নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের আগে যশোরে ধর-পাকড় শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার মধ্যে রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বিএনপি ও দলটির অঙ্গ-সংগঠনের ৪৪ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই সাথে তিন যুবদল নেতার বাড়িতে পুলিশের বিরুদ্ধে ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশ বলছে, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ছিল। অভয়নগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফারাজি মতিয়ার রহমানের বাড়িতে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।
এদিকে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, ঢাকার সমাবেশে নেতাকর্মীদের যোগ দেয়া ঠেকাতেই পুলিশ নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, গ্রেফতারসহ হয়রানি করছে।
যশোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, রাজধানীতে মহাসমাবেশে না যেতে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করার জন্য এ গ্রেপ্তার চালানো হচ্ছে। আগামীকাল ২৮ অক্টোবর ঢাকায় দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে যশোর জেলা থেকে ১০ হাজার নেতাকর্মী প্রস্তুত রয়েছে। ইতিমধ্যে বেশিরভাগ নেতাকর্মী ঢাকায় চলে গেছেন। যত বাধা আসুক না কেন তারা কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের আগে যশোরে ধর-পাকড় শুরু হয়েছে। বুধবার মধ্যে রাত থেকে যশোর সদর ও বাঘারপাড়া উপজেলাতে এই ধরপাকড় শুরু হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি করছে। বুধবার রাত ও বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত এই দুই উপজেলায় ৪৪ নেতাকর্মীদের আটক করেছে পুলিশ। এসব নেতাদের আটক করে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আটকৃতরা হলেন, যশোর সদরের চাঁচড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল ওহাব, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক নিজামুদ্দিন মোল্লা, লেবুতলা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি নুরুল ইসলাম, ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলাল শেখ, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আবুল বিশ্বাস, যশোর নগর বিএনপি নেতা কাজী ইসরাফিল, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়া ধর-পাকড়ের নামে নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মাসুমসহ অন্তত ২৫ জনের বাসায় পুলিশের তল্লাশির অভিযোগ করেছেন নেতাকর্মীরা। একই সাথে জেলা যুবদলের তিন নেতার বাড়িতে পুলিশের বিরুদ্ধে ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে। বাড়িঘর ভাংচুর হওয়া নেতারা হলেন, জেলা যুবদলের সহ সাধারণ সম্পাদক রাজন হাওলাদার মানিক, ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সাগর, ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সহ সাধারণ জাহিদ ইসলাম শামীম।
জেলা যুবদলের সহ সাধারণ সম্পাদক রাজন হাওলাদার মানিক অভিযোগ করে বলেন, বুধবার রাত দেড়টার দিকে সাদা পোশাকে কয়েকজন পুলিশ আমাকে ধরার জন্য আসে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আমি পালিয়ে যায়। আমাকে না পেয়ে আমার বাড়ির প্রধান ফটক ভাংচুর করে চলে যায়। তিনি বলেন, পুলিশ আমার নামে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়েছিলো। সম্প্রতি মামলা থেকে জামিনে রয়েছি। তার পরেও ধরার জন্য এসেছিল।
অভয়নগর বিএনপির আহ্বায়ক ফারাজি মতিয়ার রহমানের বাড়িতে বুধবার রাতে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। অভয়নগর থানার ওসি মেহেদী মাসুদ জানান, শুনেছি পটকাবাজি ফুটেছে। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘অনেক নেতাকর্মীর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা নেই, অনেকেই জামিনে রয়েছেন। তারপরও তাদের গণগ্রেফতার করা হচ্ছে। ঢাকায় আমাদের মহাসমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতে এই গ্রেফতার অভিযান চলছে। কিন্তু কোনোমতেই এই মহাসমাবেশ আটকানো সম্ভব নয়, মানুষ স্রোতের মতো মহাসমাবেশে যাচ্ছে, যাবে।
এই বিষয়ে যশোর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের এ অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। ২৮ অক্টোবরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো গ্রেপ্তার চালানো হচ্ছে না। যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা রয়েছে তাদেরকেই মাত্র আটক করা হচ্ছে। কাউকে হয়রানি করতে গ্রেফতার করা হয়নি।’