নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে যাত্রীবাহী বাস ও ইজিবাইকের সংঘর্ষে সাত জনের নিহতের ঘটনায় ঘাতক বাস চালক মিজানুর রহমান (৪০) আত্মসমর্পণ করেছেন। আজ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের মধস্থতায় তিনি যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় আত্মসর্মপন করেন। তিনি বাঘারপাড়া উপজেলার পাঠান পাইকপাড়ার নজরুল শেখের ছেলে এবং যশোর মাগুরা সড়কের স্থানীয় লোকাল রয়েল পরিবহন নামে বাস চালক।
শনিবার রাতে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানাতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলার হোসাইন বলেন, ‘ঘটনার পরে ঘাতক রয়েল পরিবহন নামে বাসটি জদ্ব করি। একই সাথে পরিবহন চালকক আটকের টেষ্টা করি। যশোরের পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তারা আইননের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে সেই ঘাতক চালককে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। আমরা এই দুর্ঘটনা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়েছি। রোববার আদালতে প্রেরন করা হবে।
এদিকে দুর্ঘটনা কিভাবে ঘটেছিলো জানতে চাইলে বাস চালক মিজানুর রহমান বলেন, এই দুর্ঘটনা আমি ইচ্ছা করে ঘটায়নি। হঠাৎ করেই ইজিবাইকটি আমার গাড়ির সামনে চলে আসে। ইজিবাইকটি দেখে দ্রুত ব্রেক মারি। দ্রুত ব্রেক করার কারণে গাড়ির পাতির (ব্রেক মেশিন) ভেঙ্গে যায়। গাড়ির যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি না। ফলে ইজিবাইকটিতে ধাক্কা লাগে। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পরে আমি বাস থেকে নেমে পালিয়ে যাওয়া টেষ্টা করি। এসময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী আটক করে রাখে। পরে সেই বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ৫০ হাজার টাকা দিলে ছেড়ে দিবে এমন প্রতিশ্রুতিতে রাজী হয়ে আমি পালিয়ে যায়। ঘটনার পর থেকে আমি যশোরসহ বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে ছিলাম। এই ঘটনায় আমি অনুতপ্ত ও ক্ষমা চাচ্ছি। কোন চালকই ইচ্ছা করে কোন প্রাণ কেড়ে নেয় না।
আত্মসমর্পণকালে উপস্থিত ছিলেন জেলা বাস মালিক সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি সরোয়ার হোসেন, জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা মিঠুসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।
প্রসঙ্গত, গতকার শুক্রবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলার তেঁতুলতলা বাজারে যশোর-মাগুরা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে তিন শিশু, নারীসহ সাতজন। এর মধ্যে যাদবপুরে একই পরিবারে পাঁচজন। আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে দুইজন। নিহতরা হলেন, যাদবপুর গ্রামের হেলাল মুন্সির দুই জমজ ছেলে হাসান ও হোসাইন (২), হেলাল মুন্সি শাশুড়ি মাহিমা (৪৩), খালা শ্বাশুড়ি রাহিমা খাতুন ও তার মেয়ে জেবা (৮), মথুরাপুর গ্রামের ওবায়দুর রহমানের ছেলে ইজিবাইক চালক মুসা (২৭), সদর উপজেলা সুলতানপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে ইমরান হোসেন(২৬)। এ সময় হেলাল মুন্সির স্ত্রী সোনিয়া ও তার মেয়ে খাদিজা গুরুতর আহত হয়। আহতদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির পর অবস্থার অবনতি হলে সোনিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এদের মধ্যে হাসান, হোসাইন, মাহিমা, রাহিমা ও ফাহিমা একই পরিবারের লোক।