নিজস্ব প্রতিবেদক
নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় যশোর শহরের ১২টি বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এসব ভবনের কোনটিই নির্মাণ শ্রমিক, প্রতিবেশী ও পথচারীদের নিরাপত্তায় সুরক্ষা ব্যবস্থার ধার ধারেনি। নাগরিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে এসব ভবন নির্মাণ বন্ধ করে দিয়েছে পৌরসভা। পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম আবু নওশাদের নেতৃত্বে মঙ্গলবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে ওই সব ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে যশোর পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কেএম আবু নওশাদ জানান, শহরের রেলরোড, জজকোর্ট মোড়, মিশনপাড়া ডিসি বাংলোর সামনে ১২টি ভবন চিহ্নিত করা হয়। এসব ভবন মালিকরা বহুতল পাকা ভবন নির্মাণ ও ভবন সম্প্রসারণ করার সময় কোন ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়নি। এতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশংকা রয়েছে। এজন্য স্থানীয় সরকার পৌরসভা আইন ২০০৯ অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, যশোর শহরের সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট অফিসের অদূরে সাত তলা মোরশেদ টাউয়ার নির্মাণ করছেন গোলাম মোরশেদ। কিন্তু পথচারীদের নিরাপত্তার জন্য কোন ধরনের সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ ভবনের নিচ দিয়ে ফুটপাত দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে যাতায়াত করছেন পথচারীরা। তাদের মাথার ওপর ইট, বালু, খোয়া পড়ে দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। এ আশংকা থেকে কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে পৌর প্রশাসন।
জানতে চাইলে ভবন মালিক গোলাম মোরশেদ বলেন, আমরা কিছুটা নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েই নির্মাণ কাজ করছিলাম। কিন্ত পৌর প্রশাসন তাতে সন্তোষ্ট নয়। টিনসেট দিয়ে ঘিরে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা নির্দেশ মোতাবেক সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ শুরু করবো।
মোরশেদ টাউয়ারের পাশেই উত্তরা মোটরস’র শো-রুমের উপরে ভবন সম্প্রসারণ করছেন আসাদুজ্জামান। তিনিও অরক্ষিতভাবে নির্মাণ কাজ করছেন। এখানকার নির্মাণ শ্রমিকদের কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দায়িত্বে থাকা শ্রমিক সরদারের হাতে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নোটিশ দিয়ে ভবন মালিককে দেওয়ার জন্য বলা হয়।
আরও পড়ুন:বিএনপি এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎও উৎপাদন করতে পারেনি : এমপি শেখ আফিল উদ্দিন
শুধু গোলাম মোর্শেদ কিংবা আসাদুজ্জামানের ভবন নয়; যশোর শহরের নির্মাণাধীন বেশিরভাগ ভবনের চিত্র এমনই। তবে মঙ্গলবার ১২টি বহুতল ভবন চিহ্নিত করে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এসব ভবনের কোনটিই নির্মাণ শ্রমিক, প্রতিবেশী ও পথচারীদের নিরাপত্তায় সুরক্ষা ব্যবস্থার ধার ধারেনি। নাগরিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে এসব ভবন নির্মাণ বন্ধ করে নোটিশ দিয়েছে পৌরসভা।
শহরের রেল রোডে সেভেন হেভেন নামে একটি বহুতল ভবন নির্মাণেও একই চিত্র পেয়েছে পৌরসভা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পর এ প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ কার্যক্রম চালানোর জন্য বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে এ প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী আতিকুর রহমান বলেন, ভবনের একাংশে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা রয়েছে। সবপাশে যাতে সুরক্ষা ব্যবস্থা নেয়া হয় সেজন্য নির্দেশ দিয়েছে। আমরা সেটা অনুসরণ করবো।
অন্যদিকে, জজকোর্টের পাশে অনুমোদন ছাড়াই ভবন নির্মাণ (ম্যাক্স কোচিং সেন্টার যেখানে) করায় মালিককে কাজ বন্ধ রেখে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পৌরসভায় ডেকে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া শহরের ডিসি বাংলোর পাশে মিশনপাড়া রোডে জহুরুল ইসলামসহ তিনজন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়নি। তাদের কাজও বন্ধ করে দেয়া হয়।
যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) শিকদার মোকলেচুর রহমান জানান, ভবন নির্মাণের সময় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় উপর থেকে ইট, রড, খোয়াসহ নির্মাণ সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে। এ কারণে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম আবু নওশাদের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ভবন মালিকরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে পৌরসভায় লিখিত দিলে ফের কাজ শুরুর অনুমতি পাবে।
প্রসঙ্গত, শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে যশোরের চৌগাছায় শ্রেয়া বালা নামে সাত বছরের শিশু ডাক্তার জিল্লুর রহমানের নির্মাণাধীন ভবনের নিচ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় ভবনের উপর থেকে শ্রেয়ার মাথায় ইট পড়ে সে ওই দিন দুপুরের দিকে মারা যায়। এ বিষয়টি মাথায় রেখে যশোর পৌরসভা অভিযান চালিয়েছে।
অভিযানে আরো উপস্থিত ছিলেন যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি) বিএম কামাল আহমদ, শহর পরিকল্পনাবিদ সুলতানা সাজিয়া, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) জুবা-উর রহমান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) সাইফুজ্জামান, সার্ভেয়ার হাফিজ খোকন কামাল, নকশাকার সুমন আহমেদ প্রমুখ।
আরও পড়ুন:যশোর পৌরসভার ৭ নম্বার ওয়ার্ডে নাগরিক সুবিধা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ
