জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
যশোরে সরকারিভাবে আমন ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। সংগ্রহ অভিযানের দেড় মাসের বেশি সময় পার হলেও এক ছটাকও আমন ধান দেয়নি কৃষক। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে খোলা বাজারে দর বেশি পেয়ে সরকারি গুদামমুখী হয়নি কৃষক। তবে কিছু চাল সংগ্রহ করা হয়েছে; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুন্ডু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জেলা খাদ্য অফিস মতে, সরকারিভাবে ২৮ টাকা কেজি দরে আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৯৯৮ মেট্রিক টন। ৪২ টাকা দরে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৯৯৯ মেট্রিক টন। গত ১৭ নভেম্বর থেকে সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়, যা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারি। এ হিসেবে দেড় মাসের বেশি সময় পার হয়েছে। কিন্তু এক ছটাক ধানও দেয়নি কৃষক।
চালের চুক্তি হয়েছে ৭ হাজার ৩২ মেট্রিক টন। গতকাল ২ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি গুদামে চাল উঠেছে ৩ হাজার ২৩২ মেট্রিক টন। যা অর্ধেকের কম। যেহেতু লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। সেকারণে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চাইলে সময় আরো বাড়াতে পারেন।
এরআগে খাদ্য গুদামে ধান-চাল বিক্রিতে কৃষক যাতে উদ্বুদ্ধ হয়, সে লক্ষ্যে খাদ্য বিভাগ মাইকিং, পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করে। ঘোষণা দেয়া হয়-একজন কৃষক সর্বনিম্ন ১২০ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ৩ মেট্রিকটন পর্যন্ত ধান বিক্রি করতে পারবেন সরকারি গুদামে।
খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের হিসাব মতে, যশোর সদর, কেশবপুর, চৌগাছা, ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার কৃষকরা অ্যাপের মাধ্যমে এবং বাঘারপাড়া ও অভয়নগরের কৃষকরা আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তি ধান-চাল বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন। এবার ১৪ শতাংশের নিচের আর্দ্রতার ধান কেনার ঘোষণাও দেয় খাদ্য বিভাগ।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ধান-চাল বিক্রির টাকা লেনদেনে কোনো ঝামেলা নেই। কৃষকদের কার্ড রয়েছে। কার্ডে কৃষকের নাম, পরিচয় ও তার চাষাবাদ জমির পরিমাণসহ বিস্তারিত তথ্য দেয়া আছে। কার্ডধারী কৃষকের ১০ টাকায় খোলা ব্যাংকে একাউন্ট রয়েছে। সরকারি গুদামে ধান ও চাল বিক্রির টাকা ওই ব্যাংক হিসেবে জমা হয়। কৃষক যখন খুশি তখন টাকা তুলতে পারেন। সবমিলিয়ে সরকারি গুদামে ধান-চাল বিক্রিতে অনিয়ম-দুর্নীতি করার জিরো পার্সেন্ট সুযোগ নেই।
এতসব সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও কৃষকের সাড়া না দেয়ার কারণ হিসেবে জানা যায়-সরকার ধানের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ২৮ টাকা কেজি অর্থাৎ ১১২০ টাকা মণ কিন্তু খোলা বাজারে ধান বিক্রি হচ্ছে ১২শ টাকার উপরে। চিকন ধানের দাম আরো বেশি। অন্যদিকে, চালের দাম ৪২ টাকা কেজি অর্থাৎ ১৬৮০ টাকা মণ ধরা হয়েছে কিন্তু খোলাবাজারে চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৪৩ টাকা। চিকন চালের দাম ৫০ টাকার উপরে। যেকারণে খাদ্যগুদামে ধান-চাল বিক্রিতে আগ্রহ হারিয়েছেন কৃষক।
মকবুল হোসেন নামে এক কৃষক জানান, সরকারি গুদামে ধান-চাল বিক্রিতে ঝামেলা নেই। বরং অনেক সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সরকার যে দাম দিচ্ছে, তা খোলাবাজারের চেয়ে অনেক কম। বাড়ির আশপাশের বাজারে ধান-চাল পৌছাতে পরিবহন খরচ পড়ে একদমই কম। যা গুদামে পৌঁছাতে পরিবহন খরচ পড়ে যায় কয়েকগুণ বেশি। সবমিলিয়ে বাজারে ধান-চাল বিক্রি করে বেশকিছু টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।
যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুন্ডু দৈনিক কল্যাণকে বলেন, এখন পর্যন্ত ধান কেনা সম্ভব হয়নি। খোলাবাজারে ধান-চালের দাম বেশি পেয়ে কৃষক সরকারি গুদামমুখী হচ্ছে না। তবে ৭ হাজার ৩২ মেট্রিকটন চালের চুক্তি করা সম্ভব হয়েছে। এরমধ্যে ৩ হাজার ২৫৮ মেট্রিকটন চাল গুদামে উঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বাজারে ধান-চালের দাম কমতে শুরু করেছে। সরকারি গুদামে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধান-চাল কেনা হবে। লক্ষ্যমাত্রা ভেস্তে গেছে; এখনি তা বলা উচিত হবে না।
আরও পড়ুন: যশোরাঞ্চলের ৬ জেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষা আবাদ