নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ তীব্র আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালে রোগীর চাপে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। আবার দেখা দিয়েছে স্যালাইনের সংকট। কয়েক দিনে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মাত্র একটি স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই সুযোগে হাসপাতালের সামনের ওষুধের দোকানগুলোতে বেশি দামে স্যালাইন বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন রোগীর স্বজনরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় এ হাসপাতালে ১৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। ৬০ শয্যা ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৮০ জন। পর্যাপ্ত বেড না থাকাতে অনেক রোগীর শয্যা হয়েছে মেঝেতে। রোগীর চিকিৎসা দিতে যেয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। পাশাপাশি বেশি সংকট দেখা দিয়েছে স্যালাইনের। রোগীদের চিকিৎসার জন্য চাহিদা বেড়েছে এনএস এবং ডিএনএস স্যালাইনের। চাহিদা অনুসারে বাজারে সরবরাহ না থাকায় দেখা দিয়েছে এসব স্যালাইনের সংকট।
শহরের রেলগেট এলাকার বাসিন্দা নজরুল হোসেন নামে এক রোগী বলেন, তাদের বাসা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে সব সময়। তবে বাসার কাছে রেলগেটসংলগ্ন এলাকায় কোনো কিছুর নির্মাণকাজ চলছে। সেখানে ময়লা ও পানি জমে থাকায় মশার জন্ম হচ্ছে। সেখান থেকেই আক্রান্ত হতে পারি। ডেঙ্গু আক্রান্ত সদরের চুড়ামনকাটি এলাকার তহমিনা খাতুন গত দুই দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে না। গত দুই দিনে মাত্র একটা স্যালাইন দেয়া হয়েছে। দোকানে গেলে বলে স্যালাইন নাই। অনেক খুঁজে পেলেও ৮৭ টাকার স্যালাইন বিক্রি করে ১৫০ টাকায়।’ হাসপাতালের মুখপাত্র ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. পার্থ প্রতীম চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘শয্যার বিপরীতে অনেক রোগী। বলা যায় হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ডেঙ্গু রোগীর জন্য যে মেডিসিন চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিচ্ছে তারা আবার অন্য ওয়ার্ডেও রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে। ফলে সাধারণ রোগী ও ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দিতে যেয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। পাশাপাশি নরমাল স্যালাইনের সংকট রয়েছে। আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। আর চিকিৎসক সংকটে উপজেলা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নিচ্ছি।
যশোর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন ওষুধের ফার্মেসিতে চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না স্যালাইন। যেসব ফার্মেসিতে পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে আবার একটির বেশি কিনতে পারছেন না রোগীর স্বজনরা। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছেন হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু আক্রান্তসহ অন্যান্য রোগী ও তাদের স্বজনেরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণত বাজারে ওরিয়ন ফার্মা, পপুলার ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা, অপসো স্যালাইন, লিব্রা ইনফিউশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো স্যালাইন উৎপাদন করে। তবে বর্তমানে বাজারে এসব কোম্পানির স্যালাইন তেমন সরবরাহ নেই বলে জানিয়েছেন ফার্মেসি মালিকরা।
যশোরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের হার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। জেলায় সবচেয়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ যশোর সদর ও অভয়নগর উপজেলাতে। রবিবার সকাল ১০ থেকে সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪৬ জন আক্রান্ত হয়েছে। এনিয়ে জেলা এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ৭৭৭ জন। আর মৃত্যুর সংখ্যা ৬। যশোর স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, গত দুই মাস ধরে প্রতিদিন জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ নিচে নামছে না। ঢাকার বাইরে দেশের যে ৭ জেলায় এডিস মশার দাপট দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে যশোরও রয়েছে।
এদিকে, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ তো দূরের কথা সাধারণ মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ থাকলেও তা নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ নেই যশোর পৌরসভা কর্তৃপক্ষের। সারা বছর মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ থাকলেও তা দেখার কেউ নেই বলে দাবি শহরবাসীর। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে মশক নিয়ন্ত্রণে তাদের কার্যক্রমের সঙ্গে কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছেন না নাগরিকরা। তাদের মতে, মশক নিয়ন্ত্রণে নেয়া কোনো পদক্ষেপই নজরে আসেনি। সচেতন শহরবাসীর দাবি, এখনই মশা নির্মূলে ব্যবস্থা না নিলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শহরের স্টেডিয়াম পাড়ার বাসিন্দা সেলিম হোসেন বলেন, দিনেও কয়েল জ্বালিয়ে ও মশারি টানিয়ে ঘরে থাকতে হয়। বাসায় কিছু সময় এক স্থানে বসে থাকলে হাত ও পা থেকে মশা ঝেড়ে ফেলতে হয়। এ অবস্থায়ও কখনো পৌরসভার কোনো কর্মীকে মশা মারার ওষুধ ছিটাতে দেখিনি।’
যশোর পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা উত্তম কুন্ডু বলেন, পৌরসভা নিয়মিত মশা নিধন কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। এটা নিয়ন্ত্রণ করা পৌরসভার একার কাজ না। দরকার শহরবাসীর সচেতন হওয়া।