শাহারুল ইসলাম ফারদিন
যশোরে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। প্রতিদিন গড়ে শতাধিক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকরা। এদিকে, সুযোগ পেয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলো সিএস স্যালাইন (কলেরা স্যালাইন) ‘সাপ্লাই বন্ধ’ করে দিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন রোগী ও স্বজনরা। যে দু-একটি দোকানে স্যালাইন মিলছে সেখানে ৯০ টাকার পরিবর্তে নেয়া হচ্ছে ১২০-২০০ টাকা পর্যন্ত।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড ঘুরে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি। প্রচণ্ড গরমের কারণে রমজান মাসের শুরু থেকে যশোরে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। গত ২ এপ্রিল ঢাকা রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) থেকে ৪ সদস্যের একটি গবেষক দল যশোরে আসেন। তারা শহরের পৌরসভার ধর্মতলা ও আরবপুর এবং শংকরপুর ও খুলনা স্ট্যান্ড এলাকার পানি এবং হাসপাতালের ভর্তি রোগীর শরীর থেকে আলামত সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। তবে এখনো পর্যন্ত সে রিপোর্ট দেয়নি।
হাসপাতালের রেজিস্ট্রার মতে, ২৯ এপ্রিল শনিবার হাসপাতালে দুপুর পর্যন্ত ৫৬ জন ভর্তি ছিলো। এর মধ্যে শিশু ১৪, মহিলা ২১ ও পুরুষ ২১ জন। এছাড়াও গত ত্রিশ দিনে প্রায় সাড়ে ১১শ রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রতিদিন ভর্তি থাকছেন ৬০ থেকে ৭৫ জন। ছাড়পত্র দেয়ার পর সংক্রামক ওয়ার্ডে দিনের প্রথম পর্বে রোগী থাকছেন ৫০ থেকে ৬০ জন। রাত হতে না হতেই ভর্তি রোগীর সংখ্যা হচ্ছে ৭০ হতে ৭৫ জন।
সদরের রাজারহাট রামনগরের আব্দুর রহিম জানান, ওয়ার্ডে প্রতিটি বেডের বিপরীতে ১৪ থেকে ১৫ জন রোগী থাকায় তারা ওয়ার্ডের মেঝে, করিডোরে ও চলাচলের পথে বিছানা করে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যেখানে ফ্যান পর্যন্ত নেই। চরম দুর্ভোগের মধ্যে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। আব্দুর রহিমসহ হাসপাতালে ভর্তি অন্য ডায়রিয়া রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, এ ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স সামসুন্নাহারসহ অধিকাংশ নার্সদের ব্যবহার চরম পর্যায়ে খারাপ। এছাড়াও হাসপাতালে পর্যাপ্ত কলেরা স্যালাইন না থাকায় হাসপাতালের সামনে থেকে বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে স্যালাইন। হাসপাতাল থেকে ১টা দিয়ে নার্সরা বলে বাকি গুলি কিনে আনতে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগে হাসপাতালের বাইরের ওষুধের দোকানগুলো বেশি দামে স্যালাইন বিক্রি করছে। ৯০ টাকার স্যালাইন কারও কাছে চাওয়া হচ্ছে ১২০ বা ১৩০ টাকা, কারও কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ২০০ টাকাও। হাসপাতালে সামনের ওষুধের দোকানের মালিকরা বলছেন সাপ্লাই নেই। তাই পাশের দোকান থেকে এনে দেওয়া লাগছে তাই দাম একটু বেশি। তবে সেই পাশের দোকান আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত নার্স ও সংশ্লিষ্টরা জানান, এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ১২০ থেকে ১৩০জন রোগী ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিচ্ছে। জরুরি বিভাগে রোগীদের ভিড় বাড়ছে। সেখান থেকে চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপত্র দিয়ে রোগীদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আর গুরুতর রোগীদের ভর্তি করে পাঠানো হচ্ছে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে। চিকিৎসার পর রোগীর অবস্থা ভালো হলে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে স্যালাইন ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনজেকশন ও ওষুধ মজুদ থাকলেও মাত্র ৫ বেডের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে এত রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকরা।
যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আব্দুস সামাদ জানান, হঠাৎ করে আবহাওয়ার পরিবর্ত ও রোজা শেষে খাবারের পরিবর্তন হওয়ায় বেশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়রিয়া সাধারণত পঁচাবাসি, ভেজাল খাবার ও দূষিত পানি থেকে হয়। আবার প্রচণ্ড গরমে লোকজন আক্রান্ত হয় ডায়রিয়ায়। তবে সবাই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন-অর-রশীদ জানান, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। সব রোগীকে যথাযথ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ ও ইনজেকশন মজুদ আছে। তবে কলেরা স্যালাইনের সংকট রয়েছে। যা আগামী ২ মে হতে এ সংকট কেটে যাবে।