তবিবর রহমান
যশোর শহরের চৌরাস্তার অদূরে বস্তাপট্টি এলাকার ইনফিনিটি ভবন। এই ভবনের জমির মালিক আশরাফুজ্জামান। তার সাথে চুক্তিতে ডেভেলপার কোম্পানি ‘একসেনচিউর বিল্ডার্স’ নির্মাণ করেছে ১০তলা বহুতল ভবন। কিন্তু পৌরসভার অনুমতিই নেয়নি। শহরের জনগুরুত্বপূর্ণ এই এলাকায় অনুমোদন ছাড়াই বহুতল ভবন নির্মাণ করে বেশ ক’বছর হলো ব্যবসা ও বসবাসের জন্য ভাড়া দেয়া হয়েছে। তবে এবার শেষ রক্ষা হচ্ছে না।
অনুমোদন না নিয়ে ভবন নির্মাণ করায় অভিযান চালিয়েছে যশোর পৌরসভা। মঙ্গলবার দুপুরে সেখানে ‘অনুমোদনহীন ভবন’ মর্মে সাইন বোর্ড টানানো হয়েছে। শুধু এই বহুতল ভবন নয়; ডেভেলপার কোম্পানির নির্মাণ করা আরো আটটিসহ মোট ১১টি অনুমোদনহীন ভবনে এমন সাইন বোর্ড দিয়েছে পৌরসভা।
বুয়েট, কুয়েটসহ সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী দল দিয়ে ভবনের লোডসক্ষমতা পরীক্ষা করানোর জন্য সব ভবন মালিকদের চিঠি দিতে বলা হয়েছে। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
–কে এম আবু নওশাদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, যশোর পৌরসভা
জানতে চাইলে যশোর পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কেএম আবু নওশাদ বলেন, যশোর পৌর এলাকায় অনুমোদনহীন ভবনের তালিকা তৈরি করে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে পৌরসভা। এরই অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে ডেভেলপার কোম্পানির ৯টি বহুতল ভবনসহ মোট ১১টি ভবনের সামনে ‘অনুমোদনহীন ভবন’ মর্মে সাইন বোর্ড টানানো হয়েছে। এরমধ্যে চারটির বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
অনুমোদনহীন এসব ভবন ভেঙে ফেলা হবে কি না, জানতে চাইলে কে এম আবু নওশাদ বলেন, বুয়েট, কুয়েটসহ সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী দল দিয়ে ভবনের লোডসক্ষমতা পরীক্ষা করানোর জন্য ওই সব ভবনের মালিকদের চিঠি দিতে বলা হয়েছে। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
যশোর পৌরসভা সূত্র মতে, শহরের শহিদ মশিউর রহমান সড়কে বদরুদোজার জমিতে গোল্ডেন টাচ বিল্ডার্স অনুমোদন ছাড়াই আটতলা ভবন নির্মাণ করছে। ইতোমধ্যে সাততলা নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। একই এলাকায় কবির হোসেনের জমিতে এই কোম্পানি আটতলা ভবনের অনুমোদন নিয়ে ৯তলা ভবন নির্মাণ করেছে। শহরের পোস্টঅফিস পাড়ায় তোফায়েল আহম্মেদের জমিতে পৌরসভার অনুমোদন না নিয়ে আটতলা ভবন নির্মাণ করেছে এনেক্স বিল্ডার্স।
এ ভবনের কয়েকটি ফ্লাটে বসতি রয়েছে। এর কাছেই সাইফুল ইসলামের মালিকাধীন জমিতে ৯তলা ভবন নির্মাণ করছে তারান বিল্ডার্স নামে আরেক ডেভেলপার কোম্পানি। ইতোমধ্যে দুইতলা নির্মাণ শেষ হয়েছে। এ ভবন নির্মাণেও অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
এছাড়া অনুমোদন না নিয়ে তারানা বিল্ডার্স শহরের গুরুদাস বাবু লেনে (পাইপপট্টির জাকিয়া সুলতানা দিং) ৯ তলা এবং পিটিআই রোডে শওকত হোসেনের মালিকানাধীন জমিতে ৯তলা ভবন নির্মাণ করছে। এছাড়া শহরের রেলরোড বাই লেনে বাগমারা পুকুরপাড়ে খায়রুল বাশার চারতলা ও অনিমেশ কুমার চক্রবর্তী ৫ তলার অনুমোদন নিয়ে ছয়তলা নির্মাণ করছেন। অন্যদিকে শহরের শংকরপুরে শেখ হাসিনা আইটি পার্কের সামনে আবদুল মতলেব রকির জমিতে সানফ্লাওয়ার্স বিল্ডার্স নামে এক ডেভেলপার কোম্পানি অনুমোদন না নিয়ে ৯তলা ভবন নির্মাণ করছে।
যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) শিকদার মোকলেচুর রহমান বলেন, গত বছরের ৪ এপ্রিল জেলা বিল্ডিং কন্সট্রাকশন কমিটির সভায় এসব অনুমোদনহীন ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরই অংশ হিসেবে অভিযান চালিয়ে শহরের ১১টি ভবনের সামনে ‘অনুমোদনহীন ভবন’ মর্মে সাইন বোর্ড টানানো হয়েছে। এরমধ্যে চারটির বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়। অভিযানে পৌর প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন।
তিনি আরো বলেন, অনেকে ভবনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও জনসাধারণ ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। এজন্য আপাতত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন কিংবা অন্য কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে তারানা বিল্ডার্সের সত্ত্বাধিকারী দবির উদ্দিনের মুঠোফোনে কয়েকবার চেষ্টা করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। আর পোস্ট অফিস পাড়াস্থ এনেক্স বিল্ডার্সের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন আছে। তবে মূল যেটা; পৌরসভার অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এটা কিভাবে রিকভারি করা যায় সেটা পৌর কর্তৃপক্ষের সাথে দ্রুত আলোচনা করবো।
১ Comment
Pingback: যশোরে জেলি পুশকৃত ১২০০ কেজি চিংড়ি জব্দ, ৩০ হাজার টাকা জরিমানা - দৈনিক কল্যাণ