নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে ভাইপো সাইদ ও শাওনকে আটক, পুলিশ হেফাজতে হত্যার পরে লাশ গুমের অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে। এই মামলায় যশোরের সাবেক পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান ও টিএসআই রফিকসহ ১০জনকে আসামি করা হয়েছে। পিরোজপুর জেলায় কোটি টাকার সম্পত্তি জবর-খলকে কেন্দ্র করে পূর্ব বিরোধের জেল ধরে হত্যাকা-টি ঘটানো হয়েছে। এমনই ঘটনা দাবি করে গতকাল ভাইপো সাইদের পিতা খোকন কাজী ওরফে কাজী তৌহিদুর রহমান খোকন বাদী হয়ে এই মামলাটি করেন। বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রহমত আলী মামলাটি তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কোতোয়ালি থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্য আসামিরা হলেন, যশোর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা, পিরোজপুর সদর উপজেলার কুমারখালী গ্রামের মৃত শ্যাম হাওলাদারের ছেলে ফুলু মিয়া, মৃত হাকিম শেখের দুই ছেলে রমিজ ও নাসির, মৃত আব্দুল হাই শেখের ছেলে সাইফুল ইসলাম, মৃত আব্দুল জব্বার শেখের ছেলে হারুন অর রশিদ, মৃত সেলিম শেখের ছেলে জাহিদুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর তালুকদারের ছেলে আল আমিন।
কাজী তৌহিদুর রহমান খোকন মামলায় বলেছেন, তার ছেলে সাইদুর রহমান ওরফে ভাইপো সাইদ লেখাপড়া করতো। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলো। সে কারণে তার প্রতি তৎকালীন সরকারের দমন-নীপিড়ন আচরণ ছিলো। অন্য আসামিরা পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় এবং পদস্থ ছিলো। ৪ থেকে ১০ নম্বর আসামিরা তার (বাদীর) পিরোজপুরের কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি জবর-দখল করে নেয়। লোকমারফত বিষয়টি জানতে পেরে তার ছেলে সাইদকে ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল পিরোজপুরের গ্রামের বাড়িতে পাঠায়। সেখানে গিয়ে তারা সম্পত্তি জবর-দখলের ব্যাপারে আসামিদের সাথে কথা বলে। এতে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে তার ছেলেকে জীবনে শেষ করার হুমকি দেয়। বিষয়টি যশোরে সাইদ তার মাকে জানায়। একই বছরের ৫ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে বন্ধু শাওনকে সাথে নিয়ে যশোর পৌরপার্কে ঘুরতে যায় সাইদ। এসময় তৎকালীন যশোরের এসপি আনিসুর রহমানের নির্দেশে টিএসআই রফিকসহ অন্য সকলে পৌরপার্ক থেকে সাইদ ও শাওনকে তুলে নিয়ে যায়।
খবর পেয়ে কিছুক্ষণ পরে কোতোয়ালি থানায় গেলে তৎকালীন ওসি বলছেন টিএসআই রফিক ওই দুইজনকে এখনও থানায় সোপর্দ না করে সদর ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়েছে। এরপরে সদর ফাঁড়িতে এসপির নির্দেশে টিএসআই রফিক ও কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা আটক করা সাইদ ও শাওনকে আদালতে সোপর্দের কথা বলে ১০ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু আদালতে সোপর্দ না করায় বাদীর স্ত্রী তৎকালিন এসপি আনিসুর রহমানের কাছে যান। এসপি এসময় ওই দুইজনকে সামনে পেলে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন। একই সাথে সাইদের মাকে এলোপাতাড়িভাবে মারপিট করেন। এই ঘটনায় ওই সময়ে সাইদের মা বাদী হয়ে টিএসআই রফিক, গোলাম মোস্তফা এবং আল আমিনের নামে আদালতে মামলা করেছিলেন। ওই সময়ে সাইদের মাকে শাহীন চাকলাদারের বাড়িতে আটকে রেখে মারপিট করে। রাজি না হওয়ায় তারপরে এসপি আনিস তার অফিসে ডেকে নিয়ে সাইদের মাকে বৈদ্যুতিক সক দিয়ে মারাত্মক আহত করেন। মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করে। আহত অবস্থায় কিছুদিন পরে সাইদের মা মারা গেছেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসায় আদালতে এই মামলাটি করেন।