সুনীল ঘোষ: একদণ্ড বিশ্রামের সুযোগ নেই কৃষকের। অনাবৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে কম ক্ষতি হয়নি রোপা আমনের। তবে ক্ষতির চিন্তা ভুলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন যশোরের অর্ধলক্ষাধিক কৃষক। পাকা ধান ঘরে রেখে কৃষক-শ্রমিক বোরোর বীজতলা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রোপা আমন ধান কেটে ঘরে তুলছেন কৃষক। গন্ধ ছড়াচ্ছে পাকা ধান। আশানুরুপ ফলন না হলেও কৃষকদের সারা বছরের খাবার রোপা আমন নিয়ে উৎসবের ঘাটতি নেই। গ্রামে গ্রামে চলছে নবান্নের উৎসব। অনাবৃষ্টির কারণে সেচনির্ভর ছিল রোপা আমন চাষ।
সেই সাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাচা-আধা পাকা ধানের বেশ ক্ষতি করেছে। এর ফলে বাড়তি খরচ হয়েছে। দায়-দেনা গ্রস্ত হয়েছেন অনেক চাষি। কিন্তু রোপা আমনের ক্ষতি কৃষকের মনোবল ভাঙতে পারেনি। নবান্নের উৎসবে মেতেছেন চাষি পরিবার। ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েস তৈরির ধুম লেগে গেছে। জামাই-মেয়েসহ আত্মীয়-স্বজনের আসা-যাওয়া নবান্নের উৎসবে রূপ দিয়েছে নতুন মাত্রা।
যশোর কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চাষিরা রোপা আমন ঘরে তুলেই মাঠে নেমে পড়েছে রবি মৌসুমে বোরো ধানের বীজতলা তৈরির কাজে। এরমধ্যে জেলার অর্ধলাখের বেশি কৃষক সরকারি প্রণোদনার হাইব্রিড ও উফশী ধানের বীজ পেয়েছেন। বীজতলা তৈরি ও ক্ষেত প্রস্ততে পটাশ ও ডিএপি সারও দিয়েছে সরকার।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মইনুল ইসলাম জানান, এবার জেলার ৮ উপজেলায় এক হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও ৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে উফশী ধানের বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাষি এখন বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। রবি মৌসুমে দুই প্রজাতির ধান চাষ হবে ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে। কোনো রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ যদি না হয়, তাহলে ৭ লাখ ১৬ হাজার ৬২৮ মণ ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
যশোর সদরের কাশিমপুর গ্রামের রইচ উদ্দিন জানান, এবার রোপা আমন ছিল পুরো সেচ নির্ভর। আশানুরুপ ফলন হয়নি। কিন্তু এসব চিন্তা করে লাভ নেই। চাষ করেই খেতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ধান কেটেই বোরোর বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। কৃষকের একদণ্ড বিশ্রামের সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন রইচ।
সুবলকাঠি গ্রামের কৃষক গৌতম কুন্ড বলেন, রোপা আমনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বোরোর বীজতলা তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে। এরমধ্যে সরকারি প্রণোদনার বীজ ও সার পেয়ে গেছেন চাষিরা। তিনি বলেন, চাষে লাভ-লোকসান হবে। কিন্তু সবকিছু ভুলে ফসল উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক দৈনিক কল্যাণকে বলেন, ইতিমধ্যে যশোরের ২৪ হাজার কৃষক হাইব্রিড জাতের দুই কেজি করে বোরো ধানের বীজ পেয়েছেন। জেলার ৩৬ হাজার কৃষক ৫ কেজি করে উফশী জাতের ধান বীজ পেয়েছেন। একই সাথে পটাশ ও ডিএপি সার বিতরণ করা হয়েছে। এর বাইরে মাসকলাই, গম ও ভুট্টার বীজ ও সার পেয়েছেন কৃষক।