নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে কলেজছাত্রকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে তিন সন্ত্রাসীকে আটক করেছে পুলিশ। প্রতারণার শিকার ছাত্র ইমন হোসেনের মামলার সূত্র ধরে গত রোববার শহরের বকচর ও বেজপাড়ায় আলাদা অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে কলেজছাত্রের মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, শহররের পুরাতন কসবা কাঁঠালতলা এলাকার অহিদুজ্জামান ওরফে শেখ তৌহিদুজ্জামানের ছেলে ওহিদুল ইসলাম রাব্বী (২৬), আলমগীর হোসেনের ছেলে আরাফাত হোসেন ছাব্বির (২৫) ও শহরতলীর চাঁচড়া মধ্যপাড়ার মৃত হারুনের ছেলে সোহান (২৪)।
কোতোয়ালি পুলিশ জানায়, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় ঘটনায় ভুক্তভোগী ইমন হোসেন আটক তিনজনসহ সাতজনকে আসামি করে গত রোববার রাতে থানায় মামলা করেন। অপর আসামিরা হলেন, শহরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়া গোলামপট্টির মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে সন্ত্রাসী ইয়াসিন মোহাম্মদ কাজল (৩২), শহরতলীর শেখহাটির সিদ্দিক মোড়লের মেয়ে মিম (১৮), চাঁচড়া খামারপাড়ার রিপন হোসেনের ছেলে জীবন (২৩) ও আব্দুল গনির ছেলে রাইফুল (২৫)।
যশোর শহরের চাঁচড়া বাবলাতলা এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে ইমন হোসেনের অভিযোগ, তিনি যশোর সদরের নতুনহাট কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র। সদর উপজেলার ভাতুড়িয়া বাজারে মিম নামে এক তরুণীর সাথে তার পরিচয় ঘটে। বিভিন্ন সময় কথাবার্তার এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু পরবর্তীতে ইমন হোসেন যখন জানতে পারেন মিম বিবাহিত এবং তার স্বামী আছে তখন তিনি যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এরপর বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ জীবন, রাইফুল ও সোহানের মধ্যস্থতায় মীমাংসা করে নেন ইমন হোসেন।
কিন্তু মীমাসার পর মিমসহ আসামি ছাব্বির, জীবন ও রাইফুল তার কাছে আড়াই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ইমন হোসেন তাদের চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে আসামিরা মিমকে দিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ক্ষতি করার জন্যও হুমকি দেন। এরপর থেকে জীবন, রাইফুল ও সোহান পুরাতন কসবা কাজীপাড়ার সন্ত্রাসী ইয়াসিন মোহাম্মদ কাজল ও রাব্বীকে সাথে নিয়ে চাঁদার দাবিতে ইমন হোসেনকে ভয়ভীতি দিতে থাকেন। গত ২০ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ইমন হোসেন এফজেড মোটরসাইকেলে (যশোর-ল-১২-২৬৬৯) করে শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এমএম কলেজের পুরাতন ছাত্রাবাসের সামনে যান। এ সময় ত সন্ত্রাসীরা এসে তার ওপর চড়াও হন এবং এলোপাতাড়ি মারধর করেন। তাকে চাকুর ভয় দেখিয়ে পূর্বে দাবিকৃত আড়াই লাখ টাকা চাঁদা দিতে বলেন। ইমন হোসেন চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে সন্ত্রাসী ইয়াসিন মোহাম্মদ কাজলের নির্দেশে সহযোগী রাব্বী কাগজপত্রসহ মোটরসাইকেল কেড়ে নেন। এরপর তাকে জোর করে ধরে ওই ছাত্রবাসের ভেতরের পুকুরপাড়ে নিয়ে যান। সেখানে তাকে আটকে রেখে বাড়ি থেকে চাঁদার টাকা এনে দিতে বলেন। ফলে প্রাণ ভয়ে ইমন হোসেন মোবাইল ফোন করে বিষয়টি তার স্বজন ঝর্না বেগমকে জানান। পরে ঝর্না বেগম ৮০ হাজার টাকা নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে সন্ত্রাসীদের দেন। এ সময় সন্ত্রাসী রাব্বী একটি ফাঁকা স্ট্যাম্পে ইমন হোসেনের স্বাক্ষর করিয়ে নেন। পরে ওই সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেল নিয়ে সেখান থেকে চলে যান। এ ঘটনার পর গত রোববার দুপুরে মোটরসাইকেলের বিষয়ে কাজ আছে বলে সন্ত্রাসীরা ইমন হোসেনকে বকচরের বিআরটিএ অফিসের বিপরীতে দেখা করতে বলেন। সেখানে যাওয়ার পর সন্ত্রাসীরা ইয়াসিন মোহাম্মদ কাজলের নামে মোটরসাইকেলের নামপত্তন করে দেওয়ার জন্য ইমন হোসেনকে চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। এরই এক ফাঁকে কৌশলে ইমন হোসেন পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে সন্ত্রাসী রাব্বী ও ছাব্বিরকে গ্রেপ্তার এবং ইমন হোসেনের মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করেন। তবে অন্য সন্ত্রাসীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যান।
পুলিশ জানায়, গত রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শেখ আকতার হোসেন শহরের বেজপাড়ায় অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত আসামি সোহানকে গ্রেপ্তার করেন।
