* মিল মালিকদের সাথে মতবিনিময় সভা * প্রতি সপ্তাহে জানাতে হবে মজুতের তথ্য
* ১৪ এপ্রিলের পর নতুন কর্মকৌশল * ৭ তথ্য না পেলে দেয়া হবে শাস্তি
রায়হান সিদ্দিক
চালের বস্তায় ধানের জাত ও মিল গেটের মূল্য লিখতে হবে। সেই সঙ্গে লিখতে হবে উৎপাদনের তারিখ ও প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নাম। এমনকি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের জেলা ও উপজেলাও উল্লেখ করতে হবে। থাকবে ওজনের তথ্যও। আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে মিল মালিকদের মানতে হবে এই নির্দেশনা। রোববার দুপুরে যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মিল মালিকদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার।
জেলা প্রশাসক বলেন, এই ৭ তথ্য না পেলে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ ছাড়াও মিল মালিকদের তাদের গোডাউনে ধান-চাল মজুতের সক্ষমতার পরিমাণ জানাতে হবে। সেই সক্ষমতার তথ্য যাচাই-বাচাই করা হবে। এমনকি মিলে কী পরিমাণে মজুত রয়েছে প্রতি সপ্তাহে প্রশাসনকে জানাতে হবে। বাজারে সিন্ডিকেটের কারণে সরকারের দেওয়া দামের চেয়েও বেশি দামে ধান কেনাবেচা হয়। এতে বাজারে চালের দাম বাড়ে। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে নতুন কর্মকৌশল হাতে নিয়েছে সরকার।
তিনি আরও বলেন, এটি নিশ্চিত করতে পারলে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চাল মজুত করে দাম বাড়াতে পারবেন না। বাজারে চালের দাম বাড়লে মিল গেট থেকে কত টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে তা বের করা যাবে। খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ, বিপণন আইন ২০২৩ অনুযায়ী কেউ এই নির্দেশনা না মানলে আইনের ধারা ৬ ও ৭ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই আইনে দুই বছর থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ দণ্ডের বিধান রয়েছে।
সরকারের দেয়া এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলা আওয়ামী লীগ ও মিল মালিক সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম মিলন বলেন, এমন সিদ্ধান্তের কারণে মিল মালিকরা ক্ষতির সম্মুখে পড়বে। কারণ ধান বা চালের বাজার সব সময় একই রকম থাকে না। তাছাড়া একসাথে সব চালও বিক্রি হয় না। ফলে এই নিয়ম মানতে গেলে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে মিল মালিকরা।
এ রহমান পরশ রাইস মিলের সত্ত্বাধিকারী আনিসুর রহমান বলেন, এটি বাস্তবায়ন হলে বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমবে। বড় বড় কোম্পানির মালিকরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়ায়, তাদের নাম সামনে আসে না। শুধু মিল মালিকদের নাম সামনে আসে। মিল মালিকদের পাশাপাশি বড় কোম্পানিগুলোর উপর নজর রাখার আহ্বান জানান তিনি।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যনন্দ কুণ্ডু বলেন, বাজারদর স্থিতিশীল রাখতে, চাল নিয়ে যাতে কোনো কারসাজি না হয় সেজন্য সব ব্যবসায়ী, মিল মালিকদের সরকারের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েই ব্যবসা করতে হবে। এগুলো যারা উল্লেখ করবে না তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। পাশপাশি মিলের ছাঁটাই ক্ষমতার সর্বোচ্চ ৩ গুণ ধান সংগ্রহ করতে পারবেন মালিকরা। এবং এই ধান ১ মাসের বেশি মজুত রাখা যাবে না। ছাঁটাই ক্ষমতার বেশি ধান মজুত রাখলে তা অবৈধ হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম শাহীন বলেন, চাল নিয়ে যাতে কেউ কারসাজি করতে না পারে সেজন্য সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে নতুন নির্দেশনা না আসবে যশোরের সকল ব্যবসায়ীকে এই নির্দেশনা মেনে কাজ করতে হবে। ১৪ এপ্রিলের পর যদি কেউ নির্দেশনা না মানে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
