# সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটির সভা
# সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার আহ্বান
# শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে জেলা পর্যায়ে সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদারের সভাপতিত্বে সভায় বক্তারা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে একটি পক্ষ দেশব্যাপী সহিংসতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতা বিরোধী সেই অপশক্তিকে রুখতে সকলকেই সোচ্চার হতে হবে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবসহ অন্য মাধ্যমে গুজব রুখতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সাথে সরকারি বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশাপাশে মেসে কারা অবস্থান করছে তাদের নাম পরিচয় সনাক্ত করে সহিংসতাকারীদের খুঁজে বের করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় মুক্তিযুদ্ধকালীন বৃহত্তর যশোরের মুজিব বাহিনীর উপপ্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম বলেন, কোটা সংস্কারে ছাত্রদের যে দাবি ছিলো তা সরকার মেনে নিয়েছে। তাহলে এখন যারা আন্দোলন করছেন তারা কারা। এদের আসল পরিচয় খুঁজে বের করতে হবে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কেনইবা মিছিলে সরকার পতনের স্লোগান দিচ্ছে। বিষয়টি এখন সবার কাছেই পরিস্কার। তাই প্রশাসনের উচিৎ দেশবিরোধী অপশক্তিকে কঠোরভাবে দমন করা। এসময় তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বর্তমান অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। রবিউল আলম বলেন, দেশের ক্রান্তিলগ্নে আজ সবথেকে বেশি দায়িত্ব সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। কিন্তু তারা এখন একজোটই হতে পারছেন না। তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উচিৎ ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোলা। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সকলকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
যশোর জেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা মাজহারুল ইসলাম মন্টু বলেন, একাত্তরের সময় মুক্তিবাহিনী অস্ত্র জমা দিলেও রাজাকার, আল সামস, আল বদররা অস্ত্র জমা দেয়নি। আজ সেই অস্ত্র দিয়ে নতুন করে বাংলাদেশকে তারা রক্তাক্ত করছে। আবার তারাই নানা কৌশলে আওয়ামী লীগে যোগদান করে লুটপাট করছে। এই পরিস্থিতে তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করারও আহ্বান জানান তিনি।
যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি ও দৈনিক কল্যাণের সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা একরাম-উদ-দ্দৌলা বলেন, দেশের অরাজক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। শুধু পুলিশ প্রশাসনের উপর নির্ভরশীল না হয়ে প্রত্যেকের নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে পরিবার থেকে সন্তানদের সচেতন করতে হবে। যাতে করে কমলমতি শিক্ষার্থীদের কেউ ব্যবহার করে স্বার্থ হাসিল করতে না পারে। একইসাথে সকল সরকারি ও বেসরকারি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে ছাত্রাবাসে কারা, কেন অবস্থান করছে সেটিও গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা যশোরকে শান্ত রাখার জন্য এবং উদ্ভূত পরিস্থিতে প্রশাসনের করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন। এসময় যশোর বাস মালিক সমিতির সভাপতি বদরুজ্জামান বাবলু বলেন, দেশে কোন অরাজক পরিস্থিত তৈরি হলে সব থেকে বেশি বিপদে পড়েন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। কারণ কিছু হলেই পরিবহনে আগুন দেয়া হয়। এই পরিস্থিতি যাতে যশোরে সৃষ্টি না হয় সেজন্য প্রশাসনকে আরও কঠোর অবস্থানে যেতে হবে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো বন্ধ না করা গেলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এজন্য সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিংয়ের উপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, ছাত্রদের আন্দোলন এখন রাজনৈতিক রূপ নিয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে অবস্থার উন্নতি সম্ভব না।
যশোর সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক আশরাফুজ্জামান বলেন, ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে কিশোর গ্যাং সদস্যদের ঢুকিয়ে সহিংসতা সৃষ্টির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। অতিদ্রুত জেলায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা না নিলে সামনের দিনে আরও ভয়ংকর সহিংসতা ঘটতে পারে।
মতবিনিময় সভায় সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটির সদস্যদের উন্মুক্ত আলোচনা শেষে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন সভায় উপস্থিত অন্য সদস্যরা। এসময় পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গনী খান পলাশ বলেন, নাশকতাকারীদের রুখতে প্রয়োজনে আড়াই হাতের বাঁশের লাঠি নিয়ে মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, আন্দোলন আর দুইদিন গড়ালে সরকার পতনের সম্ভাবনা ছিলো। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নিয়ে একটি পক্ষ এই অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তিনি আরও বলেন, শান্ত যশোরকে কেউ অশান্ত করতে আসলে জেলা আওয়ামী লীগ তাদেরকে কঠোরভাবে প্রতিহত করবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অবস) বেলাল হোসাইন বলেন, দেশব্যাপী আন্দোলন শুরুর পর থেকে যশোরে কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও গত বুধবার শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে এখানে গুরুতর কোন ঘটনা ঘটেনি। জেলা পুলিশ যথেষ্ট ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিয়েছে। বুধবার শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে উচ্ছৃঙ্খল কয়েকজন কিশোর উদ্ভূত এই পরিস্থিত তৈরি করতে বাধ্য করেছে।
তিনি বলেন, যশোরে প্রতিটি মেস, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ চিহ্নিত বেশ কয়েকটি জায়গায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা পুলিশের সকল ইউনিট নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হলে জেলা পুলিশ সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা প্রতিনিয়ত নিজ নিজ এলাকার তথ্য জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠাবে। সেখান থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল মাধ্যমগুলোতে বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে। যশোরকে শান্ত রাখতে যা যা করার প্রয়োজন আমরা তাই করবো।
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এসএম শাহিন, র্যাব-৬ যশোরের কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাকিব হোসেন, বিজিবির প্রতিনিধি মেজর ফারজিল ফাহিম, এনএসআই যশোরের সহকারী পরিচালক মাকসুর বিশ্বাস, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক প্রমুখ।
