রায়হান সিদ্দিক
যশোরে হোটেল-রেস্তোরাগুলোতে উত্তপ্ত চুলার পাশে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার রেখে দিনরাত রান্নার কাজ চলছে। অরিক্ষিতভাবে রাখা সেই এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার তাপে কিংবা লিকেজ থেকে যেকোন সময় দুর্ঘটনার আশংকা থাকলেও কারো যেন ভ্রুক্ষেপ নেই। দেখার যাদের দায়িত্ব তারাই সেই হোটেলে যাচ্ছেন-খাচ্ছেন প্রতিনিয়তই।
শহরের অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা মণিহার, দড়াটানা, চিত্রা মোড়। এসব এলাকায় রয়েছে ছোট বড় অন্তত একশত রেস্তোরা ও চায়ের দোকান। প্রতিটি রেস্তোরা, চায়ের দোকানের সামনে অরিক্ষিত এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের একাধিক মজুত রয়েছে।
শহরের এম কে রোডের পুরাতন পৌরসভার অপর পাশে অবস্থিত পাঁচফোড়ন নামে একটি রেস্টুরেন্ট। রেস্তোরার প্রবেশ পথেই সাজানো রয়েছে অরিক্ষিত দশটি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার। যার বিস্ফোরণ ঘটলে আশেপাশের অন্তত ৫টি মার্কেট ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এনিয়ে রেস্তোরা মালিকের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
রাস্তার পাশে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার রাখা কতটা নিরাপদ জানতে চাইলে রেস্তোরাটির মালিক কঙ্কন কুমার কুণ্ডু বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী হোটেলে মজুত আছে। তাছাড়া এখনো কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনা অনুযায়ী গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়েছে।
শহরের প্রায় সব রেস্তরার চিত্র একই। পার্থক্য কেবল সিলিন্ডারের সংখ্যায়। কোন রেস্টুরেন্টের সামনে দশটি কোনটাই আবার ৪ থেকে ৫টি সিলিন্ডার মজুত রয়েছে। কোথাও কোথাও আবার চুলা থেকে সিলিন্ডারের দূরত্ব একেবারেই কম।
শহরের দড়াটানায় পাশাপাশি অবস্থিত একাধিক রেস্টুরেন্ট। এর একটি নিউ ভৈরব হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট। যার উপরে রয়েছে একটি প্রাইভেট হাসপাতালও। রেস্তোরার সামনে দুপাশে দুইটি চুলা। সাথেই রয়েছে গ্যাস সিলিন্ডারের একাধিক মজুত। রাধুনিরা ব্যস্ত রান্নার কাজে। নিরাপত্তা নিয়ে কারও কোন চিন্তাই নেই।
কথা হয় রেস্তোরার মালিক রাসেল মোল্লার সাথে। নিরাপত্তা প্রসঙ্গে বলেন ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনা অনুযায়ী সকল ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই কাজ করছি। কখনো কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘না আমাদের আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। এর আগে কেউ বলেনি। তবে কথা দিচ্ছি এভাবে আর সিলিন্ডার-চুলা কাছাকাছি রাখব না। চুলা থেকে সিলিন্ডার দূরে সরিয়ে রাখব।’
এদিকে দেশে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই ফুটপাতের ওপর গ্যাস সিলিন্ডার রেখে হোটেল-রেস্টুরেন্টের খাবার রান্না করছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে বিকেলে পুরি, সিঙ্গারা, ছমুচা, মোগলাইসহ বিভিন্ন পণ্য ফুটপাতে সিলিন্ডার রেখে ভাজাটা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এ কারণে বিস্ফোরণের ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। যে কোনো সময়েই ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এতে যেমন ঝুঁকিতে রয়েছে রাঁধুনি, দোকানি তেমনি ফুটপাতে চলাচলকারীরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলিন্ডারের হোস পাইপ, রেগুলেটর, গ্যাস ভালভের মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের ত্রুটির কারণে গ্যাস লিক হয়। এরপর ঘটে বিস্ফোরণের ঘটনা। এছাড়াও অনেকে চুলার পাশে গ্যাস সিলিন্ডার রাখায় অতিরিক্ত তাপে সিলিন্ডার গরম হয়েও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
এনিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন সচেতন নাগরিক কমিটি যশোরের আহ্বায়ক শাহীন ইকবাল। তিনি বলেন, ঘটনা ঘটলে শুধু তদন্ত কমিটি করেই ক্ষান্ত হয়ে যায় আমরা। পরবর্তী কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় না। যার কারণে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলার কারণেই এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আসছে না। বড় ধরণের দুর্ঘটনা না ঘটলে এনিয়ে কোন তৎপরতাও দেখা যায় না।
তিনি আরও বলেন, এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে। যার কারণে এধরণের দুর্ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়।
এবিষয়ে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স যশোরের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, ব্যাপক সচেতনতা ছাড়া এলপিজি গ্যাসের দুর্ঘটনা মোকেবেলা করা সম্ভব না। তাছাড়া শুধুমাত্র ফায়ার সার্ভিস এই সংকট মোকাবেলা করতে পারবে না। এর জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন, পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্টরা এই দায় এড়াতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। আমরা যখন মহড়া করি তখন আমাদের চোখের সামনে পড়লে আমরা তাদের সতর্ক করি, পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমরা চেষ্টা করছি সচেতনতার মাত্রা কিভাবে বাড়ানো যায়। এর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।