এম আর মাসুদ, ঝিকরগাছা
যশোরের যশ, খেজুরের রস। এটা শুধু যশ না, যশোরের ঐতিহ্য। এই যশ ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে ‘ঐতিহ্য ও পরিবেশ বাঁচাও’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মাঠে নেমেছে। উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বেশকিছু কর্মসূচিও। এর মধ্যে রয়েছে খেজুর গাছ রোপণ, রস-গুড় ও গাছি পেশা রক্ষায় মাঠ পর্যায়ে কাজ করা, গাছিদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন ও আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তামূলক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করাসহ নানা উদ্যোগ।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে সংগঠনটি জেলার ঝিকরগাছা ও চৌগাছায় গাছির ছেলে-মেয়েদেরকে শিক্ষা উপকরণ, খাবার ও গরম কাপড় বিতরণ করেছে। বাকি উপজেলাগুলোতে কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও যশোরের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ, গুড় ও গাছি পেশা রক্ষা আন্দোলন কর্মী মোহাম্মদ আবু বকর।
সর্বশেষ গত সপ্তাহে ঝিকরগাছা উপজেলার উত্তর দেউলী গ্রামের শতদল পাঠাগার প্রাঙ্গণে প্রায় অর্ধশতাধিক গাছি নিয়ে আলোচনা সভা করা হয়। পরে তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে শিক্ষা উপকরণ দেয়া হয়। এর আগে চৌগাছায়ও অনুষ্ঠান করা হয়।
ঝিকরগাছার বারবাকপুর গ্রামের গাছি আব্দুল বাহাদুর ঢালী, গাজী সফিকুল, বল্লা গ্রামের আবু দাউদ ও কানাইরালী গ্রামের আবু তালেব। এরা ৫০ বছরের অধিক সময় ধরে রস সংগ্রহের জন্য গাছ কাটেন। তারা জানান, তাদের বাবার কাছ থেকে গাছ কাটা শেখেন। কিন্তু তাদের ছেলেরা কেউ গাছ কাটা কাজ করে না। তাছাড়া, প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে নতুন করে কেউ গাছি হচ্ছেন না।
বাংলা একাডেমির পুরস্কার প্রাপ্ত বরেণ্য সাহিত্যিক ঝিকরগাছার হোসেনউদ্দীন হোসেন বলেন, খেজুর গাছ শুধু ঐতিহ্য নয়, পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় খেজুর গাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এখন আমাদের খেজুর গাছ রোপণের দিকে নজর দিতে হবে। আর যদি উদ্যোক্তা তৈরি করে এটাকে শিল্পে রূপান্তর করা যায় তাহলে যশোরের ঐতিহ্যটাকে টেকসই করা সম্ভব।
যশোরের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ, গুড় ও গাছি পেশা রক্ষা আন্দোলনকর্মী মোহাম্মদ আবু বকর বলেন, ঐতিহ্য ও পরিবেশ বাঁচাও সংগঠনটি দুই বছর ধরে যশোরের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ রোপণ, রস-গুড় ও গাছি পেশা রক্ষায় মাঠ পর্যায়ে কাজ হচ্ছে। গাছিদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন ও আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তামূলক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে তাদেরকে এ পেশায় টিকিয়ে রাখা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমরা জেলার দুই উপজেলায় ৬৫০ গাছির সাথে কথা বলেছি। তাদের ছেলেমেয়েদেরকে বিনামূল্যে কোচিং ও টিউশনির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ বছর জেলার বাকি উপজেলাগুলোতেও এ কার্যক্রম চালানো হবে।