নিজস্ব প্রতিবেদক: টগবগিয়ে ছুটছে দামের লাগামহীন ঘোড়া। দামের দাপটের দিনে খানিকটা স্বস্তি দিল ফ্যামিলি কার্ড। ২০০ টাকা কমে তিন রকমের পণ্য কেনার সুযোগ করে দিল কার্ডটি। তাও একবার নয়, দুই দফায় ওই কার্ডে সাশ্রয়ী দামের পণ্য কেনা যাবে। গতকাল রোববার ফ্যামিলি কার্ডে টিসিবির প্রথম দফার পণ্য বিক্রি শুরু হয়।
এদিন যশোর সদরের উপশহরে কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়েছে। আগামী ১০দিন ধরে চলবে এই কার্যক্রম। এরপর আগামী ৩ এপ্রিল থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপের পণ্য বিক্রি কার্যক্রম। জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। প্রথম দফায় ৩২ ডিলার ৮ উপজেলার ৩০ হাজার ৮৫০ জনের মধ্য পণ্য বিক্রি করবেন। সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ফ্যামিলি কার্ডে টিসিবির পণ্য বিক্রি করবেন ডিলাররা।
উপশহর বি-ব্লক বাজারে দীর্ঘ লাইন। ফ্যামিলি কার্ডে টিসিবির পণ্য কেনার জন্য অপেক্ষা করছেন সবাই। নারী-পুরুষের পৃথক সারি। সবার হাতে কার্ড। টেবিল পেতে ডিলার ও তার লোকজন কার্ড যাচাই করছেন। সকাল ১০টা থেকে পণ্য বিক্রি শুরু হবে। তাই আগে থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে গেছেন কার্ডধারীরা। বেলা ১০টা ৪০’র দিকে জেলা প্রশাসক ট্রাক সেলের স্পটে আসেন। তারপর উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় পণ্য বিক্রি কার্যক্রম।
পবিত্র রমজান উপলক্ষে দেশের নি¤œ আয়ের ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করবে সরকার। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সরকারের এই ভতুর্কি দামের পণ্য সরবরাহ করবে। জেলা প্রশাসনের তত্ত্ববধায়নে এই বিক্রি কার্যক্রম চলবে। দুই দফায় ওই সংখ্যক পরিবার ফ্যামিল কার্ডের মাধ্যমে সাশ্রয়ি দামে এই পণ্য কেনার সুযোগ পাবেন।
এরমধ্যে যশোরের আট উপজেলায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৩৯ টি প্যাকেট ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি হবে। প্রথম দফায় তিন ধরনের পণ্য পাচ্ছেন কার্ডধারীরা। দু’কেজি সয়াবিন তেল, দু’কেজি মসুর ডাল ও দু’কেজি চিনি। এই তিনটি পণ্যের একটি প্যাকেজের মূল্য ৪৬০ টাকা। এক্ষেত্রে ২ লিটার সয়াবিনের দাম পড়ছে ১১০ টাকা লিটার হিসেবে ২২০ টাকা। ৫৫ টাকা কেজি দরে ২ কেজি চিনির দাম ১১০ টাকা। ৬৫ টাকা কেজি দরে ২ কেজি মসুর ডালের দাম ১৩০ টাকা। সব মিলিয়ে বাজার দরের চেয়ে এই তিন পণ্যের প্যাকেজে ক্রেতাদের সাশ্রয় হচ্ছে ২০০ টাকা।
উপশহর বি-ব্লক বাজারে টিসিবির ট্রাকের পাশে কার্ড হাতে দাঁড়িয়েছিলেন গৃহিনী রানু বেগম। বয়স ষাটের কাছাকাছি। তিনি বলেন, বাজারে জিনিসপত্রে যেরকম দাম, তাই আমাদের মত অল্প আয়ের মানুষের জন্য কোন কিছু কেনাকাটা করাই দায়। কার্ড দিয়ে কম দামে তেল, চিনি ও ডাল কিনত পারব। এটা আমার পরিবারের অনেক উপকারে আসবে। শুধু রোজার মাসে নয় সারা বছর এরকমভাবে সরকার পণ্য বিক্রি করলে আমাদের উপকার হবে। একই কথা বলেন, শাবানা বেগম, শাম্মী আক্তারসহ আরো অনেকে।
আলাপ হয় রোমেছা বেগম নামে এক নারীর সাথে। হাতে ফ্যামিলি কার্ড নিয়ে পণ্যের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। কার্ডে পেশার জায়গায় শ্রমিক লেখা দেখা যায়। আলাপচারিতায় জানান, বর্তমানে তিনি কিছু করেন না। বড় সংসার। দামের উর্ধগতির কারণে সংসার চালানোয় দায়। তিনি বলেন, আমাদের মত গরীব মানুষদের অনেক উপকার হতো যদি প্রতি মাসে নিয়মিত এভাবে পণ্য কেনা যেতো। পণ্য কেনার পর খুশির হাসি হেসে ইজিবাইক চালক মোহাম্মদ আলম বলেন, বাজারে এখন তেল, চিনি ও ডালের অনেক দাম। এই কার্যক্রম শুধু রোজার মাস কেন্দ্র করে না সারা বছর চালু রাখলে উপকৃত হতাম। হাসিভরা মুখ নিয়ে তার মতন একই মন্তব্য করেন বাদশাহ্ খান নামে আরেক ক্রেতা।
উপশহর ইউনিয়নে গতকাল ২টি স্পটে ট্রাক নিয়ে টিসিবির পণ্য বিক্রি করেন মেসার্স আকাশ ট্রের্ডাস। ডিলার নূর ইসলাম জানান, বি-ব্লক বাজারে ৫৪০ ও নয় নম্বর ওয়ার্ডে শিক্ষা বোর্ড স্কুলের পেছনের দিকে ৩৭৮ কার্ডধারীর মধ্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম চলবে। সকাল ১০ থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কার্ড দিয়ে পণ্য কেনা যাবে। এরপর যদি পণ্য উদ্বৃত্ত থেকে যায় সেগুলো ৫টার পর অন্যদের মধ্যে বিক্রির নির্দেশনা আছে। টিসিবির পণ্য বিক্রির কার্যক্রম নিবিড় মনিটরিং করা হচ্ছে।
ফ্যাামিলি কার্ডে টিসিবির পণ্য বিক্রির উদ্বোধনের সময় যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান জানান, সারা দেশের মত যশোরেও টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু হলো। জেলার ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৩৯ পরিবার এই সুবিধা পাবেন। রমজানের আগে একবার পণ্য দেয়া হচ্ছে। রমজানের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় আরেকবার পণ্য দেয়া হবে। ফ্যামিলি কার্ডের বিপরীতে ডিলাররা এই পণ্য সরবরাহ করবেন। তিনি বলেন, দশ দিনের মধ্যে প্রথম দফার পণ্য সরবরাহ শেষ হবে।