নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের কলেজছাত্রী মৌমিতা রানী দে’র খুনি সৌরভ বিশ্বাস পিকুলকে ১২দিনেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। যদিও পুলিশ বলছে, ঘটনার পর থেকে আসামি সৌরভ গাঢাকা দিয়েছে। কিন্তু সৌরভের পিতা রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস পুলিশ সদস্য হওয়ায় মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নানা দেনদরবার শুরু করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বাদী।
উল্লেখ্য, গত ১৯ জুলাই যশোর শহরের ওয়াপদাপাড়া বনবিথী লেনের সাকিবের ভাড়া বাড়ি থেকে মৌমিতার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত মৌমিতা রানী দে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের পোদ্দারপাড়ার নারায়ন চন্দ্র দে’র মেয়ে।
বাদী নারায়ন চন্দ্র দে জানিয়েছেন, আসামি সৌরভ বিশ্বাস পিকুলের পিতা রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস একজন পুলিশ কনস্টেবল। এরআগে তিনি যশোর আদালতে চাকরি করেছেন। সে কারণে যশোর আইনজীবী, তাদের সহকারী, যশোরের পুলিশ প্রশাসন এমন কি আদালতে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারিদের সাথে রবীন্দ্রনাথের সখ্যতা রয়েছে। তার মেয়ে মৌমিতা রানী দে’কে সৌরভ বিশ্বাস গোপনে বিয়ে করলেও তার পরিবার জনতো। আর সে কারণে মৌমিতাকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিতে তালবাহানা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস। পাশাপাশি মৌমিতাকে তালাক দেয়ার জন্য ছেলে সৌরভকে মারপিটসহ নানা ধরণের চাপ সৃষ্টি করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সৌরভ বাধ্য হয়ে মৌমিতা ছেড়ে দেয়ার জন্য চেষ্টা করে। কিন্তু মৌমিতাও স্ত্রী হিসেবে বাড়িতে নিয়ে সংসার করার জন্য সৌরভকে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন বলে জানা গেছে। ফলে মৌমিতাকে বাড়িতে নিতে পারবেনা বলে জানিয়ে দেয় সৌরভ। এই নিয়ে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কয়েকদিন ধরে মনোমালিন্য চলে আসছিল। এরমধ্যেও ঘটনার কয়েকদিন আগে মৌমিতার সিরিয়ালের ৫০ হাজার টাকা হাতে পেয়ে যান সৌরভ। আর ওই টাকাগুলো আত্মসাৎ করতেও নানা অপকৌশল অবলম্বন করে সৌরভ। ফলে মৌমিতাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। আর সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ১৭ জুলাই পরিকল্পিতভাবে মৌমিতাকে হত্যা করে সৌরভ। ঘটনার দিন সন্ধ্যার পরে মৌমিতা প্রাইভেট পড়িয়ে বাসায় ফেরেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার স্বামী সৌরভ শ্বাসরোধে মৌমিতাকে হত্যার পরে খাটের উপর ফেলে নিজের বাইসাইকেল নিয়ে সটকে পড়েন। ঘটনার আগে মৌমিতা তার মায়ের সাথে মোবাইলে কথা বলেছিলেন। কিন্তু ওই দিন রাত সাড়ে ৯টার পরে মোবাইলে আর কোন যোগাযোগ করতে না পেরে ১৯ জুলাই সকালে তার পিতা নারায়ন চন্দ্র দে এবং তার চাচা আনন্দ দে মৌমিতার ভাড়া বাসায় খোঁজ করার জন্য আসেন। ঘরের বাইরে থেকে তালাবদ্ধ দেখে সন্দেহ হলে জানালা দিয়ে মৌমিতাকে খাটের উপর পড়ে থাকতে দেখতে পান। পরে থানা পুলিশের মাধ্যমে দরজার তালা ভেঙ্গে মৌমিতার লাশ উদ্ধার করা হয়। ওইদিনই এই ব্যাপারে নিহত মৌমিতার পিতা কোতোয়ালি থানায় সৌরভ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কিন্তু গত ১১দিনেও আসামি সৌরভকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
মৌমিতার পিতা নারায়ন চন্দ্র দে আরো জানিয়েছেন, আসামি সৌরভের পিতা পুলিশ সদস্য হওয়ায় তার সাথে যোগসাজসে নানা তালবাহানা করছেন তদন্ত কর্মকতা। পাশাপাশি মামলাটি ভিন্নখাতে নিতেও আসামি সৌরভের পিতা রবীন্দ্র নাথ নানা অপকৌশল অবলম্বন করছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এই লিটন কুমার দাস বলেছেন, আসামি ভারতে চলে গেছে। তাই গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছেনা।