নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের ডাকাতিয়ায় সেচ প্রকল্পের ১৬ সদস্যের সাথে প্রতারণা করে সম্পাদক নিজের নামে গভীর নলকুপ করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিক্ষুব্ধ সদস্যদের পক্ষে সভাপতি ইজাহার আলী আদালতে দুটি মামলা করা ছাড়াও উপজেলা নির্বাহী কর্মকতার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন সম্পাদক বজলুর রহমান গংয়ের বিরুদ্ধে। একই সাথে অভিযোগ করা হয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনেও।
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাখিল করা মামলায় বজলুর রহমান ছাড়াও এলাকার বোরহান উদ্দিন টিটো, শামসুজ্জমান লিটন ও লাল্টুকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, মূল বোরিং পাশ কাটিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বজলুর রহমান একটু দূরে নতুন বোরিং করে নিজের নামে গভীর নলকুপের লাইসেন্স করেছেন। ওই লাইসেন্স বাতিলেরও দাবি তোলা হয়েছে। আদালতে করা মামলা দুটির একটি তদন্ত করছে পিবিআই যশোর ও একটি তদন্ত করছে যশোর কোতোয়ালি থানার পুলিশ। এছাড়া ভূমি সংক্রান্ত অংশ তদন্ত করছে যশোর সদর উপজেলা ভূমি বিভাগ।
আদালতে দেয়া দুটি মামলা ও বিভিন্ন দপ্তরে দেয়া অভিযোগ থেকে তথ্য মিলেছে, ডাকাতিয়া এলাকায় সেচ প্রকল্পের আওতায় ১৮ সদস্যের একটি কমিটি করে সমিতির মাধ্যমে ১৬০ বিঘা জমি চাষাবাদ করা হচ্ছিল। এলাকার ইজাহার আলীকে সভাপতি ও বজলুর রহমানকে সম্পাদক করে চলছিল ১৮ সদস্যের ওই সেচ প্রকল্পের কমিটি। জমিতে সেচের জন্য সভাপতি ইজাহার আলীর বৈধ ভোগদখলীয় জমিতে গভীর নলকুপ স্থাপন করে চাষাবাদ চলে আসছিল ২০০৬ সাল থেকে। কিন্তু সম্পাদক বজলুর রহমান তঞ্চকতার আশ্রয় নিয়ে সুকৌশলে গোপনে সমিতির নাম ব্যবহার না করে নিজের নামে বিদ্যুৎ সংযোগ নেন। বিষয়টি সমিতির লোকজন জেনে গেলে তিনি শালিসে একটি সাদা কাগজে অঙ্গীকার করেন সমিতির সদস্যদের জমাকৃত ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা খরচ করে বিদ্যুৎ লাইনটি তার নিজের নামে করে নিয়েছেন এবং সমিতির নাম ব্যবহার না করে ভুল করেছেন। এজন্য তিনি সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করেন। এই গভীর নলকুপটিতে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ লাইন, মিটার বিদ্যুতের সেচ অগ্রীম অর্থ প্রদানে তার কোনো অধিকার থাকবে না, এটা সমিতির আওতাভুক্ত সংযোগ। এরপর হঠাৎ বজলুর রহমান সরকারি দপ্তরকে ম্যানেজ করে গভীর নলকুপটি অকেজো দেখিয়ে ভু-গর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১৮ ভুলুণ্ঠিত করে একটু দূরে (২০০ গজ দুরত্বে) গোপনে আর একটি গভীর নলকুপ স্থাপনের জন্য লাইসেন্স বের করেছেন। এখানেই শেষ নয়, মূল সমিতির গভীর নলকুপটির বিদ্যুৎ লাইন কেটে নিজের নতুন নলকুপে আনার অপচেষ্টা করছেন।
এদিকে সভাপতি ইজহার আলীর নেতৃত্বে এলাকাবাসীর মূল গভীর নলকুপের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সেচ কার্য পরিচালনা করছেন। চলমান কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে বজলুর রহমানকে বাধ সাধায় মূল নলকুপের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে নেয়ার চেষ্টা করেন এবং ইজাহার আলীর ও সমিতির সদস্যদের খুন জখমের হুমকি দেন।
এদিকে, বজলুর রহমানের নলকুপকে অবৈধ ও বিধি বহির্ভূত দাবি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০০৫ সালে যৌথভাবে কৃষি কাজের সুবিধার্থে (সেচ প্রকল্পে) হাজী ইজাহার আলীর জমিতে (দাগ নং-এস এ- ১০৫, জরিপ ১৩৫ দাগ) একটি গভীর নলকুপ স্থাপন করা হয়। অদ্যাবধি ওই নলকূপের সভাপতি ইজাহার আলী ও সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান। কিন্তু ইজাহার আলীর জমির কাগজপত্র গোপন করে নিজের জমির কাগজপত্র পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে জমা দিয়ে নিজ নামে বিদ্যুৎ লাইন পাওয়ার আবেদন করেছেন বজলুর রহমান। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মূল নলকুপটি অকেজো ও পরিত্যক্ত দেখিয়ে যে লাইসেন্স নিয়েছেন তা সবই সমিতির সকল সদস্যদের অজ্ঞাতে। মূল নলকুপ থেকে মাত্র ২শ’ গজের মধ্যে বজলুর রহমান একটি গভীর নলকুপ স্থাপন করেছেন যা সম্পূর্ণ অবৈধ।
সমিতির সভাপতি ভুক্তভোগী ইজাহার আলী বলেন, বজলুর রহমানের কারণে এলাকার সাধারণ কৃষকরা আতংকে রয়েছেন। আসছে মৌসুমে ধান আবাদ করতে না পারার শঙ্কায় রয়েছেন। কাজেই ২০০৬ সালের মূল নলকুপটির লাইসেন্স প্রদান করতে হবে আর বজলুর তঞ্চকতাপূর্ণ লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। ঘটনা তদন্তে পিবিআই যশোরের ইনসেপেক্টর হিরন্ময় সরকার হিরন তদন্ত করে গেছেন।
এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে বজলুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, অযথা মামলা করে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। প্রতারণার কোনো ঘটনা ঘটেনি।