কার্ডধারীদের অভিযোগ মানতে নারাজ কর্মকর্তারা
রোগমুক্তির পরিবর্তে রোগ সৃষ্টির আশংকা ব্যক্ত
তবিবর রহমান: স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও ভিজিডির মাধ্যমে যশোরে ৩০ হাজার দরিদ্রকে পুষ্টি চাল দিচ্ছে সরকার। সাধারণ চালের সঙ্গে মেশিনে মেশানো ৬টি পুষ্টি সমৃদ্ধ চাল পৌঁছে যাচ্ছে দরিদ্রদের ঘরে। কিন্তু সেই চালের ভাত রান্নার পরে বের হচ্ছে দুর্গন্ধ। অনেকে সেটা না খেয়ে গরু-ছাগলের পেটে দিচ্ছেন।
যশোর খাদ্য অফিস সূত্র মতে, জেলার চৌগাছা, বাঘারপাড়া, অভয়নগর ও সদর উপজেলায় পুষ্টিচাল বিতরণ কার্যক্রম চলছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় বাঘারপাড়ায় ৯ হাজার ১৬৬ কার্ডে বিতরণ করা হয় ২৭৪ দশমিক ৯৮০ মেট্রিকটন, সদরে ১ হাজার ৭৭০ কার্ডের মাধ্যমে ৫৩ দশমিক ১০০ মেট্রিক টন ও চৌগাছায় ২ হাজার ৮২৬ কার্ডে ৮৪ দশমিক ৭৮০ মেট্রিক টন, আর অভয়নগরে ১৬ হাজার ৪৮৪ কার্ডে ৪৯৪ দশমিক ৫২০ মেট্রিক টন চাল বিতরণের চুক্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে ভিজিডি ও খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির পুষ্টি চাল বিতরণ করা হচ্ছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মোট ৩০ হাজার ৪৮ জন কার্ডধারী ১০ টাকা কেজি দামে ৩০ কেজি চাল সংগ্রহ করেন। কিন্তু এসব চাল নি¤œমানের বলে বিভিন্ন সময় কার্ডধারীরা অভিযোগ করে আসছেন। তাদের দাবি চাল দেখতে যেমন ধবধবে না, তেমনি ভাত রান্নার পরে দুর্গন্ধ বের হয়। অথচ এর নাম পুষ্টি চাল।
এমন অভিযোগ করেছেন বাঘারপাড়ার দৌলতপুর গ্রামের সবুজ হোসেন। গতকাল দুপুরে তিনি দৈনিক কল্যাণকে বলেন, আমার মা হেলেনা খাতুনের নামে একটি কার্ড রয়েছে। তিনি যে পুষ্টি চাল পান সেটা মেটেও ভালো না। ভাত রান্না করলে এক ধরনের গন্ধ বের হয়। চালের দাম বেশি হওয়ায় উপায় না পেয়ে খেতে হয়। অনেক সময় গরু ছাগলকে দিতে হয়।
মালঞ্চি গ্রামের নাহারও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, পুষ্টি চাল দেখতে যেমন ভালো না, খেতেও মজা লাগে না। গরিব মানুষ, তাই ভালো চাল কেনার সামর্থ নেই। এজন্য ১০ টাকার চালের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি।
দৌলতপুর গ্রামের তৌহিদুর রহমান, রেজাউল, নুর আলী, মুস্তাক, রিপনসহ অনেকের অভিযোগ, মাঝে মধ্যে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির চাল ভাল এলেও কখনো কখনো নি¤œমানের চাল আসে। নির্ধারিত এ চাল পাল্টানোর কোন সুযোগ নেই। তাই বাধ্য হয়ে তারা চাল নিয়ে রান্না করেন। কেউ বিক্রি করে দেন। আবার কেউ ভাত রান্না করে খাওয়ার চেষ্টা করেন। কেউ রান্না ভাত কিছু ফেলেও দেন। তারা খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি ও ভিজিডির চালের মান ভালো করার দাবি করেন।
তাদের ভাষ্য, সাধারণ চাল যদি ভালো হয় তাহলে পুষ্টি মেশানো হলে অবশ্যই সেটা মানসম্পন্ন ও দুর্গন্ধমুক্ত হবে।
যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুন্ডু বলেন, সাধারণ চালের সঙ্গে ভিটামিন-এ, বি১, বি১২, বি৯, আয়রন ও জিঙ্ক উপাদান সমৃদ্ধ করে দানাদার চাল বা কার্নেল উৎপাদন মেশানো হয়। পরে ১০০:১ অনুপাতে ১০০ কেজি সাধারণ চালের সঙ্গে ১ কেজি কার্নেল মিশিয়ে পুষ্টিসমৃদ্ধ চাল প্রস্তুত করা হয়। সাধারণ চালের তুলনায় পুষ্টি চালে বেশি মাত্রায় থায়ামিন, নিয়াসিন, জিঙ্ক, আয়রন, ফাইবার ও প্রোটিন থাকায় মানুষ ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, কিডনি ও দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, সাধারণ চালের মধ্যে কার্নেল মেশানোর কারণে দেখতে পুষ্টি চাল চকচকে না ঠিকই। তবে পুষ্টিমান রয়েছে। কার্ডধারীদের অভিযোগ তিনি খতিয়ে দেখবেন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং খাদ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে পুষ্টি চালের মান নিয়ন্ত্রণ ও বিতরণে কাজ করছে। যশোরে যে পুষ্টি চাল বিতরণ করা হয় সেটা যশোরের বারীনগর এসকে অটো রাইস মিল ও পুড়োপাড়ার সাদিয়া রাইস মিলে মেশানো হয়। প্রায়ই ওই রাইস মিলে তদারকির জন্য যান মহিলা অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক আনিছুর রহমান।
তিনি বলেন, রাইস মিলে দানাদার চাল বা কর্নেল মেশানোর পর বস্তায় ভরা হয়। তারা লাটমারা বস্তা থেকে একটি খুলে এক কেজি চাল নেন। এরপর সেখান থেকে অর্ধেক নিয়ে চার ভাগ করেন। এভাবে আরো ভাগ করে ১০০টি সাধারণ চালের সাথে একটা আছে কিনা যাচাই করেন। চাল খারাপ হওয়ার সুযোগ কম। এরপরও কোন অভিযোগ পেলে তিনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চৌগাছার পুড়াপাড়া সাদিয়া রাইস মিলের সত্ত্বাধিকারী আব্দুল আলিম বলেন, কার্নেল সরকার থেকে তাদের দেয়া হয়। সাধারণ চালের সাথে মিশায়ে তারা পুষ্টি চাল উৎপাদন করেন। পরে সেই চাল তারা ইউনিয়ন পরিষদে পৌঁছে দেন। সেখান থেকে বিতরণ করা হয়। তাই নি¤œমানের চাল এটা ঠিক না।