নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে নিরব চাঁদাবাজি, যানজট, অবৈধ স্থাপনা-যানবাহন ও ক্লিনিকসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে আলোচনা করা হয়েছে। রোববার সকালে কালেক্টরেটের অমিত্রাক্ষরে অনুষ্ঠিত জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, পুরাতন গাড়ি জব্দের বিষয়ে আমাদের অভিযান চলছে। সরকারি জায়গা থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। ১৫ সেপ্টেম্বর ঝিকরগাছায় অভিযান চালিয়ে বড় সরকারি জায়গা থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হবে। আমাদের সরকারি অফিসে যেই যোগ দিবেন তার বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্ট করতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য মাদক থেকে যুব সমাজকে বিরত রাখা। এছাড়া দোকানের সামনে কোনো ধরণের মালামাল থাকবে না। রাস্তা পুরোপুরি পরিস্কার রাখতে হবে।
আলোচনায় সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের সাবেক অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যশোরে মাদকের প্রভাব বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে শহর ও শহরতলীর বিনোদন স্পটগুলোতে শিক্ষার্থীরা মাদক নিচ্ছে। তিনি অভিমানের সুরে বলেন, এরা কি কোনো পরিবারের নাকি ইয়াতিমখানার। স্কুল কলেজ চলাকালীন সময়ে ডিসি অফিস, পৌরপার্কে ছেলেমেয়েরা বসে থাকে। কলেজের সময় শেষ হলে বাড়ি চলে যায়। এসব ছেলেমেয়েদের ধরে অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।
জেলা বিএনপির সভাপতি ও পিপি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা ৯০ দিনের মধ্যে খারিজ করতে হয়। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার অভাবে আসামি খালাস পেয়ে যাচ্ছে। এছাড়া নাশকতা মামলায় একই মামলায় একই আসামিকে দুই বার গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। যারা সমাজের জন্য হুমকি তাদের জেলের ভিতরে একটু বেশি সময় রাখা উচিৎ। কিন্তু পিসিআর এর অভাবে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে তিনি বলেন, চ্যালেন্স সামনে দুর্গাপূজা। দুই বছর আগের যশোরের চিত্র আর এখনকার চিত্র ভিন্ন। ব্যবসায়িকভাবে রিকসা ইজিবাইক তৈরি করে রাস্তায় নামানোর প্রবণতা বেড়েছে। এটা রোধে কোনা প্রক্রিয়া আছে কিনা দেখা দরকার। পূজার সময় যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
কিশোর গ্যাং গভীর রাত পর্যন্ত চায়ের দোকানে ক্যারাম বোর্ড খেলে সংগঠিত হচ্ছে। চাঁদাবাজি হচ্ছে এটা অস্বীকার করা যাবে না। ফুটপাতে নিরব চাঁদাবাজি হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে কারা জড়িত সবাই জানে। এটার ব্যাপারে তৎপর হতে হবে। শব্দ দূষণেরও কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।
সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা বলেন, অবৈধ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দিচ্ছে না। যশোরে সরকারি নির্দেশনা পুরোপুরি মানে এমন কোনো কিøনিক নেই। ৮০ শতাংশ নির্দেশনা মানলেও মানা যায়। এসব ক্লিনিকগুলো বন্ধ করা কঠিন। একই প্যাথলজিস্ট একই সময়ে অনেকগুলো জায়গায় কাজ করে। যখনই আমরা অভিযান করে ক্লিনিক বন্ধ করি আমাদের কাছে ফোন আসে। মিটিংয়ে বক্তব্য দেওয়া একটা জিনিস আর প্রাক্টিকাল করা একটা জিনিস।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতাল মোড়ের দোকানগুলো ফুটপাত দখল করে রাখছে। হাসপাতাল চত্বরে অ্যাম্বুলেন্স এর চাপ। ব্যবস্থা নিতে গেলে তত্ত্বাবধায়কের চেয়ারই থাকবে না। আমরা কেন এভাবে মানুষকে ব্যবসা করার সুযোগ দিচ্ছি।
সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও পৌর প্রশাসক রফিকুল হাসান বলেন, আপনারা মিটিংয়ে যানজট নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন। আবার গাড়ি ধরলে আপনারাই কল করেন। আগামি ১০ দিন মাইকিং চলবে। ১১ দিনের মাথায় বাড়তি একটা গাড়িও পৌর এলাকায় ডুকবে না। কোনো শর্ত দিলে যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যা হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার, শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাজিব হাসান, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান, জেলা জামায়াতের আমীর গোলাম রসুল, প্রেসক্লাব যশোরের সাবেক সহ-সভাপতি নূর ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মাসিক আইন শৃঙ্খলারক্ষা মিটিংয়ে অপরাধ চিত্রে দেখা গেছে, আগস্ট মাসে জেলায় খুন, ধর্ষণ, সিঁধেল চুরি, অন্যান্য চুরি, মামলা বেড়েছে। কমেছে দস্যুতা, গাড়ি চুরির মত ঘটনা। জুলাই মাসে ৬ খুন, ৭ ধর্ষণ ঘটনা ছিলো। আগস্ট মাসে খুন হয়েছে ৭, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১১টি।

 
									 
					