নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে প্রধান অতিথি উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সাংবাদিক কল্যাণ সংস্থার ইফতার মাহফিলের দাওয়াতপত্র বিতরণ করা হয়। শুধু তাই না, অনুষ্ঠানের ব্যানারেও ব্যবহার করা হয় তার ছবি। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এছাড়া, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমপি শাহীন চাকলাদারকে প্রধান বক্তা হিসেবে প্রচার করা হয়। তার ছবিও ছাপা হয়েছে ব্যানারে। এছাড়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সাংবাদিক কল্যাণ সংস্থার ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আমন্ত্রণপত্র ও ব্যানারে বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান ও পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদারের নামও ব্যবহার করা হয়। ওই ইফতার ও দোয়া মাহফিল শনিবার মুজিব সড়কের একটি প্রতিষ্ঠানের হলরুমে করা হয়েছে। প্রধান অতিথিসহ ১৪ অতিথির কেউই আসেননি এ ইফতার মাহফিলে। অনেকেই জানেনও না এ নামের একটি সংগঠন আছে। অনুমতি না নিয়ে এ ধরনের বেআইনি কাজ করেছে ওই ভুইফোঁড় সংগঠনটি। এখানেই শেষ না, ব্যানারে ব্যবহার করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়ের ছবিও কিভাবে ও কোন উদ্দেশ্যে এ ইফতার মাহফিল সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। গুঞ্জন উঠেছে, মূলত ইফতার মাহফিলের আড়ালে অভিনব প্রতারণায় আশ্রয় নিয়েছে সংগঠনটি। আর বিশিষ্টজনদের নাম তারা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। এ বিষয়ে দ্রুত হস্তক্ষেপের দাবি উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সংস্থাটির যশোরের সভাপতি অভয়নগরের ব্যাপক সমালোচিত নুর ইসলাম মোল্লা। আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন যশোর আদালত চত্বরের বিতর্কিত ইদ্রিস আলম। মূলত তারাই ইফতার মাহফিলের নামে এ দাওয়াতপত্র তৈরি করে গত সাতদিনে ব্যাপক অর্থবাণিজ্য করেছেন। তাদের সাথে ফিল্ডে কাজ করেছেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব। তারাই মনগড়া অতিথি বানিয়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে অর্থ বাণিজ্য করেছেন।
ইফতার মাহফিলের ব্যানারে বিশেষ অতিথির নামের তালিকায় ছিল যশোরের পৌরমেয়র হায়দার গণি খান পলাশ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল খালেক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ, যশোর জেলা যুবলীগের সহসভাপতি সৈয়দ মনির হোসেন টগর, সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম ও পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলমগীর কবীর সুমনের নাম।
এ বিষয়ে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, সংস্থাটির কয়েক নেতা তার কাছে গিয়ে অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য বলেছিলেন। কিন্তু তিনি যাবেন সেটি নিশ্চিত করেননি। এরমধ্যে শোনেন প্রধান অতিথি হিসেবে তার নাম ব্যবহার করে দাওয়াতপত্র তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ব্যানারে তার ছবিও ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণে তিনি হতবাক হয়েছেন।
এ বিষয়ে যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, ওই নামে কোনো সংগঠন আছে কিনা তা তিনি জানেন না। এ ধরণের কাজের কাজ প্রতারণা ও মানহানিকর দাবি করে তিনি দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে সংস্থার সভাপতি নুর ইসলাম মোল্যা বলেন, মুলত প্রচন্ড গরম পড়ায় অতিথিরা আসেনি। এছাড়া চাঁদাবাজির বিষয়টি অস্বীকার করেন।
সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিস আলম বলেন, এ বিষয়ে সবার অনুমতি নিয়েই দাওয়াতপত্রে অতিথিদের নাম দেয়া হয়েছে। তারা আসবেন নিশ্চিত হয়ে ব্যানারেও ছবি দেয়া হয়েছে। যদি তারা না আসে তাহলে আমাদের কি করার আছে। এছাড়া চাঁদাবাজির বিষয়টি তারা অস্বীকার করে বলেন, তাদের নিজস্ব ফান্ড থেকে খরচ করা হয়েছে। স্বেচ্ছায় যারা সহায়তা দিয়েছেন তা নেয়া হয়েছে কিন্তু কাউকে জোর করা হয়নি।
এ বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও পুলিশের মুখপাত্র বেলাল হোসাইন বলেন, পুলিশ সুপার মহাদয়কে প্রধান বক্তা করতে হলে অব্যশ্যই পুলিশ সুপার স্যারের সম্মতি থাকতে হবে। স্যার যেখানে সম্মতি দেন সেখানে তিনি যান। এ অনুষ্ঠানের বিষয়ে তাদের জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে তারা খোঁজখবর নিচ্ছেন। দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।