নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে অজ্ঞান করে ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল ছিনতাই চক্রের অন্যতম হোতাসহ দুই সদস্যকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। আটককৃতরা হলেন শহরের বারান্দীপাড়ার বাসিন্দা ও ঝিকরগাছার লক্ষীপুর গ্রামের মৃত রফিজ মোল্লার ছেলে আলী রেজা রাজু (৪৩) ও মাগুরার মহাম্মদপুরের ইব্রাহিম খানের ছেলে নজরুল ইসলাম খান (৩০)।
মঙ্গলবার দুপুরে যশোর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন। তিনি জানান, চেতনা নাশক খাবার খাওয়ায়ে অচেতন করে ইজিবাইক ছিনতাই করা এ চক্রের মূল পেশা। প্রথমে চালকের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে। এরপর বিশ্বাস স্থাপন করে চেতনানাশক খাওয়ায়ে অচেতন করে ইজিবাইক নিয়ে চম্পট দেয়। বাধা আসলে তারা খুন করতেও পিছপা হয় না। শুধু ইজিবাইকই নয়, মোটরসাইকেলসহ নগদ টাকাও তারা লুট করে থাকে।
প্রেস ব্রিফিং আরো জানান, গত ২১ মার্চ বিকেলে মনিহার থেকে তুষার নামের একজনের ইজিবাইক ছিনতাই হয়। এছাড়া ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চাঁচড়া বাজার থেকে একইভাবে জাকির হোসেন নামের আরেকজনের ইজিবাইক ছিনতাই হয়। এই দুই ঘটনায় মামলার তদন্ত পায় ডিবি। দুই ঘটনার সাথেই রাজুর জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণ পাওয়ায় তাকে ধরতে অভিযানে নামে ডিবি পুলিশ।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, আলী রেজা রাজু ২৫ বছর যাবৎ বিভিন্ন জেলায় যেকোন ব্যক্তিকে টার্গেট করে তাকে চেতনানাশক খাবার খাওয়ায়ে অচেতন করে মালামাল নিয়ে সটকে পড়ে। তিনি বিভিন্ন জেলায় চারটি বিয়ে করেছেন। তিনি যশোর শহরের সবিরন বেগম নামে এক নারীকে বিবাহ করেন নিজের নাম জামাল হোসেন পরিচয় দিয়ে। পরবর্তীতে তিনি ঝিকরগাছার লক্ষিপুর গ্রামের হীরা মনি নামে এক নারীকে বিবাহ করেন। ওই নারী বর্তমানে লক্ষিপুর ওয়ার্ডের মেম্বার। এরপর তিনি চট্টগ্রাম চলে যান। সেখানে গিয়ে লিপি বেগম নামে এক নারীকে বিবাহ করেন। তাদের দুইজনেরই নামে মামলা রয়েছে চট্টগ্রাম সদর থানায়। এছাড়াও তিনি সর্বশেষ ঝিনাইদহের মহেশপুরের ঝর্ণা বেগন নামে এক নারীকে বিবাহ করেন। বর্তমানে তাকে নিয়ে শহরের বারান্দিপাড়ায় জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তির ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন।
যশোর ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ রুপম কুমার সরকার জানান, এসআই মফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম রাজুকে সোমবার বিকেলে শহরের মাইকপট্টি থেকে আটক করে। পরে তার দেয়া তথ্যে বারান্দীপাড়া ও মাগুরা জেলায় অভিযান চালিয়ে চোরাই দুইটি ইজিবাইক ও একটি মোটরসাইকেল এবং একলাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। একই সাথে এ পণ্য ক্রয় বিক্রয়ের সাথে জড়িত নজরুলকে আটক করে। চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ জানতে পারেন মোটরসাইকেলটি গত ২০২১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর যশোর সদর উপজেলার সিতারামপুর তারা মসজিদের সামনে থেকে চুরি হয়ে যায়। ওই মোটর সাইকেলের মালিক যশোর সদর উপজেলার সিতারামপুর গ্রামের শওকত আলী নামে এক ব্যক্তি। শওকত আলী যশোর আদালতে চাকরি করেন। মোটরসাইকেলটি সীতারামপুরের তারা মসজিদের সামনে থেকে চুরি হয়ে যায়। ওই একই এলাকা থেকে এমএ জলিল নামে এক ব্যক্তির একই বছর ডিসকভার ১১০ একটি মোটরসাইকেল চুরি হয়ে যায়। থানায় নিয়মিত মামলা হলেও আজও সেই মোটরসাইকেলটি উদ্ধার হয়নি। ওই মামলায় কয়েক দফা তদন্ত অফিসার বদল হলেও মামলার কূল কিনারা পাইনি। এদিকে ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ রুপণ কুমার সরকার আরো জানান, এই চক্রের সাথে জড়িত অন্যদের আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।