প্রত্যেক ট্রাকে ট্যাগ অফিসার
ডিলারদের বিক্রি শেষ না পর্যন্ত তদারকি
সালমান হাসান: যশোরে কঠোর মনিটরিং হচ্ছে টিসিবি পণ্যের ট্রাক সেলিং। ডিলারদের কড়া নজরদারির মধ্যে রাখছে ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিস। ভর্তুকি পণ্যের কালোবাজার রোধে সার্বক্ষণিক তদারকি হচ্ছে বিক্রি কার্যক্রম। অফিসটির এমন তৎপরতায় বন্ধ হয়ে গেছে টিসিবি’র পণ্যের কালোবাজার। বরাদ্দকৃত পণ্য বিক্রি শেষ না করা পর্যন্ত অফিসটিতে কর্মরতরা সেলিং পয়েন্টে অবস্থান করছেন। ক্যাম্প অফিসের নতুন প্রধান আতিকুর রহমান যোগদানের পর এমন কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।
কিছুদিন আগেও যশোরে টিসিবি’র পণ্য কালোবাজারে বিক্রি ছিলো ওপেন সিক্রেট। সরকারের ভর্তুকি দেয়া নায্যমুল্যের পণ্য ট্রাক ধরে কালোবাজারে বিক্রি করা হচ্ছিল। লোকদেখানোর নামে ডিলাররা নামমাত্র কিছু পণ্য খোলা বাজারে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করত। তারপর বাদবাকী পণ্য খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিত। সিল তুলে ফেলে সিটিবি’র সয়াবিন তেল মুদিখানা দোকানে অবাধে বিক্রি হোত। আর চিনি, ডাল ও পেঁয়াজে কোন সিল থাকে না বলে- সেগুলো সুবিধামত নিজেরাই খুচরা ও পাইকারী দামে বিক্রি করত।
তবে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে দৃশ্যপট বদল হতে থাকে। ওই মাস থেকে ট্রাক সেল কার্যক্রম তদারকির জন্য ট্যাগ অফিসার পাঠানো শুরু হয়। তখন থেকে ঝিনাইদাহ ক্যাম্প অফিস থেকে প্রত্যেক ট্রাকের সাথে একজন করে ট্যাগ অফিসার আসছেন। তারা ডিলারদের পণ্য বিক্রি শেষ না হওয়া পর্যন্ত ট্রাকের পাশে অবস্থান করে পর্যবেক্ষণে রাখছেন। ফলে ডিলাররা এখন টিসিবি’র পণ্য নিয়ে নয়ছয় করার সুযোগ পাচ্ছেনা না। বরাদ্দের সব পণ্য ভোক্তাদের কাছে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। যার সুফল ভোগ করছেন সাধারণ ও স্বল্প আয়ের মানুষজন।
নিয়ম অনুযায়ী, যখন কোন ডিলার ট্রাক সেল কার্যক্রম পরিচালনা করবেন তখন মনিটরিংয়ের জন্য একজন ট্যাগ অফিসার দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকবেন। জেলা প্রশাসকসহ বিক্রি কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রক সংশ্লিষ্টরা এই ট্যাগ কর্মকর্তা পাঠাবেন। ট্যাগ কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে ভোক্তাদের কাছে পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করবেন।
তবে যশোরের নিয়ন্ত্রক সংশ্লিষ্টরা দীর্ঘ দিন ধরে ট্যাগ কর্মকর্তা পাঠানোর বিষয়ে গুরুত্ব না দেয়ায় সুযোগ নেন ডিলাররা। তারা ট্রাক ধরে সমস্ত পণ্য কালো বাজারো বিক্রি করে দিয়েছেন এমনও অভিযোগ আছে। তবে রাজনৈতিক ছত্রছায়ার থাকার কারণে তাদের বিরুদ্ধে সেরকম কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। গত বছরের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময়ে পর্যন্ত বহু ডিলাররের বিরুদ্ধে ট্রাক ধরে ভর্তুকি দামের পণ্য কালো বাজারে বিক্রির অভিযোগ ওঠে। সিরাজুল ইসলাম ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে এরকম এক অভিযোগ ওঠে। শহরের বস্তাপট্টি মোড়ের ওই ডিলারের গরীবশাহ্ মাজার এলাকায় পণ্য বিক্রির স্পট নির্ধারণ থাকলেও তিন দিনের মধ্যেও বিক্রি না করলে বিষয়টি জানাজানি হয়। ফলে কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগে তার ডিলারশিপের অনূকূলে বেশ কিছু পণ্য বরাদ্দও বন্ধ থাকে। এরকম অনেক অভিযোগ সদরের বসুন্দিয়ার ডিলার নূর মোহাম্মদ ও সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধেও ওঠে। ওই নেতারও টিসিবির ডিলারশিপ আছে।
টিসিবি ঝিনাইদাহ ক্যাম্প অফিস সূত্র জানায়, যশোরের জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এখন থেকে ট্যাগ অফিসার পাঠাবেন। সংশ্লিষ্টদের সাথে এরকম একটি আলোচনা হয়েছে। সামনের দিনগুলোয় তাদের পাঠানো ট্যাগ অফিসাররা ট্রাক সেলের পণ্য বিক্রির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রন ও তদারকি করবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা প্রত্যয়ন দিলে সংশ্লিষ্ট ডিলাররা পণ্য বরাদ্দ পাবেন। সূত্রমতে, অফিসটিতে কর্মরতদের মাত্র তিনজন স্থায়ী। এই স্বল্প সংখ্যক লোকবল দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও পণ্যের যাতে কালোবাজার না হয় সেজন্য তারা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
টিসিবি ঝিনাইদাহ ক্যাম্প অফিস প্রধান আতিকুর রহমান জানান, গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর তিনি সেখানে যোগদান করেন। ডিলারদের সাথে কথা বলে তার মনে সন্দেহ জাগে যে তারা জনগণের কাছে ঠিকমতন পণ্য বিক্রি করছেন না। সরকারের ভর্তুকি দামের পণ্য বিক্রিতে অনিয়ম করছেন। তারপর থেকে তিনি বরাদ্দকৃত পণ্যের ট্রাকের সাথে একজন করে ট্যাগ অফিসার পাঠাচ্ছেন। যারা ট্রাক সেলিং কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করছেন। ডিলারদের পণ্য বিক্রি তদারকি করছেন।