শাহারুল ইসলাম ফারদিন
ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে থাকা যশোরে মশা নিধনে স্প্রে বা এডিশ মশার লার্ভা ধ্বংসে প্রত্যাশিত তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ করেছেন শহরবাসী। তারা বলছেন, ইতোমধ্যে সদর ও অভয়নগরসহ কয়েক এলাকায় ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হলেও মশার লার্ভা ধ্বংসে অভিযান চালানো হয়নি। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্য বিভাগ যশোর সদর ও অভয়নগর উপজেলাকে ডেঙ্গুর ‘রেড জোন’ ঘোষণা করেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুধু হাকডাকই বেশি শোনা যাচ্ছে। যদিও সোমবার যশোর শহরের ৬ নং ওয়ার্ডের কিছু স্থানে মশা নিধনে স্প্রে করা হয়েছে মাত্র। কিন্তু ৯টি ওয়ার্ডে একসঙ্গে মশক নিধন কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় সুফল আসবে না বলে মনে করছেন শহরবাসী।
অবশ্য যশোর পৌরসভার মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার গনি খান পলাশ জানিয়েছেন, চলতি মাসের শেষে ৯টি ওয়ার্ডে একসঙ্গে মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করা হবে। ডেঙ্গু ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে পৌরসভার উদ্যোগে প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সেই সাথে মশা নিধন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
ভারত থেকে উন্নতমানের মশার স্প্রে ও এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসের ওষুধ ক্রয় করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ওষুধ চলে আসবে- উত্তম কুমার কুন্ডু, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, যশোর পৌরসভা
এদিকে, খুলনা বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২২ জন ডেঙ্গু রোগী সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বিভাগের মধ্যে যশোর ও নড়াইল জেলায় বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য বিভাগ যশোর সদর ও অভয়নগর উপজেলাকে ডেঙ্গুর ‘রেড জোন’ ঘোষণা করেছে।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মনজুরুল মুর্শিদ জানান, এ পর্যন্ত খুলনা বিভাগে ডেঙ্গুতে কেউ মারা যাননি। যশোর ও নড়াইল জেলায় ডেঙ্গু রোগী বেশি। তাই যশোরের দুটি উপজেলাকে ডেঙ্গুর রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে। বিভাগের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুমুক্ত রয়েছে।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের মধ্যে মাগুরায় ৬ জন, যশোরে ৫ জন, কুষ্টিয়ায় ৪ জন, খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন, খুলনায় ২ জন, নড়াইলে একজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত যশোরে ৮৫ জন, নড়াইলে ৬১ জন আক্রান্ত হয়েছে।
যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক বলেন, ‘যশোরে দ্রুতগতিতে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। এ কারণে বেশি রোগী শনাক্ত হওয়ায় সদর এবং অভয়নগর উপজেলাকে ডেঙ্গুর ‘রেড জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
যশোর ও নড়াইল জেলায় ডেঙ্গু রোগী বেশি। তাই যশোর সদর ও অভয়নগর উপজেলাকে ডেঙ্গুর রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে। ডা. মনজুরুল মুর্শিদ, পরিচালক, খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক
যশোর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত জুন মাসের শেষ নাগাদ যশোরে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু হয়। ১ জুলাই থেকে এ পরিস্থিতি মনিটরিং শুরু করে স্বাস্থ্য বিভাগ।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. পার্থ প্রতিম চক্রবর্তী জানান, বর্তমানে জেনারেল হাসপাতালে নয় জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৭ জন এবং নারী ২ জন। রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। প্রয়োজনে হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডকে রেড জোন হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
এদিকে যশোর সদরে রেড জোন ঘোষণা করা হলেও মশা নিধনের তৎপরতা নিয়ে হতাশ শহরবাসী। শহরের জেল রোড এলাকার বাসিন্দা শিউলি বেগম বলেন, তাদের এলাকায় কখনো মশার ওষুধ ছিটানো হয়নি। মশার ওষুধ শেষ কবে আমাদের এলাকায় দিয়েছে আমরা কেউ বলতে পারি না। শহরের স্টেডিয়াম এলাকার বাসিন্দা হাসানুজ্জামান বলেন, হাসপাতালে রোগী ভর্তির কারণে জানতে পারছি জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকায় মশা নিধনের কোনো কার্যক্রম কারও নজরে পড়েনি।
যশোর পৌরসভার তথ্য মতে, পৌরসভার উদ্যোগে শহরে চলতি বছরের মার্চ মাসের মাঝামাঝি আট দিনের মশা নিধনের অভিযান চালানো হয়। চলতি মাসের শেষে ৯টি ওয়ার্ডে একযোগে মশা নিধন ও এডিস লার্ভা ধ্বংসের অভিযান চালানো হবে। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ওয়ার্ডের নাগরিকগণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওইসব এলাকায় মশা নিধন স্প্রে করা হয়েছে।
যশোর পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা উত্তম কুমার কুন্ডু জানান, গত সপ্তাহ থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় মশকনিধনে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য পৌরসভার ২০টি মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি ব্যাটারিচালিত এবং দুটি ফগার মেশিন। সেই সাথে এবার ভারত থেকে উন্নতমানের মশার স্প্রে ও এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসের ওষুধ ক্রয় করা হচ্ছে। যা পরীক্ষামূলক অল্প কিছু আসছিলো। আগামী সপ্তাহের মধ্যে পুরো ওষুধের চালান চলে আসবে বলে আশ করছি। ওষুধ হাতে পাওয়া মাত্রই ৯টি ওয়ার্ডে একসঙ্গে মশক নিধন ও লার্ভা ধ্বংসের কার্যক্রম শরু করা হবে।
