নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরে অপহরণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগে ৭জনকে আটক করেছে পুলিশ। গত বুধবার রাতে সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের জিরাট গ্রামের একটি বাড়ি থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। এ সময় অপহৃত পিতা পুত্রকে উদ্ধার করা হয়।
আটকরা হলো, সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর পোস্টঅফিসপাড়ার সুমন ইসলাম রায়হান (২৮), জিরাট গ্রামের মোজাহিদুল ইসলাম পলাশ (২৬), আমির হোসেন (৩২), আব্দুল গফ্ফার (৩১), মামুন বিল্লাহ (৩১), শিল্পী বেগম (৪০) ও শহরের ঘোপ ডিআইজি রোডের লিপি খাতুন (৩৮)।
নরেন্দ্রপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই সুপ্রভাত মন্ডল জানান, ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার চর শেখর গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক সরদার তার পূর্ব পরিচিত আসামি শিল্পী বেগমের কাছ থেকে বছরে ১৪ মণ ধান দেয়ার শর্তে ৩০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন। একটি সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে তিনি টাকা ধার নেন। ২ বছর তিনি শর্ত অনুযায়ী মোট ২৮ মণ ধান দিয়েছেন শিল্পী বেগমকে। কিন্তু করোনার কারণে তিনি এক বছর তাকে ধান দিতে পারেনি। ধান না দেয়ার কারণে ওই সাদা স্ট্যাম্পে ৪ লাখ টাকা পাবেন এমন কথা লিখে জহুরুল হক সরদারের বিরুদ্ধে যশোরের আদালতে মামলা করেন শিল্পী বেগম। গত বুধবার জহুরুল হক সরদার তার ছেলে ইমরান হোসেনকে নিয়ে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে যশোরে আসেন আদালতে মামলার হাজিরা দিতে। হাজিরা শেষে দুপুর ১টার দিকে জজকোর্টের সামনে তারা তাদের ভাড়া করা মাইক্রোবাসে ওঠেন। এ সময় শিল্পী বেগম পক্ষীয় শহরের সিটি কলেজপাড়ার মশিয়ার খানের ছেলে নাইচ খান সদর উপজেলার জিরাট গ্রামের নুর আলীর ছেলে সোহেল রানা ওরফে গুটি সোহেল জোরপূর্বক তাদের মাইক্রোবাসে ওঠেন এবং তাদের গলায় চাকু ঠেকিয়ে চেঁচামেচি করতে নিষেধ করেন। এরপর তারা তাদের কথামতো মাইক্রোবাস চালনোর জন্য চালককে হুমকি দেন। কিছুদূর যাওয়ার পর তারা গাড়ি থামিয়ে তাদের সহযোগী নরেন্দ্রপুর পোস্ট অফিসপাড়ার সুমন ইসলাম রায়হান, জিরাট গ্রামের ইউসুফ আলী ও মিলন হোসেনসহ ৪ জনকে মাইক্রোবাসে তুলে নেন। পরে জিরাট গ্রামে আসামি শিল্পী বেগমের বাড়িতে নিয়ে গেয়ে সেখানে জহুরুল হক সরদার ও তার ছেলে ইমরান হোসেনকে আটকে রাখেন আসামিরা। একই সাথে অপহরণকারীরা চালককে মারধর করে গাড়ি নিয়ে ফরিদপুরে চলে যেতে বাধ্য করেন।
তিনি বলেন, আটকে রাখার পর শিল্পী বেগমসহ তার সহযোগীরা জহুরুল হক সরদারের কাছ থেকে ১২শ’ টাকা ও তার ছেলে ইমরান হোসেনের কাছে থাকা ৪৮ হাজার টাকা কেড়ে নেন। এরপর তারা পিতাপুত্রের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাদের নম্বর দিয়ে জহুরুল হক সরদারের আরেক ছেলে মিসকাতের কাছে ফোন করে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। নতুবা পিতাপুত্রকে হত্যা করা হবে বলে তারা হুমকি দেন। ফলে ভয়ে মিসকাত তাদেরকে ২ দফায় বিকাশের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা প্রদান করেন। পরে পিতা ও ভাইয়ের কথা ভেবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন মিসকাত এবং তিনি সাহায্য পাওয়ার জন্য জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরের মাধ্যমে যশোর কোতয়ালি থানার পুলিশকে ঘটনাটি জানান। মিসকাতের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে অপহরণকারীদের অবস্থান শনাক্তের পর ওই দিন রাত ১১টার দিকে জিরাট গ্রামের শিল্পী বেগমের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় সেখান থেকে অপহৃত পিতাপুত্রকে উদ্ধার এবং ঘটনার সাথে জড়িত সুমন ইসলাম রায়হান, মোজাহিদুল ইসলাম পলাশ, আমির হোসেন, আব্দুল গফ্ফার, মামুন বিল্লাহ ও শিল্পী বেগমকে আটক করা হয়। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘটনার সাথে জড়িত আরো ৫ জন পালিয়ে যান। এ ঘটনায় রাতেই জহুরুল হক সরদার ১১ জনকে আসামি করে কোতয়ালি থানায় একটি মামলা করেন।
এসআই সুপ্রভাত মন্ডল আরো বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে যশোর শহর থেকে মামলার এজাহারভুক্ত আরেক আসামি লিপি বেগমকে আটক করেন। পরে আটক ৭ জনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এর মধ্যে সুমন ইসলাম রায়হান আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক পলাশ কুমার দালাল তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন।