিন তেলে প্রতিকেজিতে ৭ টাকা কমিয়ে ১৪৩ টাকার পরিবর্তে ১৩৬ টাকা করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত যশোরের বাজারে আগের সেই চড়া দামে তেল বিক্রি হচ্ছে। দোকানীরা বলছেন, বেশি দামে কিনে এখন কম দামে বিক্রি করা সম্ভব না।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর যশোরের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব দৈনিক কল্যাণকে বলেন, ভোজ্যতেলের বাজারে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। অস্থির পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে ২৬-২৭ মার্চ পর্যন্ত লাগতে পারে। আজও চুড়ামনকাঠি বাজারে অভিযান চালিয়েছি। কেউ যদি বেশি দাম নেন বা মজুদ গড়েছেন জানতে পারলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।