নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে জনসমাবেশ করেছে জেলা বিএনপি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহরের লালদীঘিস্থ বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শুরুর আগে জেলা বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেন, ‘জনসভায় আসার পথে নেতাকর্মীদের পুলিশের বাঁধা, বিনা উস্কানিতে লাঠিচার্জ ও ৭ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। পরে পুলিশের বাধা উপক্ষা করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন তারা। এক পর্যায়ে দলীয় চত্বর ছাড়াও পুরো লালদীঘি চত্বর নেতাকর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
বিকালে জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি বলেন, আমরা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছি। এই সময়ে পিছিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আসার যে শপথ নিয়েছি সেই শপথ থেকে পিছিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও আমরা দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো। পুলিশ দিয়ে এই সরকার নেতাকর্মীদের হামলা করালেও আমরা পিছুপা হবো না। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে এই অবৈধ সরকারকে হটানো হবে। অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বিনা কারণে দলীয় নেতাকর্মীদের আটক প্রসঙ্গে প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলেন, অহেতুক নেতাকর্মীদের আটক করবেন না। আমাদের সকলকে কারগারের রাখার মত সাধ্য আপনাদের নেই। দয়া করে আপনারা অনার্থক জনগণের মুখোমুখি হবেন না। আপনাদের সাথে কোন বিরোধ নেই। আমদের যুদ্ধ ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে, অপরাজনীতি, দুর্নীতি, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে। তাই অহেতুক কোন উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে দলীয় নেতাকর্মীররা ধৈর্য্য ধারণ করলেও সাধারণ জনগণ কিন্তু ধৈর্য্য ধরবে না। এর দায়ভার আপনাদের বহন করতে হবে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সাম্প্রতিক সময়ে সাবেক মন্ত্রী ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত তরিকুল ইসলামের বাড়িতে হামলার উদাহরণ এনে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী দ্বারা আমার বাড়িতে হামলা হয়েছে। তবে নিশ্চিত করেই বলছি আমার একটা কর্মীও আমার বাড়ির প্রতিবেশি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, পৌর মেয়রের বাড়িতে হামলা করবে না। ইটের বদলে পাটকেল ছুড়েনি। তাই মনে করেন না আমরা দুর্বল। আজ জনসভায় আসার পথে বেশকয়েকজন আটক করা হয়েছে। সন্ধ্যার আগে না ছাড়লে জেলার রাজনীতিতে উত্তপ্ত হলে এর দায় পুলিশকেই নিতে হবে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড দিলেন। মিছিলে লাঠিচার্জ করেছেন। যতই ক্ষমতার অপব্যবহার করেন; ক্ষমতায় অপব্যবহারের জবাব দিতেই হবে। গেল দেড় দশক ধরে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে তথাকথিত জনগণের বন্ধু পুলিশের নির্বিচার গুলিতে দলের অসংখ্য নেতকর্মীকে নির্মম জীবন দিতে হয়েছে। সেই সাথে শাসকদলের সন্ত্রাসীরা দলের অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে।
জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনের সভাপতিত্বে জনসমাবেশে বক্তব্য রাখেন, দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সালাম আজাদ, মারুফুল ইসলাম, নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁদ, সদর উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন, ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোত্তর্জা এলাহী টিপু, মণিরামপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. শহীদ ইকবাল হোসেন, কেশবপুর পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুস সামাদ বিশ্বাস, চৌগাছা পৌর বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা আওলিয়ার, বেনাপোল পৌর বিএনপির সভাপতি নাজিম উদ্দিন, বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাই মনা, নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি আবু নঈম, জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসি বেগম, জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক রানা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রবিউল ইসলাম, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুুর রহমান সাগর প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির সদস্য হাজী আনিছুর রহমান মুকুল। জনসমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সদস্য অ্যাড. ইসহক, গোলাম রেজা দুলু, মো. মুছা, একে শরফুদ্দৌলা ছোটলু, মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চুসহ জেলা বিএনপির অধীনস্থ সকল ইউনিট ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
জেলা বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, পুলিশ লাঠি অস্ত্র নিয়ে পুরো কার্যালয় লালদীঘি এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়। সভায় নেতাকর্মীদের মিছিল নিয়ে আসলে বাধা দেয়। পরে মিছিলবাদে নেতাকর্মীদের এক এক করে ঢুকতে দেয় পুলিশ। এমনকি বিনা উস্কানিতে লাঠিচার্জও করেছে পুলিশ। তাছাড়া ৭ নেতাকর্মীকে আটক করেছে। অভিযোগের বিষয়ে জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেন, কোন বাধা দেওয়া হয়নি। এমনকি কাউকে আটকও করা হয়নি।