নিজস্ব প্রতিবেদক
নানামুখি প্রতারণা ও এডিট করে কুরুচিপূর্ণ ছবি তৈরি করে যশোরের এক যুবককে ব্লাকমেইল করে করে ২০ লাখ টাকা আদায় করেছে আদম ব্যাপারী চক্রের নীল নামে এক নারী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ওয়েবসাইট খুলে কানাডায় ভিসা প্রসেসিং করার ধুয়ো তুলে প্রতারণার জাল বিস্তার করে ওই নীল চক্রটি। হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কলে কথাবার্তা বলে রেকডিং করে। সেই ভিডিও ধারন করা ছবি এডিট করে বিভিন্ন ধরনের কুরুচিপূর্ণ ছবি বানিয়ে হুমকি ধামকি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় যশোরের খড়কীর রিপন আহমেদ থানায় মামলা করেছেন। ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমেছে যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবি।
মামলায় উল্লেখিত অভিযোগ ও থানা সূত্র থেকে তথ্য মিলেছে, যশোর খড়কী বামনপাড়ার আকবার আলীর ছেলে রিপন আহম্মেদ (৩৯) ২০১৬ সালে জীবীকার জন্য মালায়েশিয়ায় যান কাজ করতে। সেখানে অবস্থান করার সময় মালয়েশিয়া থেকে কানাডা যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছিলেন। ২০২০ সালে হঠাৎ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে একটি ওয়েবসাইট দেখতে পান যেখানে কানাডায় ভিসা প্রসেসিং করার ব্যাপারে প্রচারণা ছিল। ওই ওয়েবসাইটে রিপন নাম-ঠিকানা সহ যাবতীয় তথ্য অনলাইনে পূরণ করেন। পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ আনুষাঙ্গিক কাগজপত্র ওয়েবসাইটে আপলোড করেন। ওই ওয়েবসাইটে কাগজপত্র আপলোড করার সময় ওই সাইটের প্রতারক চক্রের মধ্যে নীল হাসান (২৯) নামে এক নারীর সাথে কথোপোকথন হয় রিপনের। ঢাকার কদমতলী চাকদাহর কাজী ইসমাইল মেয়ে এই নীল। বর্তমানে ঢাকা শ্যামপুর পোস্তগোলা ব্রীজের নীচ এলাকায় তার অবস্থান।
এই প্রতারক নীল অনলাইনে ফরম পূরণ করার সময় তাদের ওয়েবসাইটে পেমেন্ট করার জন্য বিকাশ এবং নগদ নাম্বার দেয়। অনলাইনে ফরম পূরণ করার পরে পেমেন্ট না করলে আবেদন সাবমিট হবে না বললে বিকাশের মাধ্যমে তাদের ওয়েবসাইটে দেয়া বিকাশ এজেন্ট নাম্বারে ৩২ হাজার ৫শ’ টাকা পাঠিয়ে রেজিস্ট্রেশন করায়।
পরবর্তীতে কিছুদিন পর ওই নীল রিপনের ব্যক্তিগত নাম্বারে যোগাযোগ করে। একপর্যায়ে মালয়েশিয়া থেকে কানাডা যেতে ১২ লাখ টাকা দিতে হবে। পরবর্তী চুক্তি অনুযায়ী রিপন তার কথামত ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে দেন। কিছুদিন পরে সে যোগাযোগ না করায় এবং তার কানাডার ভিসা প্রসেসিং না করে সময় ক্ষেপন করলে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন রিপন। কিন্তু তার নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও কল রিসিভ হয় না। পরে আমি মালয়েশিয়া অবস্থানকালীন নীলের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হয়। যোগাযোগের একপর্যায়ে নীল বিভিন্ন সময়ে হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কলে কথাবার্তা বলতে থাকে। ভিডিও কলে কথা বলার সময় স্ক্রিন রেকডিংয়ের মাধ্যমে ভিডিও ধারন করে রাকে। সেই ছবি এডিট করে বিভিন্ন ধরনের কুরুচিপূর্ণ ছবি বানিয়ে বিভিন্ন ধরনের খারাপ ছবি তৈরি করে রিপনকে হুমকি ধামকি প্রদান করতে থাকে। এমনকি সে কৌশলে ভিডিও কলে আপত্তিকরভাবে এসে ভিডিও রেকর্ড করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে তার মোবাইলে ধারনকৃত ভিডিও এবং ছবি দেখিয়ে রিপনকে ব্লাক মেইল করতে থাকে। মোটা অংকের টাকা দাবিও করে। মান-সম্মানের ভয়ে বিভিন্ন সময়ে নীলের দাবিকৃত ৮ লাখ টাকা দেন রিপন। পরবর্তীতে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর রিপন মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে আসলে নারী নীল হাসান কৌশলে ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে তাকে সুকৌশলে তার বাসায় নিয়ে যায়। তার বাসায় নিয়ে তাকে তার মোবাইলে ধারনকৃত বিভিন্ন সময়ে ভিডিও এবং ছবি দেখিয়ে ব্লাকমেইল করে এবং কাজী ডেকে কৌশলে ২০ লাখ টাকা কাবিন করে বিয়ের ফাঁদে ফেলে। এছাড়াও তার কাছে থাকা নগদ ৮ লাখ টাকা ও স্বর্নের গহনা, যার মূল্য অনুমান ২ লাখ টাকা কৌশলে ছিনিয়ে নিয়ে আটকে রাখে। সেখান থেকে যশোর ফিরে আসেন রিপন। আর এখনও ওই নীল মোবাইলে ধারনকৃত ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দেবে বলে হুমকি ধামকি প্রদান করছে। এমনকি রিপনের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের ব্যবহৃত মোবাইলে বিভিন্ন ধরনের হমকি ধামকি প্রদানসহ আপত্তিকর ভিডিও সেন্ড করছে।
এ ঘটনায় যশোর কোতোয়ালি থানায় মামলা রেকর্ড হয়েছে বলে জানিয়েছেন অফিসার ইনচার্জ আবুল হাসনাত খান। মামলাটি যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবি তদন্ত করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: জয়তী সোসাইটির ৬০ ঊর্ধ্ব মায়েদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ফল উৎসব