নিজস্ব প্রতিবেদক
‘প্রাকৃতিক জলাধার ও কৃষিজমি সুরক্ষার দাবিতে’ যশোরের জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে জনউদ্যোগ যশোর। বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর জেলা প্রশাসক বরাবর এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। জেলা প্রশাসকের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজিবুল আলম। একই দাবিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ও যশোর সদর উপজেলা সরকারী কমিশনারকে (ভূমি) স্মারকলিপির অনুলিপি প্রদান হয়।
স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন জনউদ্যোগের আহবায়ক প্রকৌশলী নাজির আহমদ, প্রবীণ সাংবাদিক রুকুনউদ্দৌলাহ, বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা ও জনউদ্যোগ সদস্য মাহবুবুর রহমান মজনু, মহিলা পরিষদের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. কামরুন নাহার কণা, আইইডি যশোর কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক বীথিকা সরকার, জনউদ্যোগের সদস্য সচিব কিশোর কুমার কাজল।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যশোরে পরিবেশ ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন উপেক্ষা করে একের পর এক পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। বিলের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে আবাসন প্রকল্প করা হচ্ছে। গত কয়েক দশকে শুধুমাত্র যশোর শহর ও শহরতলীতে ভরাট হয়ে গেছে একশ’র বেশি পুকুর। আর যশোর পৌরসভার মধ্যে একডজন পুকুরের উপর শোভা পাচ্ছে অনেক বহুতল ভবন।
বিভিন্ন সংস্থার তথ্যানুযায়ী, পৌরসভা এলাকায় পৌরসভার নামীয়, জেলা প্রশাসকের নামীয় ও বেসরকারি মিলে ৩২০টি জলাশয় রয়েছে। এর মধ্যে পৌরসভার ৬টি, জেলা প্রশাসকের ৪০টি এবং বেসরকারি ২৭৪টি পুকুর রয়েছে। ১০/১২ বছর আগে পুকুরের সংখ্যা আরো বেশি ছিল।
যশোর পৌরসভা এলাকায় শহরের ঐতিহ্যবাহী প্রায় সব পুকুর তার অস্তিত্ব হারিয়েছে। বিগত এক থেকে দেড়যুগে অসংখ্য পুকুর ভরাট হয়ে গেছে।
শুধু জলাধার নয়, যশোরের হরিণার বিলসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষিজমি ভরাট করে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে একের পর কৃষি জমি গ্রাস করা হলেও এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই। হরিণার বিল মূলত ধান আবাদী এলাকা। এটি যশোরের শষ্য ভান্ডার। এই বিলের আয়তন ৫০৭ হেক্টর। আবাদি জমিপ্রায় ৪৮৫ হেক্টর। সদরের চাঁচড়া ও রামনগর ইউনিয়ন জুড়ে বিলটির অবস্থান। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়Ñবর্ষা মৌসুমে বিল জুড়ে থৈ থৈ করে পানি। এ সময় বিলে দেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় প্রচুর ও ধানের আবাদও হয়। ধান ছাড়াও বিলের জমিতে বিভিন্ন ধরণের তরকারি ও ফলের আবাদ হয়। বিলে যখন পানি থাকে স্থানীয় মানুষজন মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এসব ছাড়াও যশোর শহরের বেশিরভাগ এলাকার পানি নিষ্কাশন হয় এই বিলটিতে।
হরিণার বিলের ভাতুড়িয়া সড়ক, মাহিদিয়া সড়কের বিভিন্ন এলাকায় ভরাট করে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। বিদ্যমান আইনের তোয়াক্কা না করে প্রতিষ্ঠানটি প্রকাশ্যে বিল উজাড় করছে। বিলভরাট, কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ ভরাটের কাজে মাটি বহনের সময় সড়ক বিনষ্ট করলেও কোনো ধরণের ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রকৃতির বিনাশ ছাড়াও প্রতিটি পদে পদে আইন ভাঙছে প্রতিষ্ঠানটি।
আইন ভেঙে বিল ভরাট করে অনেকে আবসন প্রকল্প গড়ে তোলায় বিলটি দিয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। আবসন গড়ে তোলায় বিলের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে বছরের বেশির ভাগ সময় বিলটি জলাবদ্ধ থাকছে। এতে যশোর শহরের পানি নিষ্কাসন বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পৌর এলাকা বর্ষাকালে তলিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হারিয়ে যাবে শস্যভান্ডার ও মাছে প্রাচুর্যপূর্ণ হরিণার বিল। আর এমনটি হলে প্রকৃতির বিনাশ ছাড়াও পানি নিষ্কাসন বন্ধ হয়ে যশোর শহরসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে।
জনউদ্যোগ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে দাবি জানাচ্ছে আত্মঘাতী ও পরিবেশ বিনাশী পুকুর ভরাট ও আবাসন প্রকল্পের কাজ বন্ধ করা হোক। এটি বন্ধে এখনই দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে যশোরবাসীকে অন্তহীন দুর্ভোগে পড়তে হবে। উল্লেখ্য, এর আগে প্রাকৃতিক জলাধার ও কৃষিজমি সুরক্ষার দাবিতে জনউদ্যোগ সংবাদ সম্মেলনেরও আয়োজন করে।