নিজস্ব প্রতিবেদক
জনস্বাস্থ্যের সাবমার্সিবল পাম্প বসানোর সময় খাওয়াতে হয় ৭২ জনকে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম। রোববার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মাসিক উন্নয়ন কমিটির সভায় জনস্বাস্থ্যের সাবমার্সিবল পাম্প পেতে সুবিধাভোগীদের দুর্ভোগের বিষয়ে কথা উঠলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যদিও বিষয়টিকে ট্র্যাডিশন দাবি করেন সহকারী প্রকৌশলী জয়দেব কুমার দত্ত।
জেলা উন্নয়ন কমিটির সভায় মণিরামপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না এই প্রসঙ্গ তুলে বলেন, সাবমার্সেল বসানোর জন্য ঠিকাদারকে টাকা দেয়া হলেও সুবিধাভোগীদেরই শ্রমিকদের তিনবেলা খাওয়াতে হয়। মণিরামপুরে বেশ কয়েকটি স্থানে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, শুধু তাইই নয় ৯ থেকে ১০ জন মিস্ত্রি ও সহকারীকে ১০ দিন বাড়িতে থাকার জায়গা দিতে হয় গ্রহীতাকে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক সমালোচনা করে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান।
গত এক সপ্তাহে যশোর সদর উপজেলা অফিস সংলগ্ন বিএডিসির এরিয়া থেকে ৯-১০টি জাত সাপ মেরেছে বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার। এর ফলে ভয় ও আতংকিত এলাকাবাসী ও উপজেলার বিভিন্ন অফিসে কর্মরত কর্মচারী ও কর্মকর্তারা।
বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা অমিতা ম-ল জানালেন, সাপ না মেরে তাড়িয়ে দিতে হবে। তিনি জানালেন, উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে, টিম আসবে। তাদেরকে ওই এলাকায় পাঠানো হবে, তারা সাপ পেলে ধরে নিয়ে যাবে।
জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের অনিয়ম, জনভোগান্তির নানা তথ্য উঠে আসে। কোনো কোনো দপ্তরের কর্মকাণ্ডে নাখোশ হয়েছেন খোদ জেলা প্রশাসক।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা বলেন, জেলায় সাপে কাটা রোগী চিকিৎসায় একটাও এন্টিভেনাম নেই। সরকারিভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। নিজেদের প্রচেষ্টায় স্থানীয়ভাবে তা সংগ্রহ করতে হবে। তিনি আরও জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়মিতভাবে না পাওয়ার ফলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
একই কথা বলেন যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত। তিনি জানান, সাপে কামড়ানো চারজন রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার মতো এন্টিভেনাম তিনি স্থানীয়ভাবে জোগাড় করে হাসপাতালে রেখেছেন।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, অনেক দানশীল আছে তাদেরকে জানালে এ সব সমস্যা যেমন সমাধান হয় তেমনি প্রতিমাসে ওষুধ কেনার জন্য যে টাকা পাওয়া যায় তা থেকেও কিছু কিছু করে এন্টিভেনাম সংগ্রহ করা যায়। এ সব ছোটোখাটো বিষয় নিজেরা সমাধান না করে বড় আকারে তুলে ধরা হয়। তিনি আরও বলেন, সারা বছর সাপে কাটা বা কুকুরে কামড়ানো রোগী আসে না। কালেভদ্রে ২-১ জন আসেন, তাদেরকে যথাযথভাবে চিকিৎসা দিতে হবে। মানুষ যেনো চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে দেখার জন্য বলেন স্বাস্থ্য বিভাগকে।
এদিকে জেলা প্রশাসকের লাল টেলিফোন সচল কিনা জানে না টেলিফোন বিভাগ। এমনটিই জানালেন জেলা প্রশাসক নিজেই। সচল কিনা জানাতেও পারেনি টেলিফোন বিভাগের পক্ষ থেকে আসা জেলা সমন্বয় সভার সদস্য। এমনকি জেলা প্রশাসনের অন্য টেলিফোনগুলোর কী অবস্থা তাও বলতে পারেনি বিটিসিল। জেলা প্রশাসক জানান, লাল টেলিফোন (রেড ফোন) হয়তো কোনো দিনই ব্যবহার নাও হতে পারে কিন্তু ওটা সব সময় সচল থাকতে হবে রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে। যে কোনো মুহূর্তে সেটি ব্যবহার হতে পারে।
বিগত ৫ আগস্টের পর থেকে এক বছরের মধ্যে জেলায় স্বাস্থ্য কমিটির কোনো সভা হয়নি বলে একজন সদস্য জানান। স্বাস্থ্য বিভাগের অনিয়ম ও ব্যর্থতার কারণে এই মিটিং হয়নি বলেও দাবি করা হয়।
এ সময় বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধি না থাকা, দপ্তর প্রধানের স্থলে একজন প্রতিনিধি পাঠিয়ে দায়সারাভাবে সভায় হাজিরা ঠিক রাখা, বেশিরভাগ দপ্তরের পক্ষ থেকে, ‘আমাদের দপ্তরে কাজকর্ম স্বাভাবিক চলছে’ এমন রিপোর্ট উপস্থাপন করাসহ নানা অসঙ্গতি ধরা পড়ে। আগামীতে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে জনগণের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করা আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, আমাদের জুলাইয়ের কথা স্মরণ রাখতে হবে। দায়িত্ব নিয়ে জনগণের জন্য কাজ করতে হবে। জনভোগান্তি এড়িয়ে মানুষের প্রকৃত কল্যাণে কাজ করতে হবে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান, স্থানীয় সরকার যশোরের উপ-পরিচালক ও পৌর প্রশাসক রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই-আলম, পানি উন্নয়ন বোর্ডর নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী, গণপূর্তর নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম, প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের জেলা প্রধান ডা. রাশেদুল হক, জেলা প্রথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল হক প্রমুখ।
