Ο কার্ড বিতরণ শেষ হয়নি তিন উপজেলায়
Ο রমজানের পণ্য বিতরণে অনিশ্চয়তা
রেজওয়ান বাপ্পী
যশোরে ১১ রমজান পেরিয়ে গেলেও অন্তত তিন উপজেলায় ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবির) পণ্য বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। পণ্য বিতরণ দূরে থাক এসব উপজেলায় এখনও ফ্যামিলি কার্ড বিতরণের কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি প্রশাসন। এতে বিপাকে পড়েছেন ঝিকরগাছা, বাঘারপাড়া ও কেশবপুর উপজেলার নিম্ন আয়ের মানুষ। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
পবিত্র রমজান মাসে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে খোলা ট্রাকে ও ফ্যামিলি কার্ডে টিসিবি পণ্য বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে পুরাতন টিসিবির কার্ড বাতিল করে নতুন স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড ইউনিয়ন পরিষদে পৌঁছে দিলেও তা বিতরণ সম্পন্ন পারেনি কর্তৃপক্ষ। এতে স্থানীয় প্রশাসনকে দুষছেন টিসিবি ডিলাররা। তারা বলছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার অভাবেই স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ করছে না ইউনিয়ন পরিষদ। যে কারণে আমরা পণ্য বিতরণ করতে পারছি না। স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, টিসিবি কার্ড বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। শেষ হলেই কার্য অনুযায়ী পণ্য বিতরণ করা হবে।
এ দিকে টিসিবি কর্তৃপক্ষ বলছে, ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ না হলে মাস্টাররোলে নিম্নআয়ের মানুষদের মাঝে ডিলারদের পণ্য বিক্রির কথা বলা হয়েছে। তবে ডিলাররা বলছে এ কার্যক্রমেও ইউএনও মহোদয়রা আন্তরিকতা দেখাচ্ছেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঝিকরগাছার এক ডিলার বলেন, পণ্য বিতরণ শেষ করতে চাপপ্রয়োগ করছে টিসিবি কর্তৃপক্ষ। তবে নতুন স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ না করলে আমরা কিভাবে পণ্য বিতরণ করবো?
তিনি বলেন, কার্ড বিতরণ না হলে মাস্টাররোলে নিম্নআয়ের মানুষের মাঝে পণ্য বিক্রি করার কথা বলছে টিসিবি। এ কার্যক্রমেও স্থানীয় প্রশাসন কিছু বলছেন না। তিনি আরও বলেন, এ উপজেলায় কার্ড যেনো বিতরণ না করা হয় সেজন্য প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছেন। এ জন্য আমরা ব্যক্তিগতভাবে পণ্য বিতরণে রিস্ক নিতে পারছি না।
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ভুপালী সরকার বলেন, টিসিবির স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ না করতে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত চিঠি দিয়েছেন একটি গ্রুপ। তবে ১৫ মার্চের মধ্যে কার্ড বিতরণ শেষ করতে নির্দেশনা পেয়েছি। যথাসময়েই কার্যক্রম শেষ হবে বলে মনে করেন তিনি। জানতে চেয়ে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাকির হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শোভন সরকার বলেন, জানুয়ারি মাসের পণ্য বিতরণ করা হয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারি মাসের পণ্য এখনও ছাড় হয়নি। আমাদের টিসিবি কার্ড অ্যাকটিভেশনের কাজ চলমান আছে। এ উপজেলায় কোনো সমস্যা নেই। যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার বলেন, আমাদের টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড ও পণ্য বিতরণ চলমান আছে।
যশোরে টিসিবি পণ্য বিতরণ নিয়ে জল কম ঘোলা হয়নি। হাতাহাতি, হামলা, শ্লীলতাহানি, বাড়িতে আগুন দেওয়া, মামলা, বিএনপি-জামায়াত ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মধ্যে পণ্য ভাগাভাগিরও ঘটনা ঘটেছে। আবার উন্মুক্তভাবে পণ্য বিক্রি করতেও দেখা গেছে। অনেক স্থানে বিশৃঙ্খলা হওয়ায় পণ্য বিতরণ বন্ধ করা হয়েছে।
শার্শায় বিএনপির দুই নেতার হাতাহাতি, তিন বাড়িতে আগুন :
টিসিবির কার্ড বিতরণকে কেন্দ্র করে শার্শা উপজেলার কন্দবপুর গ্রামে বিএনপির দুই নেতার মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর জেরে পরে তিনটি বাড়িতে আগুন ও লুটপাট করা হয়। এ ঘটনায় ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয়ে আরও ৬-৭ জনকে আসামি করে দুটি মামলা হয়েছে।
মনিরামপুরে সড়ক অবরোধ, ইউএনওর অপসারণ দাবি : মনিরামপুর পৌরসভায় টিসিবির পণ্যের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন বঞ্চিত ব্যক্তিরা। ৩ মার্চ যশোর-চুকনগর আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে প্রায় দুই হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত তামান্নার অপসারণ দাবি করেন। বিক্ষোভকারীরা মহাসড়কে অবস্থান নেওয়ায় যশোর-চুকনগর আঞ্চলিক মহাসড়কের মনিরামপুর বাজারের দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষোভকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। পরে উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহীদ ইকবাল হোসেন এসে বিক্ষোভকারীদের আশ্বস্ত করে বাড়িতে পাঠান।
নারী ইউপি সদস্যকে শ্লীলতাহানি! :
মনিরামপুরে টিসিবির তালিকা নিয়ে বাকবিতণ্ডায় এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে নারী ইউপি সদস্যকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত শরিফুল ইসলাম উপজেলার খানপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী নারী।
উন্মুক্ত’ টিসিবি পণ্য বিতরণ, খালি হাতে ফিরেছেন অনেকে :
যশোরে উন্মুক্তভাবে (শুধু ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ভিত্তিতে) টিসিবি পণ্য বিতরণে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন অনেকেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে পণ্য না পেয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন তারা। আবার কয়েক জায়গায় বিশৃঙ্খলা হওয়ায় পণ্য বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। যশোরের আট উপজেলা ও পৌরসভার ১৮৩টি স্থানে টিসিবির পণ্য বিতরণের কথা ছিল।
পণ্য ভাগাভাগি :
যশোর সদর উপজেলার উপশহর ইউনিয়নে টিসিবির পণ্য ভাগাভাগির অভিযোগ উঠেছে। ৯১৭ কার্ডের মধ্যে বিএনপি, জামায়াত ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা মিলে ৪৬০টি কার্ডের পণ্য ভাগ করে নেয়। এ সময় এই অনিয়মের প্রতিবাদে কার্ডধারীরা হট্টগোল করে। ২৫ ফেব্রুয়ারি উপশহর ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে। ইউনিয়ন পরিষদের সচিব দ্বীপ জানান, সংশ্লিষ্ট ডিলার উপশহর ইউনিয়নের ৯১৭ কার্ডধারীর মাঝে টিসিবি পণ্য বিতরণের জন্য আসেন। কিন্তু পণ্য বিতরণের আগেই ৪৬০ কার্ডের পণ্য ভাগাভাগি হয়ে যায়। এরমধ্যে বিএনপি ৩০০, জামায়াত ১০০ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা ৬০টি কার্ডের পণ্য নেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার। এ সময় তিনি প্রকৃত কার্ডধারীকে টিসিবি পণ্য দেয়ার নির্দেশ দেন। নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পর স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা পরিষদে এসে পণ্য বিতরণ বন্ধ করে দেন। পরে মাইকিং করে পণ্য বিতরণের দিন জানিয়ে দেয়া হবে বলে তাদের পাঠিয়ে দেন।
খোলা ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রি :
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যশোর শহরে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকসেল কার্যক্রম শুরু করেছে টিসিবি। শহরের ৫টি স্পটে এই ট্রাকসেল কার্যক্রম শুরু হয়েছে। স্পটগুলো হলো- নবকিশালয় স্কুলের সামনে, দুদক অফিসের সামনে, রেলরোড সোনালী ব্যাংক করপোরেট শাখার পাশে, মণিহার চত্ত্বর ও খাজুরা স্ট্যান্ড মোড়। একেকজন ৪৫০ টাকার প্রতি প্যাকেজে পাচ্ছেন দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি মশুর ডাল, এক কেজি চিনি ও এক কেজি ছোলা। ছুটির দিন বাদে পুরো রমজান মাসজুড়ে মোট ১৯ দিন এভাবে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হবে।
যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, যারা কার্ডধারী তারাই পণ্য পাবেন। কার্ডধারীরা উপস্থিত না থাকলে ভোটার আইডি কার্ডধারী ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকলে তাদের পণ্য দেওয়া হবে। যেসব উপজেলায় স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম শেষ হয়নি ১৫ মার্চের মধ্যে কার্যক্রম শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপর পুরোদমে ফ্যামেলি কার্ডে টিসিবি কার্যক্রম শুরু হবে।