নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে ভাইপো সাঈদ ও শাওন নামে দুই যুবককে অপহরণের পর গুমের অভিযোগটি আদালতের নির্দেশে নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করেছে থানা পুলিশ। শহরের শংকরপুর পশু হাসপাতাল এলাকার বাসিন্দা কাজী তৌহিদ বাদী হয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর সাবেক পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিলেন।
বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম কিবরিয়া আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য কোতোয়ালি থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
অন্য আসামিরা হলেন, তৎকালীন কোতোয়ালি থানার এসআই এইচএম শহিদুল ইসলাম, আমির হোসেন, এএসআই হাসানুর রহমান, রাজন গাজী, সেলিম মুন্সি, সেলিম আহম্মেদ, বিপ্লব হোসেন, সদর ফাঁড়ির তৎকালীন টিএসআই রফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল আরিফুজ্জামান, হাবিবুর রহমান, আবু বক্কার, মাহমুদুর রহমান, রাজিবুল ইসলাম, টোকন হোসেন, পুলিশের গাড়ি চালক মিজান শেখ ও রমজান, যশোর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা, শংকরপুরের সাদেক দারোগার মোড়ের মৃত রোস্তম আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম নুরু, মৃত খলিল মিয়ার ছেলে আনিস, শংকরপুর মুরগি ফার্ম এলাকার মৃত বাবলুর ছেলে অগ্রো, রায়পাড়ার মৃত কাওছার আলীর ছেলে হাসমত আলী, হোসেন আলীর ছেলে মাসুম এবং শংকরপুর গোলপাতা মসজিদ এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে খালেদুর রহমান চুন্নু।
বাদী মামলায় বলেছেন, ১ থেকে ১৭ নম্বর আসামি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। অন্যরা এলাকার যুবলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসী। কাজী তৌহিদের ছেলে সাইদুল ইসলাম ওরফে ভাইপো সাঈদ ও তার বন্ধু শাওন ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে যশোর পৌরপার্কে ঘুরতে যায়। ওইদিন দুপুর ১২টার দিকে পৌরপার্ক থেকে পুলিশ তাদের আটক করে। বিষয়টি দেখতে পেয়ে সাব্বির হোসেন নামে তাদের নিকটাত্মীয় মোবাইল ফোনে কাজী তৌহিদকে জানায়। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন যশোর পৌরপার্কে আসেন। তারা দেখতে যান সাঈদ ও শাওনকে পুলিশের গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে। পরে তারা কোতোয়ালি থানায় গেলে পুলিশ তাদের কাছে দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে। না হলে সাঈদ ও শাওনকে খুন করে লাশ গুম করার হুমকি দেয়। তারা টাকা যোগাড় করতে ব্যর্থ হন। ৭ এপ্রিল স্থানীয় পত্রিকার মাধ্যমে স্বজনরা জানতে পারেন পুলিশের কাছ থেখে সাঈদ ও শাওন পালিয়ে গেছে। এরপর তাদের দুইজনের কোথাও না পেয়ে স্বজনরা প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করেন। এতেও কোন সন্ধান মেলেনি। পরিবারের ধারণা পুলিশের দাবিকৃত দুই লাখ টাকা ঘুষ না পেয়ে খুন করে লাশ গুম করে দেয়া হয়েছে। পরে এসপি আনিস ছাড়া অন্য ১৬ পুলিশ সদস্যের নামে আদালতে মামলা করেন সাঈদের মা হিরা খাতুন। তখন অন্য আসামিরা সাঈদকে ফেরত দিবে বলে ১০ লাখ টাকা চাঁদা হিসেবে গ্রহণ করেন। মামলাটি প্রত্যাহার করার জন্য সকল আসামি বাদীকে জোর পূর্বক তুলে নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের বাড়িতে নিয়ে চাপ সৃষ্টি করে। রাজি না হলে আবার বাদীকে পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের কার্যালয়ে নিয়ে বৈদ্যুতিক সক দেয়াসহ নানাভাবে নির্যাতন করা হয় হিরা খাতুনকে। বাধ্য হয়ে সেসময় মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন হিরা খাতুন। সেই নির্যাতনের ফলে হিরা খাতুন মারা গেছেন। কিন্তু সাঈদ ও শাওনকে পাওয়া যায়নি। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের কারণে ফের মামলা করা হয়েছে। সেই মামলাটি আদালতের নির্দেশে ৬ সেপ্টেম্বর রাতে কোতোয়ালি থানায় রেকর্ড করেছে পুলিশ।