নানা সাজ-সজ্জা আর রঙিন আলোর ঝলকানিতে অন্যরকম পরিবেশ
পাপিয়া মল্লিক
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আজ মহাঅষ্টমী। সারা দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজামণ্ডপগুলোতে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় পূজা-অর্চণার মাধ্যমে উদযাপন করবে দিনটি।
মহাঅষ্টমীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ হল কুমারী পূজা। এই দিনে এক থেকে ষোলো বছর বয়সী কুমারী কন্যাদের জীবন্ত প্রতিমা হিসেবে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
কুমারী পূজার সাথে সাথে দেবীর অস্ত্রপূজা, সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনে দেবী চণ্ড ও মুণ্ড এবং রক্তবীজকে পরাজিত করার জন্য চামুণ্ডা রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই দিনে অঞ্জলি প্রদান করে দেবী দুর্গার আশীর্বাদ লাভ করে।
দর্শনার্থী পলাশ সাহা জানান, পূজার ছুটিতে বাড়ি এসেছি। পূজার এই কয়েকদিন পরিবারের সাথে সময় কাটাবে।
দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে যশোর শহরের বেজপাড়া, বকচর, রামকৃষ্ণ আশ্রম, নীলগঞ্জ, রায়বাড়ি, ষষ্ঠীতলা, শ্রীধর পুকুর পাড় ও বেজপাড়া বয়েজ ক্লাবসহ বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গেছে অগণিত মানুষের ঢল। কেউ প্রতিমা দেখার জন্য ব্যস্ত। আবার কেউ কেউ ছবি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সেই সঙ্গে দেখা গিয়েছে মণ্ডপ ঘিরে নানা সাজ-সজ্জা; রঙিন আলোর ঝলকানি।
দর্শনার্থী শ্রেয়া ঘোস জানান, দুর্গাপূজা মানে প্রচুর ঘোরাঘুরি করা। হেঁটে হেঁটে মন্ডপে মন্ডপে ঠাকুর দেখা, খাওয়া দাওয়া, বন্ধুদের সাথে আড্ডা। তাছাড়া এই পাঁচটি দিন খুব আনন্দের সাথে কাটাবো।
দুর্গাপূজা একটি বিশেষ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। আশ্বিন বা চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে দুর্গাপূজা করা হয়। আশ্বিন মাসের দুর্গাপূজা শারদীয় দুর্গাপূজা এবং চৈত্র মাসের দুর্গাপূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা নামে পরিচিত।
নীলগঞ্জে আসা নিপা বিশ্বাস নামে এক দর্শনার্থী জানান, পরিবারের সাথে এসেছি। পূজার দিনে পরিবারের সবার সাথে সময় কাটানোর মধ্যে একটা শান্তি অনুভব করছি। সময়টা খুব ভালো কাটছে।
অস্ত্রপূজা ও দেবীর শক্তি: দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথি দেবী দুর্গার শক্তির প্রকাশকে উদযাপন করে। এই দিনে দেবীর অস্ত্রপূজা করা হয়, যা দেবীর শক্তি ও বিজয়কে স্মরণ করে।
চামুণ্ডা রূপে দেবীর আবির্ভাব: বিশ্বাস করা হয়, এই দিন দেবী দুর্গার কপাল থেকে চামুণ্ডা রূপে দেবী আবির্ভূত হন এবং মহিষাসুরের দুই সহযোগী অসুর চণ্ড ও মুণ্ড এবং রক্তবীজকে বিনাশ করেন।
সন্ধিপূজা ও অঞ্জলি: অষ্টমী ও নবমীর সংযোগ সন্ধিক্ষণে অর্থাৎ সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই বিশেষ দিনে ভক্তরা নিরামিষ ভোজন করে দেবীর উদ্দেশ্যে অঞ্জলি দেন।
এছাড়া মণ্ডপগুলো ঘুরে দেখা গিয়েছে বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের খেলনার দোকান, খাবারের দেকানসহ ধর্মের বিভিন্ন ধরনের বই। বিকাল থেকেই দেখা যায় রাস্তার যানজট। কেউ মোটরসাইকেল কেউ রিক্সা আবার কেউ প্রাইভেট গাড়িতে করে। এসব যানজট কাটিয়ে দর্শনার্থীরা পায়ে হেটে হেটে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরছেন।
পাঁচ দিনের এ উৎসব শেষ হবে আগামী ২ অক্টোবর বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। এবার দেবী দুর্গার আগমন হয়েছে হাতির পিঠে চড়ে। আর দশমীতে দেবী মর্ত্যলোক ছাড়বেন দোলা বা পালকিতে চড়ে। দুর্গাপূজা আয়োজনের ক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
