নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ কি ফের যশোরকে ঘিরে ধরছে? এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয়দের মধ্যে। নতুন করে আবারও করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যু বাড়ছে জেলাটিতে। সর্বশেষ সংক্রমণে প্রাণ গেল মণিরামপুর উপজেলার মাহমুদকাটি গ্রামের ৪৫ বছর বয়সী ইউসুফ আলীর।
গত পাঁচ দিন ধরে তিনি যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বুধবার (১৮ জুন) রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। রিপোর্ট অনুযায়ী, মৃত্যুর আগেই তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, তবে সেটি নিশ্চিত হওয়ার আগেই থেমে যায় তার জীবনের পথচলা।
ইউসুফ আলী প্রথমে শ্বাসকষ্ট এবং কিডনি জটিলতা নিয়ে গত ১৩ জুন যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। শুরুতে তাকে মেডিকেল ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে রোগীর অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে থাকলে চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করেন ১৪ জুন।
সেখানে তার শরীরের অক্সিজেন লেভেল ক্রমেই কমতে শুরু করে। চিকিৎসকরা রোগীর মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের জন্য পরামর্শ দেন। নমুনা সংগ্রহ করে শহরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইবনে সিনা হাসপাতালে পাঠানো হয়।
রাতেই আসে ইউসুফের করোনা রিপোর্ট—পজিটিভ। কিন্তু তখন আর সময় ছিল না। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার আগেই রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি চলে যান না ফেরার দেশে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়েত বলেন, আমরা রোগীকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে রিপোর্ট পাওয়ার আগেই তিনি মারা যান। যদি আগে নিশ্চিত হতে পারতাম, আরও কিছু ট্রিটমেন্ট ব্যবস্থা নেওয়া যেত।
এই মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যশোরে করোনার নতুন ঢেউয়ে দ্বিতীয় মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো। এর আগে বুধবার ভোরেই করোনা আক্রান্ত আরেক ব্যক্তি শেখ আমির হোসেন (৬৮) মারা যান একই হাসপাতালে।
বর্তমানে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আরও তিনজন করোনা সন্দেহভাজন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ফলে এলাকাজুড়ে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মাহমুদ ইমতিয়াজ বলেন, তৃতীয় ধাপে সংক্রমণের ধরন অনেক বেশি ছদ্মবেশী। রোগী যখন হাসপাতালে পৌঁছায়, তখন তার অবস্থা অনেকটাই খারাপ হয়ে থাকে। আমাদের উচিত দ্রুত পরীক্ষা ও আইসোলেশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
করোনার আগের অভিজ্ঞতা আমাদের শিক্ষা দিয়েছে—অবহেলা করলেই এর মূল্য চুকাতে হয় জীবন দিয়ে। নতুন করে যদি সংক্রমণ ছড়ায়, তবে তা প্রতিরোধের একমাত্র উপায় সচেতনতা।
স্বাস্থ্য অধিদফতর ইতোমধ্যে করোনা পরীক্ষার হার বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে। যশোর সিভিল সার্জন অফিস থেকেও সতর্কতামূলক বার্তা জারি করা হয়েছে।
ইউসুফ আলীর মৃত্যু শুধু একটি পরিবারে শোক নয়, বরং একটি জেলা তথা দেশের জন্য এক সতর্কবার্তা। কোভিড হয়তো সাময়িক চাপা পড়েছিল, কিন্তু এখনো তার ছায়া রয়েছে। প্রয়োজন এখনই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে এই মৃত্যু মিছিলে নতুন কেউ না যোগ হয়।
আরও পড়ুন: অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কোন ছাড় নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে আড্ডাবাজি বন্ধের নির্দেশ