নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে গৃহবধূ আঁখি মণি হত্যা মামলায় তার স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আঁখির বিয়ের আগে অন্য ছেলের সাথে প্রেম থাকায় দাম্পত্য জীবনে কলহের সৃষ্টি হয়। আর সে কারণেই আঁখি গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। গতকাল রোববার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আসামি নাহিদ হাসানকে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন বিচারক গোলাম কিবরিয়া।
গ্রেফতার নাহিদ হাসান সদর উপজেলার আব্দুলপুর গ্রামের মিকাইল ইসলামের ছেলে। এই ঘটনার মামলায় নাহিদ হাসানের মা আকলিমা বেগমকেও পলাতক আসামি করা হয়েছে।
নাহিদ হাসান জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পারিবারিকভাবে আঁখি মণির সাথে নাহিদ হাসানের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই দাম্পত্য সম্পর্কে কোন পাত্তাই দেয়নি আঁখি। ফলে তাদের দু’জনের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। একপর্যায় কয়েকদিন পরে আঁখি তার স্বামীকে জানায় অন্য একটি ছেলের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। নাহিদ হাসান তখন স্ত্রী আঁখিকে সেই ছেলের কাছে চলে যেতে বলেন। কিন্তু আঁখি না যাওয়ায় দিনেদিনে তাদের দাম্পত্য সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। ফলে বিষয়টি প্রথমে আঁখির বড় ভাইকে জানান নাহিদ। এরপরে আঁখিকে সাথে নিয়ে নাহিদ তার শ্বশুর বাড়িতে যান। তার শাশুড়ি এক কবিরাজ দেখিয়ে তেল ও পানি পড়া এনে দেন। এভাবে এক মাস ১৯দিন পরে অথ্যাৎ ২৫ অক্টোবর দুপুরে নাহিদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আঁখি।
অনেকক্ষণ পরে দেখেন মোবাইলে চার্জ কমে গেছে। এসময় আঁখির কাছ থেকে মোবাইলটি নিয়ে পাশের ঘরে শুয়ে পড়েন নাহিদ। কিছুক্ষণ পরে আঁখি মোবাইল আনতে গেলে তাকে দেয়নি এরপর আঁখি ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। এরই মধ্যে নাহিদ ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে গোংড়ানি শব্দ শুনে উঠে দেখেন ঘরের দরজা বন্ধ করা। দরজা ভেগে সাথে গলায় রশি দিয়ে ঝুলে আছেন আঁখি। চিৎকার করে আশপাশের লোকজন এনে তাকে নামিয়ে কিছু সময় মারা যান। এরপরে তার পিতার বাড়ি সংবাদ দেওয়া হয়।
তারা এসে পুলিশের মাধ্যমে সুরতহাল রিপোর্ট এরপরে ময়না তদন্ত শেষে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন চৌগাছা উপজেলার আফরা গ্রামের আলাউদ্দিন ইসলাম বাবু। এরই মধ্যে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেয়ে দেখা যায় আঁখিকে শ্বাসরোধে হত্যার পরে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এই ঘটনায় ৬ এপ্রিল দিবাগত রাতে আঁখির পিতা বাদী হয়ে নাহিদ হাসান ও তার মা আকলিমা বেগমের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। পুলিশ ওই রাতেই বাড়ি থেকে নাহিদকে আটকের পর রোববার আদালতে সোপর্দ করে। এদিন নাহিদ আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বিয়ের পর থেকেই তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ চলে আসছিলো। ২০২৪ সালের ২৫ অক্টোবর দুপুরের দিকে লোক মারফত জানতে পারেন তার মেয়ে মারা গেছে। সেখানে গিয়ে পুলিশের মাধ্যমে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়নাতদন্ত করানো হয়। ওই সময় অপমৃত্যু মামলা হলেও রিপোর্টে হত্যার আদালত পাওয়া গেছে। ফলে পরবর্তীতে হত্যা মামলা করা হয়েছে।