নিজস্ব প্রতিবেদক
কোথাও মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে পাকা ধান। কেউ পাকা ধান কেটে ক্ষেতে রেখেছেন, কেউ মাড়াই করে ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এমনি সময় ঝড় বৃষ্টির বিপাকে পড়েছেন যশোরের কৃষকরা। কৃষি শ্রমিকের সংকট ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তারা রীতিমত দিশেহারা। কৃষকরা বলছে, ‘টানা খরার পরে কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টিতে মাঠে ধানের ক্ষতি হচ্ছে। ঝড়ে পাকা ধান ক্ষেতের জমিতে শুয়ে পড়ছে। বৃষ্টিতে ভিজছে কাটা ধান। কোথাও কোথাও পানিতে ভাসছে ক্ষেতে কেটে রাখা ধান। ঝড়বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে কৃষককের ক্ষতির শেষ থাকবে না। তবে বৃষ্টি আর না হলে ধানের বেশি ক্ষতি হবে না। তবে শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
শনিবার দুপুর থেকে যশোরের আকাশ মেঘলা হতে দেখা যায়। বিকালে আকাশে ঘন মেঘের সঙ্গে থেমে থেমে শুরু হয় দমকা হাওয়া। সাড়ে পাঁচটার পর শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টির সাথে ঝড় ও বজ্রপাত শুরু হয়। এর পর রাত আট পর্যন্ত হয় থেমে থেমে ভারি বৃষ্টি। আবহাওয়া অফিস মতে, এদিন ঝড়ের সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২ নটিক্যাল মাইল। রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত থাকলেও দমকা হাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। যশোরে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত ৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মনজুরুল আলম বলেন, ‘যশোর জেলায় প্রায় ৪০ শতাংশ বোরো ধান কেটে-ঝেড়ে ঘরে তুলেছেন কৃষকেরা। অবশিষ্ট ধান ক্ষেতে পেকে আছে। কৃষকের ঘরে উঠতে আরও ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগবে। তিনি জানান, চৌগাছা ও ঝিকরগাছা উপজেলায় কালবৈশাখীর প্রভাব বেশি পড়েছে। এই দুই উপজেলায় ঝড়ে ক্ষেতের অনেক ধান শুয়ে পড়েছে। এতে কিছু ক্ষতি হবে। ঝড়বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আরও ক্ষতির শঙ্কা আছে।
শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেড়ে যাবে কৃষকদের। জেলায় শ্রমিক সংকট থাকলেও সেটা সাতক্ষীরার শ্রমিকরা এই জেলাটিকে কাজ করছেন বলে জানান তিনি। তবে ঝড়ে আম-লিচুর ততটা ক্ষতি হয়নি বলে তিনি জানান। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যশোরে চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার শার্শা, মণিরামপুর, কেশবপুর উপজেলায় কৃষকেরা বেশির ভাগ ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। বাকি উপজেলাগুলোতে সবেমাত্র ধান কাটা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ এলাকায় কৃষকেরা ধান কেটে খেতে ফেলে রেখেছেন বিছালি শুকানোর জন্য। ঝড়-বৃষ্টিতে এগুলোর ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শার্শার শালকোনা গ্রামের হাবিবুর রহমান সবুজ বলেন, তিনি ৭ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। ধান কেটে ক্ষেতে রাখা হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেতের ধান পানিতে ভাসছে। মণিরামপুর উপজেলার পলাশি গ্রামের কৃষক তোফাজ্জেল হোসেন। চার বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন তিনি। এই কৃষক জানান, ‘একদিন পর পর ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে। ঝড়ে পাকা ধান নিচে পড়ে যাচ্ছে। আর বৃষ্টিতে ধান ভাসছে। টানা খরার পরে এই বৃষ্টির পানি উচু জমিতে বেশি জমছে না। তবে নিচু জমিতে হাঁটু সমান পানি জমছে। এতে কেটে রাখা ধান ভাসছে। ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছি। ভাবছি এই ধান এবার বাড়ি নিয়ে যেতে পারবো কিনা! সদরের পতেঙ্গালী এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আড়াই বিঘা জমিতে ধান রয়েছে। ১৫ কাটা জমির ধান কেটেছি। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ধান কেটেছি। ক্ষেতের পাকা ধান কাটার পরপরই ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়। তার পরে একদিন রোদ হলেও শনিবার ঝড় বৃষ্টিতে ধানের বেহাল অবস্থা। এই বৃষ্টিতে ধানের মান ও বিছালি নষ্ট হবে। আগামী দুই দিন রোদ না হলে সব ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন এই কৃষক। সদরের বাহাদুরপুর এলাকার কৃষক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘ধান নিয়ে বেকায়দাই রয়েছি। জমিতে কেটে রাখা ধান বাড়িতে নিয়ে আসতে পারছি না। আবার ঝড়বৃষ্টির কারণে পাকা ধান কাটতে পারছি না।
শনিবারের সন্ধার দিকে যে বৃষ্টি হয়েছে নিচু এলাকার জমিতে হাঁটু পানি জমেছে। কেটে রাখা ধান ভাসছে। ধান তলিয়ে থাকলে পুরোপুরি নষ্ট হতে পারে, তাই সকাল হলেই আধা পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করবো। শ্রমিকসংকটসহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য সেই ধান ঘরে তুলতেও রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে কৃষকদের।